ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চবির সুবর্ণজয়ন্তী উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

নবীন-প্রবীণের বাঁধভাঙ্গা স্রোত, চট্টগ্রাম যেন উৎসবের নগরী

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২০ নভেম্বর ২০১৬

নবীন-প্রবীণের বাঁধভাঙ্গা স্রোত, চট্টগ্রাম যেন উৎসবের নগরী

রহমান শোয়েব, চবি ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের সমাপনী দিন শনিবার ক্যাম্পাস ছিল আনন্দমুখর। শোভাযাত্রায় শুক্রবার উৎসবের সূচনা হয়েছিল নগরীতে। আর পরদিন যেন বিশাল এক ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে সবুজঘেরা ক্যাম্পাসে। এমন দিন ইতিহাসে আর আসেনি। একসঙ্গে এত শিক্ষার্থীকে এর আগে ধারণ করেনি চবি। এ যেন মায়ের কোলপানে সন্তানদের বাঁধভাঙ্গা স্রোত। সঙ্গত কারণেই ক্যাম্পাস ছিল বর্ণিল সাজে। শিক্ষার্থীরাও প্রিয় বিদ্যাপীঠকে এমন অপরূপ চেহারায় আগে দেখেনি। ভিডিও কনফারেন্সে উৎসব উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯ নবেম্বর বিশেষ দিন। সকাল থেকেই তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ও হাটহাজারী অভিমুখী যাত্রীবাহী যানগুলো ছিল বেশ ঠাসা। শাটল ট্রেনেও ছিল উপচেপড়া অবস্থা। কারণ, এমন উপলক্ষ তো বার বার আসে না। আহা! কতদিন পর দেখা বন্ধু ও সহপাঠীদের সঙ্গে। এমন আরেকটি আয়োজন দেখে যেতে পারব তো! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন করতে পারতাম যদি বাংলাদেশে ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের মতো একটি কালোদিন আমাদের জীবনে না আসত। ’৭৫ পরবর্তী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলদাররা দেশের কোন উন্নতি করেনি। শুধু নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। বরং আমাদের মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। তাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।’ গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী একটি স্মারক ডাকটিকিটও অবমুক্ত করেন। এ সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, চবি উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীন আখতার, চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. কামরুল হুদা, পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চসিকের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, চিটাগাং চেম্বার সভাপতি ও এফবিসিসিআই সহসভাপতি মাহবুবুল আলম তালুকদার এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘৪টি বিভাগ নিয়ে ১৯৬৬ সালে শুরু হয়েছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা। একটি ভিশনকে সামনে নিয়ে শুরু হয়েছিল এই মহৎ যাত্রা। এই পথচলা যা কালাবর্তে ৫ দশকে এক অনন্য অধ্যায় রচনা করেছে। আর সেই অধ্যায় রচনায় রয়েছেন প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ। তারাই এর কারিগর।’ তিনি বলেন, ‘যে ভিশন নিয়ে এ পথচলা শুরু হয়েছিল সেই ভিশন কতখানি পূরণ হয়েছে, তা কতখানি অর্জিত হয়েছে সে বিশ্লেষণে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় শিক্ষাঙ্গনে আজ এক মহীরুহ। অনুষ্ঠানে সুবর্ণজয়ন্তী বক্তব্য প্রদান করেন প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান। বক্তব্যে তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী বাহিনীর নৃশংসতম আক্রমণ শুরু হলে সীমান্ত এলাকা থেকে পিপিআরের কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে জড়ো হন এবং কয়েকদিন চট্টগ্রাম সেনানিবাস ঘিরে রাখতে সক্ষম হন। পরে অত্যাধুনিক সংখ্যাধিক ও উন্নত অস্ত্রশক্তির কাছে তারা পিছু হটেন।’ তিনি বলেন, ‘মার্চের শুরুর দিকে আমরা আমাদের সহকর্মীদের সপরিবারে চতুর্দিকে পাঠিয়ে দিই। একজন চিকিৎসকের জিম্মায় কয়েকজন আহত সৈনিককে রেখে সবার শেষে উপাচার্যের পরিবার ও রেজিস্ট্রারের সঙ্গে আমিও আবাসিক এলাকা ত্যাগ করি। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে আমাদের ছাত্র ও চাকসুর সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রবসহ কয়েকজন ছাত্র শাহাদাতবরণ করেন। তাদের গর্বের সঙ্গে স্মরণ করি।’ সভাপতির বক্তব্যে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান করেছি প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায়। তার অনুপ্রেরণা এবং আগ্রহ ছিল বলেই এটি করতে পেরেছি।’ অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। শহীদদের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন তাদের পরিবারের সদস্যগণ। তেমনই একজন শহীদ ফরহাদউদ্দৌলা। তার বড় ভাই এস এম জিয়াউল ইসলাম শহীদ ফরহাদউদ্দৌলার সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন। এদিকে সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে পুরো চবি ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে। রং বেরঙের শাড়ি, টি-শার্ট, গেঞ্জি পরে তরুণরা ঘুরে বেড়ান। প্রবীণরা প্রিয় বিভাগে প্রিয় শিক্ষক ও অনুজদের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন। নিজের শ্রেণীকক্ষটি এক নজর দেখে আবেগাপ্লুত হচ্ছেন। কেউ বা যান হলের সেই কক্ষটিতেও। যেখাতে তিনি কাটিয়েছেন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো। আবার কেউ বা পুরনো বন্ধুদের নিয়ে ঝুপড়িতে মেতে উঠেছেন তুমুল আড্ডায়। সেখান থেকে যেন পুরনো দিনে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা। ঢোল আর বাদ্য বাজিয়ে হইহুল্লোড় করে কাটিয়েছেন পুরোটা দিন। সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তৈরি মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ দেশবরেণ্য শিল্পীবৃন্দ। অনুষ্ঠান চলে রাত পর্যন্ত।
×