ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৬ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানি ব্যবহার সম্ভব

দক্ষ ব্যবস্থাপনায় বছরে ৫২ লাখ ডলার জ্বালানি খরচ কমবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

দক্ষ ব্যবস্থাপনায় বছরে ৫২ লাখ ডলার জ্বালানি খরচ কমবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জ্বালানির দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধমে বাংলাদেশী কোম্পানিগুলো ১৬ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানি ব্যবহার করতে পারে। এর মাধ্যমে কমবে ২১ শতাংশ জ্বালানি খরচ এবং ১৮ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন। বার্ষিক গড়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার মার্কিন ডলার করে মোট ৫২ লাখ ডলারের জ্বালানি খরচ সাশ্রয় করা সম্ভব। পাশাপাশি বর্তমানে দেশে গৃহস্থালী কার্যক্রমে মোট উৎপাদনের ৫০-৭০ শতাংশ গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৫-২০ শতাংশ গ্যাসের ব্যবহার হচ্ছে শিল্প কারখানায়। গৃহস্থালী কাজে এলপিজি ব্যবহার করা সম্ভব হলে শিল্পখাতে এ গ্যাস ব্যবহার করা যাবে। এতে শিল্প কারখানায় উৎপাদন ও বিনিয়োগ বাড়বে। শনিবার রাজধানীর হোটেল সিক্স সিজনে ‘বাংলাদেশ : জ্বালানি দক্ষ শিল্পের সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সহযোগিতায় দ্যা এনার্জি এফিশিয়েন্সি এনগেজমেন্ট (থ্রিই) সেক্রেটারিয়েট এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়্যা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত মিকায়েন হেমনিটি উইন্থরা, রয়্যাল ডেনিশ এ্যাম্বেসির বাণিজ্য উপদেষ্টা সরেন রোবেনহেগেন, নরডিক চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এনসিসিআই)’র সভাপতি শামীম উল হক, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি হোসেন খালেদ প্রমুখ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রোগ্রামের সিনিয়র উপদেষ্টা স্টেফান স্কেয়ার এনভোল্ডসেন। প্রোগ্রামটিতে অংশ নেয়া ৩৬টি কারখানার তথ্য পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, বার্ষিক গড়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার মার্কিন ডলার করে মোট ৫২ লাখ ডলারের জ্বালানি খরচ সাশ্রয় করা সম্ভব। প্রবন্ধে বলা হয়, জ্বালানির দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশী কোম্পানিগুলো ১৬ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানির ব্যবহারের কমাতে পারে, পাশপাশি জ্বালানির খরচ ২১ শতাংশ এবং কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমন ১৮ শতাংশ কমানো সম্ভব। স্টেফান বলেন, বাংলাদেশী কোম্পানিগুলোর জন্য জ্বালানি দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটি খরচ কমিয়ে আরও জ্বালানির প্রয়োজন ছাড়াই ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়তা করতে পারে। স্বাগত বক্তব্যে নরডিক চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এনসিসিআই)’র সভাপতি শামীম উল হক বলেন, বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে জ্বালানি ব্যবহারের দক্ষতা উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এবং এ খাতে জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে উক্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি মূলের তৈরি পোশাক আমরা রফতানি করতে পারব। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, বাংলাদেশের টেক্সটাইল, তৈরি পোশাক, সিমেন্ট, প্লাস্টিক পণ্য, সিরামিক এবং সারসহ অন্যান্য খাতের শিল্প-কারখানাগুলোতে চাহিদা মোতাবেক জ্বালানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, জ্বালানি ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করতে পারলে, কম খরচে পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। তিনি টেকসইযোগ্য জ¦ালানির ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য সরকার কে একটি দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি ক্রমান্বয়ে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত মিকায়েন হেমনিটি উইন্থরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিল্প খাতে জ্বালানি ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়টি বর্তমানে সময়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জ্বালানি ব্যবহারের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তাদের নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। ডেনিশ রাষ্ট্রদূত শিল্পখাতে দক্ষ জ্বালানি ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য ডেনমার্কের প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশের রয়েল ডেনিশ দুতাবাসের বাণিজ্য উপদেষ্টা সরেন রোবেনহেগেন বলেন, সবুজ শিল্পায়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে ডেনমার্ক সারা পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের টেকসই প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করতে ডেনমার্ক আগ্রহী। তিনি আগামীতে বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে বিদ্যমান জ্বালানি উৎসের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষ করে পানি, বাতাস, বর্জ্য, সূর্যরশ্মি প্রভৃতি হতে বিদ্যুত উৎপাদনে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। জ্বালানি দক্ষতা ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশেষ কর সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি বিশেষ ঋণ প্রকল্প চালু করার প্রস্তাব করেন। তিনি সূর্যের আলোর কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বিল্ডিং কোড প্রণয়ন এবং তা যথাযথ ব্যবহারের উপর জোরারোপ করেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়্যা বলেন, দেশের জ্বালানি স্বল্পতা দূর করার জন্য আমাদের অবশ্যই বিকল্প জ্বালানির উৎস খুঁজে বের করতে হবে। তিনি জানান, বর্তমানে দেশে গৃহস্থালী কার্যক্রমে মোট উৎপাদনের ৫০-৭০ শতাংশ গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৫-২০ শতাংশ গ্যাসের ব্যবহার হচ্ছে শিল্প কারখানায়। তিনি বলেন, গৃহস্থালী কাজে এলপিজি ব্যবহার করা সম্ভব হলে শিল্পখাতে এ গ্যাস ব্যবহার করা যাবে। তিনি জ¦ালানি ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, দেশের সরকারী মালিকানাধীন শিল্প-কারখানাগুলোতে দীর্ঘদিনের পুরনো প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে এবং এ ধরনের শিল্প-কারখানাসমূহের উৎকর্ষতা সাধনে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানে ডেনমার্ককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। মুক্ত আলোচনায় ঢাকা চেম্বারের উর্ধতন সহ-সভাপতি হুমায়ুন রশিদ, সহ-সভাপতি খন্দকার আতিক-ই-রাব্বানী, এফসিএ, পরিচালক সেলিম আকতার খান, প্রাক্তন সভাপতি রাশেদ মাকসুদ খান, প্রাক্তন সহ-সভাপতি মোঃ শোয়েব চৌধুরী, প্রাক্তন পরিচালক দাতা মাগফুর অংশগ্রহণ করেন।
×