ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেফতার জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় এফবিআই

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

গ্রেফতার জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় এফবিআই

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান তদন্তকারী সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। জঙ্গীবিরোধী কার্যক্রমে সহায়তার অংশ হিসেবে এফবিআই বাংলাদেশকে এই প্রস্তাব দিয়েছে। তবে সরকার থেকে তাদের এ বিষয়ে অনুমতি দেয়া হবে কি-না সে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানায়। দেশে একের পর এক জঙ্গী হামলার প্রেক্ষিতে সরকারকে সহায়তা দিতে আগ্রহী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের কাছ থেকে কি ধরনের সহায়তা নেয়া হবে, সেটাও যাচাই-বাছাই করছে বাংলাদেশ। এই সহায়তার অংশ হিসেবেই বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তাব দিয়েছে এফবিআই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী তদন্ত সংস্থা এফবিআই থেকে বাংলাদেশকে অবহিত করা হয়েছে, জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে তাদের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তারা বাংলাদেশের জঙ্গীদের মনস্তাত্ত্বিক ধরনটিও বুঝতে চায়। তবে সরকার থেকে এ বিষয়ে এখনও ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করা হয়নি। দেশের অভ্যন্তরীণ জঙ্গীবাদ পর্যবেক্ষণের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলাদা মনোভাব রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে আইএস’য়ের অস্তিত্ব নিয়ে দুই দেশের মনোভাব আলাদা। বাংলাদেশে আইএস বা আলকায়েদার সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে বলে মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমত নয় বাংলাদেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও একাধিকবার সেটা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হয়েছে, শুরু থেকেই এখানে যেসব জঙ্গী হামলা হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে দেশী জঙ্গীরা জড়িত। হুজি, জেএমবি, আনসারুল্লাহ, আনসার আল ইসলামসহ বিভিন্ন ব্যানারে জঙ্গীরা কার্যক্রম চালাচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের রক্ষা করতে ও উন্নয়নে বাধা দিতেই তারা এসব করছে। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বেশিরভাগ হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস প্রতিরোধে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে ইতোমধ্যেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে কারিগরি ও বিশেষজ্ঞ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে কারিগরি ও বিশেষজ্ঞ সহায়তার বিষয়ে বাংলাদেশের কোন আপত্তি নেই। কেননা জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে অন্যান্য দেশের প্রযুক্তির তুলনায় মার্কিন প্রযুক্তির সুনাম রয়েছে। জঙ্গীরা যে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, সেই প্রযুক্তি মোকাবেলার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বিশেষ প্রয়োজন। তবে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে সহযোগিতার অংশ হিসেবে মূলত তথ্য আদান-প্রদান, প্রশিক্ষণ বা সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা নিতে আগ্রহী বাংলাদেশ। এসবের বাইরে জঙ্গীবিরোধী তদন্তেও অধিক মাত্রায় সম্পৃক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারই অংশ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে আটক জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদ করার আগ্রহ দেখিয়েছে এফবিআই। বাংলাদেশ সরকার মনে করে দেশীয় জঙ্গীর সঙ্গে কোন বিদেশী সন্ত্রাসী বা জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে ইন্টারনেট যোগাযোগ থাকতে পারে। তবে তারা সরাসরি বিদেশীদের কাছ থেকে নির্দেশনা পায় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গির সামান্য পার্থক্য থাকলেও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা থেমে নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফরের সময়ে নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এছাড়া আসন্ন বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে। গত পহেলা জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় সন্ত্রাসী হামলায় ১৭ বিদেশীসহ মোট ২৮ জন নিহত হন। এর মধ্যে ছয় জঙ্গীও ছিল। এছাড়া কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার গত ঈদ-উল-ফিতরের সময় জামাতে হামলায় আরও চারজন নিহত হন। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এসব জঙ্গী হামলা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে। জঙ্গী ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে সহায়তা দেয়ার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক প্রতিনিধি দলও ঢাকা সফর করেছেন। এরই অংশ হিসেবে এফবিআই আটক জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সূত্র জানায়, বিভিন্ন ঘটনা তদন্তে সহায়তার জন্য অতীতে এফবিআই বাংলাদেশে এসেছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, বিডিআর বিদ্রোহ ও সেনা কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় তদন্তে সহায়তার জন্যও এফবিআই বাংলাদেশে এসেছিল। এছাড়া লেখক-ব্লগার অভিজিত রায় হত্যার পরে তদন্তে সহায়তার জন্য এফবিআইয়ের কর্মকর্তারা ঢাকায় আসেন।
×