ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিন মাসে কমেছে ১৮ শতাংশ

ঠেকানো যাচ্ছে না রেমিট্যান্সের ধস

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৪ অক্টোবর ২০১৬

ঠেকানো যাচ্ছে না রেমিট্যান্সের ধস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রবাসী আয়ে মন্দা অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টের পর সেপ্টেম্বরেও কমে গেছে প্রবাসী আয়। এ মাসে প্রবাসীরা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন তা আগস্ট মাসের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ এবং আগের অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে প্রায় সাড়ে ২২ শতাংশ কম। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) হিসাবে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ। প্রবাসী আয় কমার কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জনশক্তি রফতানিতে ভাটা, অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের বিপরীতে বিভিন্ন মুদ্রার দরপতন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্র্াস ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলা রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসীরা ১০৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা গেল অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে ৩০ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ২২ দশমিক ৬৮ শতাংশ কম। গেল অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৩৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এছাড়া চলতি অর্থবছরের আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স আসে ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ ডলার, যা আগের বছরের আগস্ট মাসে ছিল ১১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি জুলাইয়ে ছিল আরও করুণ। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স আসে মাত্র ১০০ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। অথচ গেল অর্থবছরের একই মাসে ১৩৮ কোটি ৯৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রথম তিন মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২৩ কোটি ২১ লাখ ডলার, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭০ কোটি ১৫ লাখ ডলার কম। গেল অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর এ তিন মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ৩৯৩ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কয়েকটি কারণে রেমিট্যান্স কমছে। এর মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী হওয়া। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমেছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রফতানিতে ‘স্থবিরতা’ চলছে। সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও এর দৃশ্যমান কোন ফল দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৭১ কোটি ২১ লাখ ডলার। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩০ কোটি ৮৯ লাখ, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এক কোটি ১০ লাখ এবং বিদেশী মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে এক কোটি নয় লাখ ডলার। তবে একক ব্যাংক হিসেবে সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারী খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে ২৫ কোটি ২৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিট্যান্স আহরণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১১ কোটি ৩৯ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে নয় কোটি ৩০ লাখ ডলার, জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে আট কোটি ৩১ লাখ ডলার, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে চার কোটি ৮১ লাখ ডলার, ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে চার কোটি ৬৭ লাখ ডলার ও পূবালী ব্যাংকের মাধ্যমে তিন কোটি ৭৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় আড়াই শতাংশ কম প্রবাসী আয় আসে। গেল অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার, আগের অর্থবছরে যা ছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি ডলার।
×