ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মসুল অভিযান

প্রাচীন নগরী নিমরুদের কাছে ইরাকী বাহিনী

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১২ নভেম্বর ২০১৬

প্রাচীন নগরী নিমরুদের কাছে ইরাকী বাহিনী

ইরাকের বৃহত্তম শহর মসুল পুনর্দখলের লড়াই চলছে প্রাচীন এ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী নিমরুদের ধ্বংসাবশেষের কাছাকাছি এলাকায়। ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের ঘাঁটি রাকা অভিযান ব্যাহত হচ্ছে বালি ঝড়ের কারণে। খবর এএফপির। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের সহায়তায় ইরাকী বাহিনী ও কুর্দি-আরব মিলিশিয়া জোট সর্বশেষ দুই ঘাঁটি মসুল ও রাকা থেকে আইএসকে উচ্ছেদের লক্ষ্যে দুটি শহরের দিকে পৃথকভাবে অগ্রসর হচ্ছে। জোট জিহাদীদের স্বঘোষিত খিলাফতের বিরুদ্ধে এক তীব্র আঘাত হানার অপেক্ষায় আছে। জোট আইএসের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে দু’বছর আগে। ইরাকী বাহিনী ও কুর্দি পেশমের্গা যোদ্ধারা পূর্ব, দক্ষিণ ও উত্তর দিক থেকে মসুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তারা এ আক্রমণ অভিযান শুরু করে ১৭ অক্টোবর। সামরিক বাহিনী বলেছে, সৈন্য ও মিলিশিয়া জোটের যোদ্ধারা বৃহস্পতিবার মসুলের প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে নিমরুদের নিকটবর্তী আইএস-অধিকৃত দুটি গ্রামের সন্নিকটে চলে এসেছে। যৌথ অভিযান কমান্ড বলেছে, নবম আর্মার্ড ডিভিশনের ইউনিটগুলো ও হাশেদ আল আশায়েরি আব্বাস রজব ও আল নোমানিয়াসহ এ দুটি গ্রাম মুক্ত করার জন্য নিমরুদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কমান্ড পরে ঘোষণা করেছে যে, আব্বাস রজব পুনর্দখল হয়েছে। নিমরুদ প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যের একটি বড় ঐতিহাসিক কেন্দ্র। খ্রিস্টপূর্ব ১৩ শতকে নির্মিত এ শহরটি ছিল এ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী। সাম্রাজ্যের শাসকরা এখানে নির্মাণ করেছেন বিশাল বিশাল প্রাসাদ ও স্মৃতিস্তম্ভ যা প্রতœতত্ত্ববিদদের আকৃষ্ট করছে দীর্ঘ সময় ধরে। আইএস গত বছর এপ্রিলে ঐতিহাসিক কীর্তিগুলোর চারদিকে বিস্ফোরক পুঁতে রাখার এবং উড়িয়ে দেয়ার আগে ইন্টারনেটে ভিডিও পোস্ট করেছিল সেগুলো গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য। জিহাদীরা তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রাচীন ঐতিহ্য ধ্বংসের জন্য সে উদ্যোগ নিয়েছিল। এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে তারা মসুলের উপকণ্ঠে প্রাচীন নাইনভে দক্ষিণাঞ্চলে মরুভূমিতে হাত্রা ও পার্শ্ববর্তী সিরিয়ার পালমিরায়। আইএস বলেছে, প্রাচীন কীর্তিগুলো প্রতিমা-মূর্তি এবং এগুলো উগ্র সুন্নি ইসলামের আদর্শবিরোধী। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) বলেছে, রাকা অভিমুখী তাদের অগ্রযাত্রা বালিঝড়ের কারণে ব্যাহত হচ্ছে, আজকে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। বালিঝড়ের কারণে কিছুই দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমাদের আশঙ্কা আইএস এর সুযোগ নিয়ে কোন পাল্টা হামলা করবে। এসডিএফ মুখপাত্র জিহান শেখ আহমেদ বলেছেন, তারা ১৫টি গ্রাম পুনর্দখল করেছে। তিনি বলেন, আক্রমণ শুরু হওয়ার পর হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য তিনি আবেদন জানান। তিনি বলেন, ৫ হাজারের বেশি লোক মুক্তাঞ্চলে চলে এসেছে। তারা তাদের জন্য উন্মুক্ত করিডর দিয়ে রণাঙ্গন থেকে আসছে। আমাদের আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রয়োজন। কারণ, আমাদের সামর্থ্য সীমিত। শীত চলে আসছে। তাদের অবস্থানের জন্য কোন শিবির নেই। অনেকেই ট্রাক ও গাড়িতে করে এইন ইসার আশপাশে এসে পৌঁছাচ্ছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে মালপত্র। কারও কারও সঙ্গে রয়েছে গবাদি পশু। ২০১১-এ সিরীয় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে রাকার জনসংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার। কিন্তু ৮০ হাজারের বেশি লোক পালিয়ে গেছে দেশের অন্যান্য স্থানে। অন্যদিকে, মসুল আরও অনেক বড় শহর। এখানে ১০ লাখের বেশি লোকের বাস। এ আক্রমণ অভিযান শুরু হওয়ার পর ৪৫ হাজারের বেশি লোক এ শহর ছেড়ে পালিয়েছে। ত্রাণকর্মীদের আশঙ্কা শহরের অভ্যন্তরে লড়াই শুরু হলে বড় মানবিক সঙ্কটের সৃষ্টি হবে। আইএস শহরের নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। মানবাধিককার গ্রুপগুলোও পালিয়ে যাওয়া লোকদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
×