ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একতারা এখন বাণিজ্যিক পণ্য

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১৫ অক্টোবর ২০১৬

একতারা এখন বাণিজ্যিক পণ্য

বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের চারণভূমি ও সাধন-ভজনের তীর্থস্থান দর্শনে প্রতিদিন কুষ্টিয়ায় ছুটে আসে নারী-পুরুষসহ অসংখ্য দেশী-বিদেশী পর্যটক। এখানে লালনের স্মৃতিমাখা ‘আখড়াবাড়ি’ ঘুরে দেখা ছাড়াও তাদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ লালনের ‘একতারা’। আর পর্যটকদের এই চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে আখড়াবাড়ির আশপাশে গড়ে উঠেছে ‘একতারা বাড়ি’। এসব কারখানায় তৈরি হচ্ছে লালনের একতারা, ডুগডুগি, ঢোল ও তবলাসহ নানা সামগ্রী। উৎপাদিত এসব বাদ্যযন্ত্র রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সরবরাহ হয় বিভিন্ন জেলায়। নারী-পুরুষ উভয়েই এই শিল্পের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে হচ্ছে স্বাবলম্বী। এতে যেমন দরিদ্র পরিবারে ফিরে আসছে সচ্ছলতা। তেমনই বেকারদের হচ্ছে কর্মসংস্থান। এদেরই একজন ছেঁউড়িয়ার ‘একতারা বাড়ি’র আমিরুল ইসলাম বাদশা। খুব বেশি দিনের কথা নয়। তখন তিনি বেকার। ছিল না ব্যবসা করার মতো সঙ্গতি। দারিদ্র্যতা ছিল নিত্য সঙ্গী। এমন পরিস্থিতিতে বাদশা লক্ষ্য করেন, ছেঁউড়িয়ায় আগত পর্যটকদের কাছে লালনের একতারা বেশ জনপ্রিয় এবং ভাল দরে এটি বিক্রিও হচ্ছে। এ থেকে তিনি উদ্বুদ্ধ হয়ে ‘একতারা’ তৈরির উদ্যোগ নেন। এটি ১১ বছর আগের কথা। তখন মাত্র ১৩শ’ টাকা পুঁজি নিয়ে তিনি বাড়িতেই একতারা তৈরি শুরু করেন। বাদশা দেখেন তার তৈরি একতারা ভাল লাভসহ দ্রুত বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তখন তিনি আস্তে আস্তে ব্যবসার প্রসার ঘটাতে থাকেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আমিরুল ইসলাম বাদশার ‘একতারা বাড়ি’র কারখানায় এখন নিয়োজিত রয়েছে মুকুল হোসেন, শাহেদ ও সকিনা বেগমসহ ২৫/২৬ কর্মচারী। তাদের নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে ছোট-বড় নানা সাইজ ও ডিজাইনের ‘একতারা’। বাদশা বলেন, শিলাইদহ কুঠিবাড়ি ও লালন মাজার এলাকা তার প্রধান বিক্রয় কেন্দ্র। এছাড়া ঢাকাসহ ২৫/২৬টি জেলায় তিনি একতারা সরবরাহ করেন। এ পেশায় তিনি লাভবান হচ্ছেন। নবেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত একতারা বিক্রির মৌসুম। একতারা বিক্রি হয় ৪০ থেকে সর্বোচ্চ আট শ’ টাকায়। তিনি জানান, একতারা তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হয় তরলা বাঁশ, লাউয়ের খোল, মেহগনি কাঠের তৈরি ছোট-বড় সাইজের খোল, নারকেলের মালাই, ছাগলের চামড়া, স্টিলপাত ও সুরের তার। এ ছাড়া প্রয়োজন হয় স্ক্রু, ওয়াসার, বোতাম ও রং। একতারা বাঙালীর লোকবাদ্যযন্ত্র। একতার বিশিষ্ট বলে একে বলা হয় একতারা। -এমএ রকিব, কুষ্টিয়া থেকে
×