নতুন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর যে বিষয়গুলোর ওপর বেশি নজর দেবেন?
উপাচার্য : বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামে তিনটি শব্দ রয়েছে- গবেষণা, শিক্ষা, সম্প্রসারণ। এখানে লেখাপড়ার পাশাপাশি গবেষণা হবে। আর সেই গবেষণা গ্রামের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এরকম একটা লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। এাছাড়া মান সম্পন্ন জনবল তৈরি করা যাতে ছাত্রছাত্রীদের সঠিক শিক্ষা প্রদান করতে পারে। সে সঙ্গে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি যাতে সঠিক শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ তৈরি হয়। একাডেমিক দিকে অনুষদ সংখ্যা বৃদ্ধি, সীড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটকে ঢেলে সাজানো, শিক্ষায় নতুন ধারা উন্মোচন, সিলেবাসে আধুনিকতা সংযোজন করা ইত্যাদি বিষয়ে নজর দিতে চাই।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উচ্চতর কৃষিশিক্ষাকে কেন গুরুত্ব দেয়া উচিত?
উপাচার্য : কৃষিই কৃষ্টির মূল। বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে আমরা যতটা উন্নতি করি না কেন, খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য আমাদের বারবার ফিরে যেতে হয় কৃষি ও কৃষকের কাছে। আর এতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন এদেশের কৃষিবিজ্ঞানীরা ও কৃষিবিদরা। কৃষিতে স্নাতক ডিগ্রী গ্রহণকারীদের দেশের উন্নয়নে সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কৃষি শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সার্বিক গুণগতমান সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
উপাচার্য : শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক ভাল বলে আমি মনে করি। বিশ্বমানের একাডেমিক কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে আমরা সেমিস্টার সিস্টেম চালু করেছি অনেক আগেই- এর সুফলও ছাত্রছাত্রীরা পাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে নবীন শিক্ষকরা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় স্কলারশিপ পাচ্ছেন। দেশী-বিদেশী সংস্থার গবেষণা সহায়তাও বাড়ছে। কর্তৃপক্ষ শিক্ষা ও গবেষণা কর্মকা-ের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন বিদেশী সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও উন্নত বিশ্বের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার বিশেষজ্ঞরা, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, বিজ্ঞানী ও গবেষকরা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। চীন, কোরিয়া জাপানের কয়েকটি দেশের সঙ্গে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণার সুযোগ বাড়াতে ক্যাম্পাসে ইতোমধ্যে কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার স্থাপিত হয়েছে। ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ প্রবর্তনের পর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এই সম্মাননা পেয়েছেন। এসবই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মানেরই স্বীকৃতি। আশা করি সময়ের সঙ্গে এ মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে কী কী অন্তরায় আছে?
উপাচার্য : বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে তেমন কোন অন্তরায় নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেকের সভায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৩শ’ ৫২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ১ এপ্রিল ২০১৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ সাল পর্যন্ত। তবে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা সব প্রতিষ্ঠানেই আছে। এর মধ্যেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং আমাদের অগ্রগতি সন্তোষজনক। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরুর পর থেকেই এখানকার শিক্ষার্থীরা পাস করার সঙ্গে সঙ্গে ভালো চাকরি পাচ্ছে। কৃষি সেক্টরের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
বর্তমান সময়ে কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা উচিত?
উপাচার্য : কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে যে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা উচিত তা হলো- জলবায়ু পরিবর্তন, বৈরী আবহাওয়া ও জলবায়ু, আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ, বিভিন্ন উদ্ভূত সমস্যা নিরসনের জন্য কার্যক্রম, কৃষিনির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা, বিভিন্ন রকমের কৃষি পণ্যের প্রক্রিয়াজাত প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিভিন্ন সমস্যা উত্তরণের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় কৌলিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর জাত উদ্ভাবন। সর্বোপরি উৎপাদিত পণ্যের সঠিক বিপণন নিশ্চয়তা করার লক্ষ্যে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বাড়াতে কি ধরনের পদক্ষেপ নেবেন?
উপাচার্য : বর্তমানে যে সৌন্দর্য বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে, তাকে আরও সম্পদশালী, সৌন্দর্যশীল করার লক্ষ্যে অর্থের বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এক অসাধারণ সৌন্দর্যশীল ক্যাম্পাসে পরিণত হবে। এই বিশ্বাস আমার রয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: