ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের গুলিতে আট সেনা নিহতের খবর নাকচ করলো ভারত

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পাকিস্তানের গুলিতে আট সেনা নিহতের খবর নাকচ করলো ভারত

অনলাইন ডেস্ক॥ জম্মু-কাশ্মিরে ভারতের দাবিকৃত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ কিংবা পাকিস্তানের দাবিকৃত সীমান্ত সংঘর্ষে আট ভারতীয় সেনা নিহত ও এক ভারতীয় সেনা আটক হওয়ার খবরটি নাকচ করে দিয়েছে দিল্লি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকস” পরিচালনার সময় ভারতের কোনও সেনা হতাহত হয়নি। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে যে ভারতীয় সেনা আটক হওয়ার যে খবর প্রকাশ করা হয়েছে তিনি আদতে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’ অংশই নেননি। সীমান্ত এলাকার সেনাচৌকিতে দায়িত্বরত অবস্থায় অসাবধানতাবশত নিয়ন্ত্রণরেখা পার হওয়ার কারণেই তাকে আটক করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বুধবার রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতের সেনারা সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে। ওই অভিযানে ৯ পাকিস্তানি সেনা ও ৩৫ থেকে ৪০ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলেও দাবি করা হয়। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক দিয়ে এমন সামরিক অভিযানকে বোঝানো হয়, যে অভিযানে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর বাইরে আশপাশের অবকাঠামো কিংবা জনসাধারণ হামলার শিকার হয় না বলে দাবি করা হয়। ঘটনার পর থেকে দুই সেনা সদস্য নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে পাকিস্তান দাবি করে আসছে এটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ছিল না, সীমান্ত সংঘর্ষ বা আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলির ঘটনা ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের এক খবরে বলা হয়, আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলির সময় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ৮ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পাশাপাশি বৃহস্পতিবার এক ভারতীয় সেনাকে আটক করা হয়েছে। আটক হওয়া সেনা সদস্য রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সদস্য বলেও জানানো হয়। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া সে খবরটি ভারতীয় সেনাবাহিনী নাকচ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে রাষ্ট্রীয় রাইপেলসের যে সেনার কথা বলা হয়েছে তিনি আসলে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকেই অংশ নেননি। নিয়মিত টহলের সময় অসাবধানতাবশত নিয়ন্ত্রণ রেখা পার হওয়ায় তাকে আটক করা হয়েছে। ভারতের সেনা সদর দফতর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সীমান্তের ওপাশ থেকে সেনা সদস্য ও জনসাধারণের ভুল করে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে আসার ঘটনা প্রায়ই হয়। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হয়ে থাকে। তবে পাকিস্তানি মিডিয়ায় আট সেনা সদস্য নিহত হওয়ার যে খবর দেওয়া হয়েছে তা একেবারেই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’ আটক সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভারতীয় সেনা অভিযানের মহাপরিচালক রণবীর সিং কথা বলেছেন বলে সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে এনডিটিভি। এদিকে জাতিসংঘে নিয়োজিত পাকিস্তানি দূত মালিহা লোধি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে এক ভারতীয় সেনা গ্রেফতার হওয়ার খবরটি নিশ্চিত করেছেন। ওই সেনা পাকিস্তান ভূখণ্ডে প্রবেশের চেষ্টা করায় তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান তিনি। তবে পাকিস্তান ভূখণ্ডের ভেতরে ঢুকে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর খবরটি নাকচ করে দিয়েছেন লোধি। তিনি বলেন, ‘কাশ্মিরে ভারত যে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করছে তা থেকে বিশ্বের দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করছে ভারত।’ ভারত বলছে, তারা ভারত-পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে গিয়ে জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে ওই অভিযান চালিয়েছে। অভিযানকে জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে পরিচালিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক দাবি করে ভারত এই হামলার বৈধতা আদায়ের চেষ্টা করছে। কেবল তাই নয়। শীর্ষ ভারতীয় সামরিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারত যা বলছে, সেই ভাষ্যে নিহত পাকিস্তানি সেনাকে প্রকারান্তরে সন্ত্রাসীদের সহযোগী বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সামরিক অভিযানবিষয়ক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিং এমন ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি দাবি করেন,‘কিছু সন্ত্রাসী দল লাইন অব কন্ট্রোলে আস্তানা গড়ে সেখানে অবস্থান করছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী গতরাতে সেখানে সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা হতাহত হয়েছে।’ ভারতের তরফ থেকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এ ৯ পাকিস্তানি সেনা ও ৩৫ থেকে ৪০ জঙ্গিকে হত্যার কথা জানানোর পর পাকিস্তানের তরফ থেকে ভারতীয় সেনা হত্যার কথা জানানো হয়। পাকিস্তান জানায়, আটককৃত চান্দু বাবুলাল চৌহানের পিতার নাম বাশান চৌহান, বয়স ২২ বছর। তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। আটককৃত সেনা চান্দু বাবুলাল চৌহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডন। সূত্র: এনডিটিভি, ডন, টাইমস অব ইন্ডিয়া
×