ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানবিক সঙ্কটে মিডিয়াকে জনগণের পাশে থাকার আহ্বান

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২২ অক্টোবর ২০১৬

মানবিক সঙ্কটে মিডিয়াকে জনগণের পাশে থাকার আহ্বান

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মানবিক সঙ্কটে গণমাধ্যমকে সাধারণ জনগণের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, জরুরী ও মানবিক সঙ্কটে জনগণ অসহায় হয়ে পড়ে। তখন গণমাধ্যমকেই তাদের পাশে দাঁড়াতে হয়। এছাড়া তারা বিভিন্ন সঙ্কট উত্তরণে গণমাধ্যমকে সতর্কভাবে সংবাদ পরিবেশনেরও তাগিদ দিয়েছেন। শুক্রবার রাজধানীতে ‘এশিয়া মিডিয়া কনফারেন্সে’ বক্তারা এমন অভিমত প্রকাশ করেন। রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে আয়োজিত এই সম্মেলনে প্রতিপাদ্য ছিল ‘মানবিক পরিস্থিতি ও জরুরী সঙ্কটে সাংবাদিকতা।’ আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) ও কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন (ডিক্যাব) যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার, আইসিআরসি প্রতিনিধি দলের প্রধান ইখতিয়ার আসলানভ, আইসিআরসির আঞ্চলিক জনসংযোগ উপদেষ্টা গ্রাজিয়েলা পিকোলি ও ডিক্যাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, মানবিক সঙ্কটের সময়ে পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন হয় বলে সংবাদ পরিবেশনে গণমাধ্যম কর্মীদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এ ধরনের সঙ্কটের সময়গুলোতে গণমাধ্যম পেশাজীবীদের অবশ্যই নেতিবাচক সাংবাদিকতা থেকে নিবৃত্ত থাকতে হবে। তাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে পেশাদারিত্ব সমুন্নত রাখতে হবে। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, কোন দেশের জনগোষ্ঠী যখন মানবিক জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করে তখন তথ্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যথাসময়ে তথ্য প্রবাহ ও যোগাযোগ জীবন বাঁচাতে পারে এবং ভোগান্তিও কমায়। এর ফলে মানবিক সংগঠনগুলো দুর্গত মানুষদের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে সক্ষম হয়। দেশী-বিদেশী সাহায্য সংস্থা ও গণমাধ্যমের পরস্পরের কাজ বোঝার ওপর জোর দিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, এই সম্পর্ক কখনও অবিশ্বাস, যোগাযোগের ঘাটতি ও ভুল বুঝাবুঝির মধ্যে পড়ে। পরিস্থিতির উন্নয়নে গণমাধ্যম পেশাজীবী ও ত্রাণকর্মীদের পরস্পরের কাজ বুঝতে হবে। তাদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের জন্য উপযুক্ত মাধ্যম প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই সম্মেলন এ সব বাধা মোকাবেলায় পথ খুঁজে পেতে জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম পেশাজীবীদের সহায়তা করবে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। মানবিক বিপর্যয়ের সময় সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনাকালে ভারতের সাংবাদিক জ্যোতি মালহোত্রা বলেন, মানবিক বিপর্যয়ের সময় সাংবাদিকদের জনগণের পক্ষে থাকা প্রয়োজন। মানবিক পরিস্থিতি উত্তরণেও গণমাধ্যমের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে মানবিক পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনে সাধারণ জনগণের দেশত্যাগের অধিকার রয়েছে। আর সেটাকে স্বাভাবিকভাবেই নেয়া প্রয়োজন। ‘নিউ মিডিয়া ও উদ্ভাবনের যুগে হুমকি ও সাংবাদিকতা’ শীর্ষক পর্বে আলোচনার সঞ্চালনা করেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী। এ সময় তিনি নিউ মিডিয়া বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক ব্রায়ান জন থমসন বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় নৌকাযোগে অভিবাসী প্রার্থীরা ধরা পড়লে পাপুয়া নিউগিনি ও নাউরোতে পাঠানো হয়। সেখানে অভিবাসীরা কিভাবে জীবনযাপন করেন, সেটা অনেক সময়ই জানা সম্ভব হয় না। কোন সাংবাদিক নাউরোতে যাওয়ার আবেদন করলে ভিসা ফি দিতে হয় ৮ হাজার ডলার। আর এত ভিসা ফি দেয়ার পরেও ভিসা মেলার কোন নিশ্চয়তা নেই। সে কারণে অনেক সময়ই সাংবাদিকদের এই ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে দুটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন ভারতের সাংবাদিক জ্যোতি মালহোত্রা, আফগানিস্তানের নিজামুদ্দিন হামিদী, অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক ব্রায়ান জন থমসন, থাইল্যান্ডের সাংবাদিক নিথিন্যান্ড জোরাসেনগ্রেথ, মিয়ানমারের সাংবাদিক মিও থা হেথে, চীনের সাংবাদিক জিংমেই জং, ফিলিপিন্সের সাংবাদিক রোয়েনা প্রাণ, বাংলাদেশের সাংবাদিক আনিস আলমগীর, হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া। সমাপনী পর্বে বক্তব্য রাখেন আইসিআরসির ডেপুটি হেড অব ডেলিগেশন বরিস কেলেসেভিক ও ডিক্যাব সাধারণ সম্পাদক পান্থ রহমান।
×