ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ খাদ্য গবেষণা ॥ আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেলেন শারমিন

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নিরাপদ খাদ্য গবেষণা ॥ আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেলেন শারমিন

শংকর লাল দাশ ॥ ড. শারমিন জাহান চীনের সাংহাই জেটিইউ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিরাপদ খাদ্য সংক্রান্ত গবেষণায় তিনটি সম্মানজনক পুরস্কার অর্জন করে বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছেন বিশেষ গৌরব। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চল্লিশ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে তিনি এ পুরস্কার লাভ করেন। অতিসম্প্রতি তিনি স্বল্প সময়ের ছুটিতে দেশে আসেন। এর ফাঁকে তিনি বাবা-মাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাত করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় শারমিন জাহানকে শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রী তাকে বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন এবং তার অভিজ্ঞতা দেশের কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। এছাড়া পটুয়াখালীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকেও শারমিন জাহানকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। যে পুরস্কারগুলোর জন্য শারমিন জাহান দেশকে গৌরবান্বিত করেছেন, সেগুলো হচ্ছে- সাংহাই জেটিইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সম্মাননা, এক্সিলেন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট এ্যাওয়ার্ড ও আউটস্ট্যান্ডিং গ্রাজুয়েট অব সাংহাই জেটিইউ বিশ্ববিদ্যালয়। ড. শারমিন জাহান ২০১২ সালে চীন সরকারের বৃত্তি নিয়ে সাংহাই জেটিইউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার জন্য ভর্তি হন। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি পৃথিবীর অন্যতম পুরনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৮৯৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রায় চল্লিশ হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে থাকেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আউটস্ট্যান্ডিং গ্রাজুয়েট অব সাংহাই জেটিইউ ইউনিভার্সিটি এ্যাওয়ার্ড’ অত্যন্ত সম্মানজনক পুরস্কার। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সব শিক্ষার্থীর এ পুরস্কারের জন্য আগ্রহ থাকে। এ বছর পুরস্কারটি পেয়েছেন মাত্র দশজন। শারমিন জাহানের পিএইচডি থিসিসের মূল বিষয় হচ্ছে- খাদ্যে বিষক্রিয়া নির্ণয়ের উন্নতি পদ্ধতি আবিষ্কার করা। এছাড়া অনুজীব বিজ্ঞান, জৈব প্রযুক্তি, বায়োইনফরমেটিক্স ও ফার্মাসিউটিক্যাল পদ্ধতিসমূহে তিনি বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছেন। এর আগে শারমিন জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ও মাস্টার্স অধ্যয়নকালেও তিনি স্টুডেন্ট এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। দেশ ও বিদেশের স্বীকৃত জার্নালে তার দশটিরও বেশি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। শারমিন জাহান আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি, যুক্তরাজ্যের রয়েল কেমিক্যাল সোসাইটি, বাংলাদেশের বিসিএসআইআরের বৈজ্ঞানিক এ্যাসোসিয়েশন ও গ্রাজুয়েট বায়োকেমিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগে রিসার্চ এ্যাসোসিয়েটস ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণ রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কাজ করেছেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (বিসিএসআইআর) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে পড়াশোনার ছুটিতে চীনে আছেন। পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করে আবার একই প্রতিষ্ঠানে গবেষণায় ফিরবেন। তারুণ্যে উদ্ভাসিত শারমিন জাহান পুরস্কার প্রসঙ্গে বলেন, এ পুরস্কারে বাংলাদেশেরও ব্যাপক প্রচার হয়েছে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের নাম ছড়িয়ে পড়েছে। আগে আমার দেশের নাম খুব বেশি মানুষ জানত না। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সবাই চেনে। পথে দেখা হলে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চায়। এটি অনেক বড় পাওয়া। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করাতে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পেরেছি, যা আমাকে গর্বিত করেছে। পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন ও গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সেলিনা হোসাইনের একমাত্র মেয়ে শারমিন জাহান বরাবরই মেধার স্বাক্ষর রেখে এসেছেন। স্কুল থেকে ভার্সিটি সর্বত্র অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ ফল। শারমিন জাহান চীনে ফিরে যাওয়ার আগে সংক্ষিপ্ত সফরে ঘুরে গেছেন বাবা আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন এমপির নির্বাচনী এলাকা গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলা। এলাকায় তাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা। ব্যস্ততার ফাঁকে পুরস্কার অর্জন প্রসঙ্গে শারমিন জাহান স্থানীয় সংবাদকর্মীদের বলেন, সাধারণত চার বছরের মাঝে পিএইচডির থিসিস এবং গবেষণা শেষ করতে হয়। স্বীকৃত আন্তর্জাতিক জার্নালে একটি প্রবন্ধ ছাপা হতে হয়। ইতোমধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক জার্নালে আমার তিনটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা-কারিকুলাম একটিভিটিজগুলোতেও অংশ নিয়ে থাকি। এখানে বাংলাদেশের ১৩ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছি। নিজের বিশ্ববিদ্যালয় এবং চীনের উহানে অবস্থিত হুয়াজং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজিতে চারটি পোস্টার প্রেজেন্টেশনে নেতৃত্ব দিয়েছি। এ সব কারণেই ‘আউটস্ট্যান্ডিং গ্রাজুয়েট অব সাংহাই জেটিইউ বিশ্ববিদ্যালয়’ পুরস্কার দেয়া হয়।’ এ পুরস্কার ভবিষ্যতে তাকে আরও উৎসাহিত করবে বলে মনে করেন তিনি। এলাকার সংবর্ধনাগুলোর জবাবে শারমিন জাহান বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, যে কোন জাতি গঠনে শিক্ষাই হচ্ছে সফলতার মূল চাবিকাঠি। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি কোন কালেই বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। শিক্ষা ক্ষেত্রে যে জাতি যত এগিয়ে, সে জাতিই বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানী ও সুখী। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে এক নবতর রূপ দেয়ার মহাপরিকল্পনা করেছিলেন। যদি জাতির জনককে নির্মমভাবে হত্যা না করা হতো, জাতি শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে যেতে সক্ষম হতো। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাঙালী জাতির সবইতো শেষ হয়ে যায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও তত্ত্বাবধানে মাঠ পর্যায়ের স্কুলগুলোও প্রাণ ফিরে পেয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রশাসনিক সংস্কারসহ মাঠ পর্যায়ে পদবী ও বেতন ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রণয়ন করে শিক্ষার জগতে এনেছেন এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন। আজ গরিব দিনমজুরের সন্তানও বিনামূল্যে বই পেয়ে হাসতে হাসতে স্কুলে যাচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের গ্রামগঞ্জের শিশু-কিশোরদের মাঝে যেন স্কুলে যাওয়ার এক প্রতিযোগিতার উন্মেষ ঘটেছে। আজকের শিশুর সুশিক্ষার কথা কেউ ভাবেনি, যতটা ভেবেছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। এ অর্জন আমাদের ধরে রাখতে হবে। শারমিন জাহান ছুটি কাটিয়ে ফিরে গেছেন আবার শিক্ষার জগতে। শিক্ষা শেষে তার লব্দ জ্ঞান প্রয়োগ হবে বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রে। যার দ্বারা উপকৃত হবে গোটা দেশ। বর্তমান প্রজন্মের তারুণ্যের জন্য এ যেন এক অহঙ্কার।
×