ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারপোলের রেড নোটিসে যুক্ত হচ্ছে নিখোঁজ ১৭ জঙ্গী তরুণের নাম

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৬ নভেম্বর ২০১৬

ইন্টারপোলের রেড নোটিসে যুক্ত হচ্ছে নিখোঁজ ১৭ জঙ্গী তরুণের নাম

শংকর কুমার দে ॥ আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোলের রেড নোটিসে যুক্ত হচ্ছে জঙ্গী সন্দেহে নিখোঁজ ১৭ তরুণের নাম। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গী ছাড়াও যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার খুনী, শীর্ষ সন্ত্রাসী, ফাঁসির দ-প্রাপ্তসহ ৬৩ জনের নামে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে ইন্টারপোলে। এসব আসামি ও অপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ইন্টারপোলের সাহায্য চাওয়া হচ্ছে। এক দেশ থেকে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়া অপরাধী শনাক্ত ও গ্রেফতারে সাহায্য করে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোল। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুুলিশ সদর দফতরের ইন্টারপোল ডেস্ক সূত্রে জানা গেছে, আসামিদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিস মানে তারা শীর্ষ অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত। ইন্টারপোলের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বিচার/দ- ঘোষণার জন্য বাংলাদেশের বিচার কর্তৃপক্ষের কাছে ওয়ান্টেড ব্যক্তিরা পলাতক। রেড নোটিসের মাধ্যমে তাদের অবস্থান জানা এবং গ্রেফতারের চেষ্টা করা হয়। আর এর লক্ষ্য থাকে ওই ব্যক্তিরা যে দেশে দোষী সাব্যস্ত হয় সেই দেশে প্রত্যর্পণ করা বা এ ধরনের আইনী ব্যবস্থা নিয়ে আসছে ইন্টারপোল। সারা পৃথিবীতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোলের ১৯০ সদস্য দেশের সংখ্যার মধ্যেবাংলাদেশ অন্যতম সদস্য। ইন্টারপোল ডেস্ক সূত্র জানান, ইন্টারপোল বাংলাদেশ শাখায় এখন পর্যন্ত ৬৩ জনের নামে রেড নোটিস জারি করা আছে। যাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করা আছে তাদের মধ্যে আছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী আহমেদ হারিস, ওমর ফারুক কচি, আলম তাওফিক, কালা জাহাঙ্গীর ওরফে ফেরদৌস, ত্রিমতি সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ লোহানী, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, মিন্টু, আতাউর রহমান, জাফর আহমেদ ওরফে মানিক, খন্দকার তানভিরুল ইসলাম জয়, নাসির উদ্দিন রতন, শামীম আহমেদ ওরফে আগা শামীম, নজরুল দিপু, প্রশান্ত সরদার, আহমেদ মজনু, আব্দুল জব্বার, ইউসুফ, আমিনুর রসুল, চান মিয়া, শাহাদাত হোসাইন, খোরশেদ আলম, মনোতোষ বসাক, সুজিদ সুলতান, মোবারক হোসেন, ইকরাম নাইম খান, আহমদ কবির ওরফে সুরত আলম, জিসান, সালাহউদ্দিন মিন্টু, নবী হোসেন, আতাউর রহমান মাহমুদ চৌধুরী, মুসলেম উদ্দিন খান, মকবুল হোসেন, আমান উল্লাহ শফিক, আহমেদ শরফুল হোসেন, আমিনুর রহমান, পেয়ার আহমেদ আকাশ, আব্দুল মাজেদ, সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন, রফিকুল ইসলাম (মুন্সীগঞ্জ), অশোক কুমার দাস, সাজ্জাদ হোসেন খান, রফিকুল ইসলাম (বগুড়া) ও শেখ হারুন। ইন্টারপোলের রেড নোটিসে নাম রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার ফাঁসির আসামি অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল এএম রাশেদ চৌধুরী, এইচবিএম নূর চৌধুরী, ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেউদ্দিন। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার চার্জশীটভুক্ত অন্যতম আসামি আলহাজ মাওলানা মোঃ তাইজউদ্দিনের নামেও রয়েছে রেড নোটিস। ভারতের তিহার জেলে আটক আছে জঙ্গী দুই ভাই মোরসালেহীন ও মুত্তাকীন। ফাঁসির দ-প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে আছে, ফরিদপুরের আবুল কালাম আজাদ, জাহিদ হোসেন, গোপালগঞ্জের আশরাফুজ্জামান খান, ফেনীর মুইন উদ্দিন চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৈয়দ মোঃ হাসান আলী ও সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন এবং মঠবাড়িয়ার আব্দুল জব্বারের নামও রয়েছে রেড নোটিসের তালিকায়। এছাড়া সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভি, বিএনপি নেতা আবুল হারিস চৌধুরী ও কাজী শাহ মোফাজ্জাল হোসেন কায়কোবাদের নামও রেড নোটিসে ঝুলছে। ইন্টারপোল ডেস্ক সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা মামলার অন্যতম আসামি পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী নাজমুল মাকসুদ মুরাদকে। ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট ধানম-ির ৩২ নম্বর রোডের বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপের মামলার আসামি মুরাদ। এখন আবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার মৃত্যদ- সাজাপ্রাপ্ত, যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গীদের ফিরিয়ে আনার জন্য ইন্টারপোলের সাহায্য নেয়া হচ্ছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, গুলশান হলি আর্টিজান বেবারিতে জঙ্গী হামলার পর নিখোঁজ তরুণদের তালিকা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে উচ্চ শিক্ষিত, বিত্তবান ঘরের অনেক তরুণের এখনও হদিস পাওয়া যায়নি। এমন নিখোঁজ বাংলাদেশী ১৭ তরুণের নামে ওয়ান্টেড নোটিস যাচ্ছে আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোলে। ইতোমধ্যেই তাদের প্রোফাইল তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিন মাস থেকে চার বছর পর্যন্ত রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আছে এসব তরুণ। তাদের বিষয়েও তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। জঙ্গী সম্পৃক্ততায় জড়িত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। রেড ওয়ারেন্ট নোটিস দেয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা ১৭ তরুণের প্রায় সবাই ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের উগ্রপন্থী জঙ্গীগোষ্ঠীর হয়ে কাজ করছে বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর গুলশানে ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পর নিখোঁজ তরুণদের বিষয়ে জঙ্গী তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত থাকার তথ্য মেলে। এদের মধ্যে আছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ বাসারুজ্জামান, বাড্ডার জুনায়েদ খান, ঢাকার আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম, ঢাকার ইব্রাহীম হাসান খান, ধানম-ির জুবায়েদুর রহিম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী, লক্ষ্মীপুরের এটি এম তাজউদ্দিন, সিলেটের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি, জুনুন শিকদার, তাহমিদ রহমান শফি, তৌসিফ হাসান ও আরাফাত ওরফে তুষার। তাদের আটক করে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হবে।
×