ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভর্তি প্রস্তুতির এ টু জেড

এইচএসসির পর উচ্চশিক্ষা

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২ অক্টোবর ২০১৬

এইচএসসির পর উচ্চশিক্ষা

এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা এখন ব্যস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতি নিয়ে। আর এ জন্য চাই কঠোর পরিশ্রম। এইচএসসি পরীক্ষায় রেজাল্ট ভাল করা যতটুকু না পরিশ্রমের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া তার চেয়ে বেশি পরীশ্রমের। দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভাল কোন বিষয়ে ভর্তি হতে পারা দীর্ঘ ১২ বছরের শিক্ষা জীবনের সার্থকতা। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নৈর্ব্যক্তিক পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি লিখিত। পরীক্ষার বিষয়বস্তু বাংলা, ইংরেজী, সাধারণ জ্ঞান ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে গঠিত বিষয়াবলী। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, তাই সব বিষয়ের ওপর সমান গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। আসুন জেনে নেই ভর্তি প্রস্তুতির এ টু জেড। ইংরেজী : ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজী একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইংরেজীতে ভাল করার উপরে নির্ভর করে ঢাবি, রাবি, বুয়েট, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল, জাবি, চবি, ইবি, পবিপ্রবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল বিষয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ। তাছাড়া সব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ইংরেজীতেও ভাল করতে হবে। ইংরেজীর মৌলিক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। যেমন : Parts of speech, Sentence, Gender, Number, Articles, Tense, Voice, Transformation of sentence, Narration, Preposition, Tag question, Conditional sentence, Right form of verb. GQvovI Spelling, Synoûms and antoûms, Correction, Vocabulary, Analogy, এর ওপর ভাল ধারণা থাকতে হবে। বাংলা : বাংলা ব্যাকরণ অংশে ভাষা, বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়, ধ্বনি ও ধ্বনির পরিবর্তন, উপসর্গ, অনুসর্গ, সন্ধি, নত্ব বিধান ও ষ-ত্ব বিধান, যতি চিহ্ন, পদাশ্রিত নির্দেশক, প্রকৃতি, প্রত্যয়, সমাস, কারক, বাংলা বানান, দ্বিরুক্তি শব্দ, সমোচ্চারিত শব্দ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চর্চা করতে হবে। দেশী বিদেশী শব্দ বিপরীতার্থক শব্দ, লিঙ্গ, বচন, বাগধারা, প্রবাদ-প্রবচন, পারিভাষিক শব্দ মুখন্থ করতে হবে। কবি-সাহিত্যিকদের জীবনী ও তাদের রচনাবলী এবং বোর্ড বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী সঠিকভাবে আয়াত্য করতে হবে। যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য একটি বইয়ের ওপর নির্ভর না করে একাধিক বইয়ের ওপর নির্ভর করতে হবে। এক্ষেত্রে নবম, দশম শ্রেণীর বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, ড. সৌমিত্র শেখরের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. হায়াত মামুদের ভাষাশিক্ষা বইগুলো যথেষ্ট সহায়ক। সাধারণ জ্ঞান : সাধারণ জ্ঞানে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের ওপরে দুটি অংশ থাকে যার পরিধি অত্যন্ত বিস্তৃত। তবে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করে অধিক নম্বর অর্জন করা যায়। বাংলাদেশ অংশে বাংলাদেশের ভৌগোলিক বিষয়াবলী, প্রাকৃতিক সম্পদ, জনসংখ্যা, উপজাতি, শিক্ষা, রাজনীতি, বাংলাদেশের অর্থনীতি, সংবিধান ও এর সংশোধনী, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, পত্রপত্রিকা, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য, ঐতিহাসিক স্থান, চুক্তি, বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ, খেলাধুলা ও অননৎবারধঃরড়হ বেশি করে মুখস্থ করতে হবে। আন্তর্জাতিক অংশে ভাল করার জন্য সর্বপ্রথম ২০০টি দেশের রাজধানী ও মুদ্রার নাম মুখস্থ করতে হবে। পৃথিবীর মানচিত্রের ওপর ভাল ধারণা নেয়ার চেষ্টা করবে। তাছাড়া পৃথিবী পরিচিতি, মহাদেশীয় অঞ্চল, সীমারেখা, প্রণালী, নদ-নদী, ভৌগোলিক উপনাম, পার্লামেন্ট, বিশ্ব রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ কিছু দেশ, জোট ও সংগঠন, বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ, বিখ্যাত গ্রন্থ ও লেখকের নাম, চুক্তি, যুদ্ধ, বিখ্যাত স্থান, পুরস্কার গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে। সাধারণ জ্ঞানে ভাল করার জন্য বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি বাংলাপিডিয়া, বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, এনসাইক্লোপিডিয়া ও উইকিডিডিয়ার সহায়তা নেয়া যেতে পারে। দৈনন্দিন বিষয়বলীতে ভাল করার জন্য জাতীয় পত্রিকার আন্তর্জাতিক অংশ ও সম্পাদকীয় কলমসহ খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নোট আকারে পড়তে হবে। মেডিক্যাল : যারা কেবল আত্মবিশ্বাসী আর নিজের মেধাকে সময়মতো কাজে লাগাতে পারে তারাই টিকে থাকে ভর্তিযুদ্ধে। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা বেশ প্রতিযোগিতাপূর্ণ, প্রশ্নও টেকনিক্যাল হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীকে ব্যতিক্রমী অনুশীলনের মাধ্যমে প্রস্তুতির বিষয়গুলোকে আস্তস্থ করতে হয়। কেবল আত্মবিশ্বাস আর যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে মেডিক্যালে ভর্তিও সুযোগ পাওয়া সম্ভব, ফলাফল যতই ভাল হোক না কেন পরীক্ষার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত নিজের প্রস্তুতিকে ধরে রাখতে হবে তা না হলে পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি।’ যারা মেডিক্যালে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যতে ডাক্তার হিসেবে নিজেদের দেখতে চান এখন থেকেই ভালভাবে প্রস্তুতি শুরু করুন। নিজের আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে হবে। ভাবতে হবে আমার প্রস্তুতি কখনই অন্যদের থেকে কম হবে না। শুধু ভাবলেই চলবে না সেই অনুসারে কাজও করতে হবে। এ বছর ভর্তি প্রতিযোগিতার সংখ্যা পূর্বের বছরগুলোর চেয়ে আরও বাড়বে। তবে হতাশার কিছু নেই। শেষ সময়ে যথাযর্থ নিষ্ঠাবান হলে শত ভিড়েও সাফল্য সম্ভব। মেডিক্যালে ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুূঙ্খরূপে পড়তে হবে। আবশ্যিক বিষয়ে ভাল নম্বর তোলার জন্য মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকতে হবে। ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে স্পষ্ট ধারণা নিয়েও প্রস্তুতিকে যথার্থ রূপ দেয়া যায়। ফল যতই ভাল হোক ভর্তি পরীক্ষার পূর্ব পর্যন্ত নিবিড় অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে অন্যথায় জীবনে জ্ঞানের প্রতিযোগিতায় অনেক পিছিয়ে পড়বে। মেডিক্যাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানগর্ভ পরিবেশ তোমাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। দৃঢ় মানসিকতা : পরিশেষে এ কথা ধ্রুব সত্য মানসিকভাবে যারা দৃঢ় তাদের জন্য জয়ের পথ উম্মুক্ত। মানসিকভাবে কোন অবস্থাতেই দুর্বল হওয়া চলবে না। আর যারা প্রথমবার পরীক্ষা দিবে, তাদের পরীক্ষার্থীর দীর্ঘ লাইন দেখে ঘাবরানোর কিছু নেই। মানসিক দৃঢ়তা এমন হতে হবে, যে কয়েকজন ভর্তির সুযোগ পাবে আমি তাদের মধ্যে একজন। এই রকম সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কখনই হতাশ হবে না, পরিশ্রম করলে অবশ্যই সফল হবে। ইমাদুল হক প্রিন্স
×