ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পৌরনীতি ও সুশাসন প্রথম পত্র

উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির পড়াশোনা

হয়ে ওঠে। সুতরাং আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম্য, আনুষ্ঠানিকতার বাড়াবাড়ি, অহেতুক বিলম্ব-এসব বুঝাতেই মন্দ অর্থেই ‘লালফিতার দৌরাত্ম্য’ শব্দটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত। গ) উদ্দীপকে জনাব রায়হানের চরিত্রে আমলাতন্ত্রের কিছু বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। যেমন-দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রভৃতি। দক্ষতা : আমলা বা সরকারী কর্মকর্তা হলেন দক্ষ। আমলাতন্ত্রের সংগঠনে কর্মচারীরা সর্বোচ্চ মাত্রায় বিশেষ দক্ষতা অর্জনে সচেষ্ট থাকেন। কেবল ব্যক্তির দক্ষতা নয়, সংগঠনের দক্ষতা ও আমলাতন্ত্র সর্বোচ্চ মাত্রায় লক্ষ্য করা যায়। আমলাতন্ত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। উদ্দীপকের বায়হান একজন উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে অবশ্যই দক্ষতাসম্পন্ন। নিয়োগ ও পদোন্নতি : আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনে নিয়োগ প্রদান করা হয় মেধার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে। সিনিয়রিটি বা জ্যেষ্ঠতা এবং কৃতিত্ব বা সাফল্য এই দুই মানদ-েই তাদের পদোন্নতি দেয়া হয়। উদ্দীপকে জনাব রায়হানও মেধা ও যোগ্যতার বলে পদোন্নতি লাভ করেছেন। নিরপেক্ষতা : আমলা প্রশাসন রাজনীতি নিরপেক্ষ সংগঠন। আমলারা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থেকে, ঘৃণা ও আবেগকে পরিহার করে নিয়মসিদ্ধভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন। প্রত্যেক কর্মচারীই তার ব্যক্তিগত জীবনকে প্রশাসনিক জীবন থেকে পৃথক রাখেন। উদ্দীপকে জনাব রায়হানও সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান হয়েও যোগ্যতা না থাকায় তার ছোট বোনকে সরকারী চাকরিতে নিয়োগ দিতে পারেননি। সুতরাং, বলা যায়, উদ্দীপকের জনাব রায়হান একজন যথার্থ আমলা হিসেবে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। ঘ) উদ্দীপকের আলোকে একজন সরকারী কর্মকর্তা অর্থাৎ আমলার কাজ বিশ্লেষণ করা হলো- উদ্দীপকে জনাব রায়হান উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে বিধি মোতাবেক রুটিনমাফিক প্রশাসনিক কাজগুলো সম্পন্ন করে থাকেন। একজন সরকারী কর্মকর্তা বা আমলা যে সকল কাজ করে থাকে তা নিম্নে দেওয়া হলো- আইন কার্যকর করার- আমলারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করে সরকারের প্রাত্যহিক রুটিনমাফিক কাজ সম্পন্ন করেন। অর্থাৎ আমলারাই আইনকে বাস্তবে প্রয়োগ করেন। আইন প্রণয়নে সাহায্য দানÑ বর্তমানে আইনসভার উপস্থাপিত খসড়া বিলের অধিকাংশই আমলারা প্রস্তুত করে থাকেন। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত বিষয়, অর্থ-ব্যাংক-বীমা সম্পর্কিত বিষয়ে খসড়া বিল প্রশাসনিক বিভাগই তৈরি করে থাকে। তবে এগুলো আইন সভায় উপস্থাপন করতে হয় এবং সেখানে তা সংশোধন ও পরিবর্তিত হয়ে থাকে। সরকারী নীতি নির্ধারণে সাহায্য দানÑসাধারণত বলা হয় যে, আমলাদের কাজ সরকারী নীতি বাস্তবায়ন নীতিনির্ধারণ নয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে, মন্ত্রীরা রাজনৈতিক প্রশাসকগণ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিষয়ে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেক সময় আমলাদের সহযোগিতা নিয়ে থাকেন। কেননা আমলারা এসব বিষয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার অধিকারী। বিচার সংক্রান্ত কাজÑ ট্রেড মার্ক, জমি ক্রয়-বিক্রয়, রেজিস্ট্রি ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমলারাই আইন মোতাবেক অনেক বিরোধ মীমাংসা করে থাকেন। আমলারাই আদালতে সিদ্ধান্ত কার্যকর করে থাকেন। দৈনিক কার্যাবলী সম্পাদনÑ আমলারা বিধি মোতাবেক রুটিনমাফিক কাজগুলো সম্পন্ন করে থাকেন। সরকারের নিকট জনগণের দাবি-দাওয়া জ্ঞাপন Ñসরকারের নিকট বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থ এবং দাবি-দাওয়া তুলে ধরে থাকেন। তথ্য পরিবেশনÑ আমলাতন্ত্র আইনসভার সদস্য ও মন্ত্রীদের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ও পরিসংখ্যান প্রদান করে থাকেন। আমলাদের পরিবেশিত তথ্যসমূহ সরকার দেশবাসীর নিকট প্রকাশ করে থাকেন। পেশাগত ও নৈতিক মূল্যবোধের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা আমলাতন্ত্র পেশাগত ও নৈতিক মূল্যবোধের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে থাকেন। সুতরাং বলা যায় উদ্দীপকে জনাব রায়হান অর্থাৎ সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা তাদের সংগঠন আমলাতন্ত্র জনকল্যাণকর রাষ্ট্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে থাকে।
×