ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

এফবিআই কি হিলারিকে ডুবিয়েছে!

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১৬ নভেম্বর ২০১৬

এফবিআই কি হিলারিকে ডুবিয়েছে!

এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল বিশ্ববাসীর। সিংহভাগকে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে। কারণ ট্রাম্প-হিলারির লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হবে এটা ধরে নেয়ার পরও অনেকে নিশ্চিত ছিলেন এবং প্রত্যাশাও করেছিলেন যে হিলারি জয় পাবেন। কিন্তু হয়েছে উল্টোটি। তাদের সেই প্রত্যাশার কারণ বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা গিয়েছিল যে হিলারির জনসমর্থন ট্রাম্পের চেয়ে বেশি। তাছাড়া ট্রাম্পের নানা বিতর্কিত কথাবার্তা, ভূমিকা ও আচরণ থেকে তাদের ধারণা হয়েছিল মার্কিন জনগণ এসব বরদাশত করবে না, তারা হিলারির পক্ষে রায় দেবে। কিন্তু তা হয়নি। কেন? হিলারি হারলেন কেন? তার তো ট্রাম্পের মতো কোন বদনাম ছিল না। এটা ঠিক যে ট্রাম্পের মতো বদনাম হিলারিকে কুড়াতে হয়নি। কিন্তু তাই বলে তিনি সমালোচনার উর্ধে ছিলেন না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তিনি ওবামার স্ট্যাটাসকে বজায় রাখার নীতিতে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করলেও লিবিয়ায় তার কূটনৈতিক বিপর্যয়, আইএস গঠনে সহায়তা, ই-মেইল সার্ভার অপব্যবহারের অভিযোগ মার্কিন জনমতের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল। তার ওপর নির্বাচনের মাত্র ক’দিন আগে হিলারির ই-মেইল নিয়ে এফবিআইয়ের নতুন করে অভিযোগ হিলারি শিবিরে আশঙ্কার ছায়া ফেলে। কারণ এতে করে জনমনে হিলারি সম্পর্কে সন্দেহ নতুন করে উস্কে দেয়া হয়। নির্বাচনের মাত্র দু’দিন আগে যদিও এফবিআই হিলারিকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে বলেছিল যে তারা যা সন্দেহ করেছিল। তা অমূলক, কিন্তু ততদিনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছিল এবং এর পূর্ণ সুফল ট্রাম্প নিজের ঘরে তুলে নিয়েছিলেন। অনেকে মনে করেন এফবিআইয়ের এই ভূমিকা হিলারির পরাজয়ের প্রধান কারণ না হলেও একটা বড় কারণ হিসেবে কাজ করেছে। এফবিআই কেন শেষ মুহূর্তে এমন একটা ভূমিকা নিয়েছিল? এর পেছনে কি কোন অদৃশ্য শক্তি কাজ করেছিলÑ যারা চেয়েছিল হিলারির তরী তীরে এসে ডুবে যাক? এ নিয়ে বিতর্ক বহুদিন চলবে। তবে ডেমোক্র্যাট শিবিরের অনেকে মনে করেন যে নির্বাচনের মাত্র ১২ দিন আগে এফবিআই কর্তৃক হিলারির সার্ভার থেকে ই-মেইলের উল্লেখযোগ্য অংশ আবিষ্কার তার নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনার ওপর মারাত্মক আঘাত হেনেছিল। এ কারণে হিলারির সমর্থকরা তার পরাজয়ের জন্য এফবিআই ডিরেক্টর জিমস কোম্পানিকে সর্বোতভাবে দায়ী করেছেন। তারা বলেছেন হিলারির ই-মেইল নিয়ে কংগ্রেসের কাছে পাঠানো কোমির চিঠিটাই যত অনর্থের মূলে। বোস্টন গ্লোবের কলামিস্ট মাইকেল কোহেনের মতে সামান্য ব্যবধানে হিলারির পরাজয়ের ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করলে নিশ্চিন্তে বলা যায় বিচার বিভাগে তার বেশ কিছু সিনিয়র সহকর্মীর পরামর্শ অগ্রাহ্য করে কোমি চিঠিটা পাঠিয়েছিলেন। জয়লাভের জন্য ট্রাম্পের উচিত কোমিকে ধন্যবাদ জানানো। উল্লেখ্য, নির্বাচনের মাত্র ১০ দিন আগে এফবিআই প্রধান হিলারির সন্দেহজনক ই-মেইল তথ্যের কথা জানান। কংগ্রেসকে এ্যালার্ট করে দিয়ে তিনি বলেন হিলারির নতুন ই-মেইল পাওয়া গেছে যেগুলো তার সম্পর্কে তদন্তের ব্যাপারে প্রাসঙ্গিক হতে পারে যদিও তিনি তখনও পর্যন্ত জানতেন না যে সেগুলো হিলারির অন্যায় বা অসঙ্গত কর্মকা-ের নতুন কোন প্রমাণ কিনা। সভাপতি এ ব্যাপারটা ক্লিনটনের পাবলিক ইমেজে নতুন করে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে এবং এতে ডেমোক্র্যাট শিবিরের প্রতিক্রিয়া হয় ক্ষুব্ধ। জনসমর্থনের দিক দিয়ে এর ফলে ট্রাম্পের সঙ্গে হিলারির ব্যবধান কমে আসায় এমন সম্ভাবনা দেখা দেয় যে এফবিআই প্রধানের উক্তি নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণের ভূমিকা রাখতে পারে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য মার্কিন বিচার বিভাগের একটা দিকনির্দেশনা আছে। তা হলো যেসব কেসে কোনে অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি সেগুলো সম্পর্কে পারত পক্ষে কিছুই না বলা। এফবিআই প্রধান কোমি এটা ভালমতোই জানতেন। তার পরও তিনি ন্যায়-অন্যায়, সঙ্গত-অসঙ্গত ব্যাপারটা না জেনে না শুনে হিলারির নতুন ই-মেইলের কথাটা বলতে গেলেন কেন এবং তাও আবার এমন এক স্পর্শকাতর সময়ে যখন নির্বাচনের ক্ষণ গণনা চলছে? তিনি অবশ্যই জানতেন যে তার মন্তব্য বা উক্তি প্রার্থী বা প্রার্থীদের জনসমর্থনকে তথা নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। তার পরও সেটা কেন করলেন? ইচ্ছাকৃতভাবে নাকি মহল বিশেষের চাপে বা প্রভাবে? হিলারি নিজেও তার পরাজয়ের জন্য এফবিআই প্রধান জেমস কোমিকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন এই নির্বাচনে সফল না হওয়ার অনেক কারণ আছে। তবে কংগ্রেসের কাছে পাঠানো কোমির চিঠি নতুন করে সংশয় সন্দেহ জাগ্রত করেছে যা ছিল ভিত্তিহীন। এর কারণে আমরা আশাব্যঞ্জক ভাব নিয়ে নির্বাচনী প্রচার সমাপ্ত করতে পারিনি। এই চিঠিটা অধিকতর ক্ষতির কারণ ঘটিয়েছে। ভোটাভুটির পর ১০ নবেম্বর হিলারির নির্বাচনী প্রচার স্টাফ এক দলের মধ্যে এক স্মারক বিলি করেন। তাতে বিস্তারিত বলা হয় কেন তারা মনে করেন হিলারির পরাজয়ের পেছনে কোমির একটা ভূমিকা আছে। লড়াই হওয়ার মতো রাজ্যগুলোতে হিলারি বেশ ভালভাবেই এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু কোমির চিঠির কারণে সেগুলোতে ভাটার টান আসে। হারানো অবস্থানটা ফিরে পাওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালাতে হয়। হিলারির ই-মেইল নিয়ে নতুন করে সংশয় সন্দেহ সমর্থক ভোটারদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করে। ভোটকেন্দ্রে তাদের উপস্থিতিও হ্রাস পায়। তা ছাড়া এই ই-মেইলই হয়ে দাঁড়ায় শেষ দশ দিনের অধিক সময়টুকুতে নির্বাচনী প্রচারের কেন্দ্রীয় বিষয়। কোমি শেষ মুহূর্তে হিলারিকে অভিযোগমুক্ত করলেও ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। সূত্র : টাইম ও অন্যান্য
×