ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পারিবারিক সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে প্রতিমাসেই

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৫ অক্টোবর ২০১৬

পারিবারিক সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে প্রতিমাসেই

রহিম শেখ ॥ সিরাজুম মুনিরা। পেশায় একজন গৃহিণী। থাকেন রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। স্বামী মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারী কোম্পানিতে চাকরি করেন। সেখান থেকে যে টাকা পাঠান তা দিয়ে বাসা ভাড়া, ছেলের লেখাপড়া এবং অন্যান্য খরচ মিটিয়ে যা অবশিষ্ট থাকে তা সঞ্চয় করেন। জমানো সেই টাকা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনেছেন মুনিরা। নিজের নামে কেনা পরিবার সঞ্চয়পত্রের মাসিক মুনাফা তুলতে গত রবিবার মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছিলেন তিনি। মাসিক মুনাফা তুলে নতুন করে আরও এক লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনলেন তিনি। সুদের হার কমানোর পরও বিনিয়োগ করছেন কেন- জানতে চাইলে জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, সুদের হার কমলেও ব্যাংকের তুলনায় তো এখনও অনেক বেশি পাচ্ছি। তাছাড়া এই মুহূর্তে বিনিয়োগের আর কোন জায়গা নেই বলে এই গৃহিণীর মত। এই গৃহিণীর মতো প্রতিদিনই বহুসংখ্যক নারী আসছেন সঞ্চয়পত্র কিনতে। যাদের একটা বড় অংশ রয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারে। মূলত তাদের ওপর ভর করেই প্রতিমাসেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। সর্বশেষ আগস্ট মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের দুই মাসে এ খাতে নীট বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ৭৯৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে এ খাতে নীট বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ২৯৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। একক মাস হিসেবে আগস্টে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। যা গত অর্থবছরের তুলনায়ও প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে সঞ্চয়পত্রে নীট বিক্রি আসে ২ হাজার ৬৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে এ খাতে নীট বিক্রি আসে ৩ হাজার ৪৯৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি আসে ১ হাজার ৯৭৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। গত দুই মাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র। এর পরেই রয়েছে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক ও পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র। মূলত এই তিন ধরনের সঞ্চয়পত্রের বিক্রিই বেশি হয়ে থাকে। ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদের হার হ্রাস এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে একটু বেশি লাভের আশায় সবাই ‘নিরাপদ’ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে বলে মনে করেন অর্থনীতি গবেষক জায়েদ বখত। তিনি বলেন, সুদের হার কমানোর পরও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে এখনও অন্য যে কোন স্কিম থেকে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়, সে কারণেই বিক্রি বাড়ছে। জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এই ঋণের বোঝা কমাতে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়। গত বছরের এপ্রিল মাসের আগ পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদী এক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনলে প্রতি মাসে ১ হাজার ৭০ টাকা মুনাফা পেতেন একজন গ্রাহক। সুদের হার কমায় এখন পাচ্ছেন ৯১২ টাকা। তারপরও বিক্রি কমছে না। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটে এই লক্ষ্য ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। বিক্রি বাড়ায় সংশোধিত বাজেটে তা প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২৮ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে নীট বিক্রি তার চেয়েও ৫ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা বেড়ে ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকায় পৌঁছে। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের সুদ-আসল পরিশোধে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে সরকারকে। জানা যায়, দেশে ৪ ধরনের সঞ্চয়পত্র আছে। এর মধ্যে ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, ৩ বছর মেয়াদী ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, ৫ বছর মেয়াদী পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ ও ৫ বছর মেয়াদী পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সর্বশেষ গত বছরের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ২ শতাংশ কমানো হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকার সঞ্চয়পত্রে ঋণের সুদ বাড়িয়েছে দরিদ্র মানুষের সঞ্চয়ের কথা বিবেচনা করে। কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়া মানে সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়া।
×