ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নৌপথে কাঁচা লবণ পরিবহন বন্ধ ঘোষণা প্রভাব পড়তে পারে লবণের বাজারে

পটিয়ায় লবণ শিল্প মালিকরা দিশেহারা

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২২ নভেম্বর ২০১৬

পটিয়ায় লবণ শিল্প মালিকরা দিশেহারা

বিকাশ চৌধুরী, পটিয়া ॥ কর্ণফুলী নদীর শাখা বোয়ালখালী খালে নৌ-চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় চট্টগ্রামের পটিয়ার লবণ শিল্প মালিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পটিয়া-বোয়ালখালী সীমান্তের মিলিটারিপুলের নির্মাণ কাজের ইস্যুতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) নৌ-চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করেছে। যার কারণে পটিয়া লবণ শিল্প নগরীর ৩৯টি লবণ মিলে উৎপাদন বন্ধ হতে চলেছে। এসব মিলের প্রায় পাঁচ হাজার পুরুষ ও নারী শ্রমিক বেকার হতে চলেছে। এখানকার উৎপাদিত ৪০% লবণ দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে। যুগ যুগ ধরে কক্সবাজার, টেকনাফ, মগনামা, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও বাঁশখালী থেকে কাঁচা লবণ ইঞ্জিন চালিত বোটের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদী হয়ে এতদিন পটিয়া লবণ শিল্প নগরীতে পৌঁছেছে। যা পরবর্তীতে প্রক্রিয়া ও আয়োডিনযুক্ত করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা হচ্ছে। লবণের চলতি ভরা মৌসুমে ৪ লাখ মেট্রিক টন কাঁচা লবণ পটিয়া লবণ শিল্প নগরীতে প্রয়োজন বলে শিল্প মালিকরা দাবি করেন। কিন্তু হঠাৎ করে নৌ-চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় এখানকার শিল্প মালিকরা চরমভাবে বিপাকে পড়েছেন। অপরদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহাসড়ক হয়ে ট্রাক যোগাযোগে কাঁচা লবণ পরিবহনের কারণে কার্পেটিং রাস্তা নষ্ট হওয়ার কারণে সওজ কর্তৃপক্ষ সড়ক পথেও কাঁচা লবণ পরিবহন বন্ধের নির্দেশ দেয়। তাছাড়া সড়ক পথে পরিবহন খরচ বাড়তি হওয়ায় দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে নৌপথে কাঁচা লবণ পটিয়া শিল্প নগরীর কারখানাগুলোতে আনা হতো। সওজ ও লবণ মিল মালিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৫ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহাসড়কের পটিয়া ইন্দ্রপুল এলাকায় লবণ শিল্পনগরী গড়ে ওঠে। অর্ধশতাধিক লবণ মিলের মধ্যে বর্তমানে ৩৯টি লবণ মিল চালু রয়েছে। শিল্প মালিকরা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। শিল্প মালিকদের অনেকে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কাঁচা লবণ প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করছে। লবণের ভরা এই মৌসুমে কাঁচা লবণবাহী নৌ-চলাচল বন্ধ করা হলে দেশে লবণের বাজারে দারুণভাবে প্রভাব পড়বে। লবণ শিল্প মালিকদের অভিযোগ, ইতোপূর্বে কর্ণফুলী নদীর শাখা খালে চন্দ্রকলা ব্রিজ ও প্রসন্ন মহাজনের ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় ইঞ্জিনচালিত লবণের বোট চলাচল করতে কোন ধরনের বাধা দেয়া হয়নি। পটিয়া-বোয়ালখালী সীমান্তের মিলিটারীপুল নির্মাণের ইস্যুতে দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তোফায়েল মিয়া এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত কাঁচা লবণ পরিবহনের ইঞ্জিনচালিত বোট নৌপথে বন্ধ ঘোষণা করেন। পটিয়া ইন্দ্রপুল লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, লবণ শিল্পকে ধ্বংস করতে পরিকল্পিতভাবে নৌপথে লবণের কাঁচামালবাহী ইঞ্জিনচালিত বোট চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছেন। এর আগে লবণাক্ত পানির কারণে সড়কের কার্পেটিং নষ্ট হওয়ার কথা বলে সড়ক পথে কাঁচামাল পরিবহন করে দেয়। তাছাড়া সড়ক পথে কাঁচামাল আনতে গেলে পরিবহন খরচ অনেকটা বেশি। নৌ ও সড়ক পথে যদি লবণের কাঁচামাল পরিবহন বন্ধ করে দেয় তাহলে দেশে লবণের বাজারে প্রভাব পড়বে। এই ব্যাপারে শিল্প মালিকরা সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
×