ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লেখার জগতের প্রথম সোপান

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১ অক্টোবর ২০১৬

লেখার জগতের প্রথম সোপান

রুমানার জন্য আজকের দিনটি সম্পূর্ণ আলাদা, আনন্দ আর স্বপ্নময়। আজ সে উদ্বেলিত, উচ্ছ্বাসিত, রোমাঞ্চিত। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে রংপুরের লালকুঠি স্কুল এ্যান্ড কলেজে দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে তার লেখাকে সেরা হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। জীবনে প্রথমবার তার লেখা জনসম্মুখে প্রদর্শিত হচ্ছে। তার শিক্ষক, সহপাঠী, স্কুলের শিক্ষার্থীরা লেখাটির প্রশংসা করেছে। বিশেষ করে রাশভারি স্বভাবের প্রিন্সিপাল যখন মিষ্টি হেসে, আদর করে কাছে ডেকে বললেন, ‘তুই তো ভালই লিখেছিস! চালিয়ে যা, একদিন বড় লেখক হবি। মনে রাখিস, অনেক বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিক, ছড়াকার, কার্টুনিস্ট ও লেখকের হাতে খড়ি দেয়াল পত্রিকার মধ্য দিয়ে। দেয়াল পত্রিকা হচ্ছে লেখার জগতে প্রবেশের প্রথম সোপান। প্রিন্সিপালের কথায় তার মনে শিহরণ জাগে। তার ভেতরে আত্মবিশ্বাস জেগে ওঠে। সে নিজে নিজেকে বলে, আমিও পারি। আমার লেখাও প্রশংসিত হয়। আমি লিখতেই থাকব। রুমানার মতো হাজারো শিক্ষার্থীর মনে লেখার প্রেরণা সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে দেয়াল পত্রিকা। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মুক্তবুদ্ধি, সৎ, দক্ষ, অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানমনস্ক এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে দেয়াল পত্রিকা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। দেয়াল পত্রিকা বা দেয়ালিকা শুধু জ্ঞানের ভা-ারই নয়। জ্ঞান চর্চার মধ্য দিয়ে নির্মল বিনোদন ও নেতৃত্ব বিকাশের উৎকৃষ্ট মাধ্যমও এটি। দেয়াল পত্রিকায় সাহিত্য, বিজ্ঞান, রম্য, আমাদের সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ের প্রতিফলন ঘটে। আর সেটা যদি করা হয় বিদ্যালয়ভিত্তিক তবে তা হয় ছাত্রছাত্রীর জন্য দারুণ আকর্ষণীয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে ওঠে সৃষ্টিশীল প্রতিভা। ছোট শিশুদের ভেতর গড়ে ওঠে আত্মবিশ্বাসের প্রবল ঢেউ। দেয়াল পত্রিকার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। ভাবের আদান-প্রদান, শিল্পভাবনার বিনিময়, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও মনোবিকাশের মাধ্যম হিসেবে দেয়াল পত্রিকা অনন্য। খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিক বা লেখকদের অনেকেই হাতেখড়ি নিয়েছেন দেয়াল পত্রিকার মাধ্যমে। একটা সময় দেয়াল পত্রিকার প্রচলন ছিল সর্বত্র, নিভৃত গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, সর্বত্র দেয়াল পত্রিকার চর্চা হতো। মাসিক, বার্ষিক, ঋতুভিত্তিক এবং ঐতিহাসিক দিবস উপলক্ষেও দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিশু-কিশোর সংগঠন, যুব সংগঠনসহ কিছু কিছু পরিবারেও দেয়াল পত্রিকা প্রকাশের রেওয়াজ ছিল। কিন্তু প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ, সর্বস্তরে বাণিজ্যিকীকরণের প্রবণতা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা ও অব্যবস্থাপনা ক্রমাগত বেড়ে ওঠার কারণে দেয়াল পত্রিকা চর্চা প্রায় বন্ধ হওয়ার পর্যায়ে চলে এসেছে। রংপুরের লালকুঠি স্কুল এ্যান্ড কলেজে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে নিয়মিত দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। এর পেছনের কারিগর ওই প্রতিষ্ঠানের বাংলা বিভাগের প্রভাষক রেজাউল করিম এবং ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক মাহফুজা বেগম। -আব্দুর রউফ সরকার, রংপুর থেকে
×