ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্য সচিবের বৈঠক

সাত দিনের মধ্যে দাম না কমালে লবণ আমদানি উন্মুক্ত

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সাত দিনের মধ্যে দাম না কমালে  লবণ আমদানি উন্মুক্ত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সাত দিনের মধ্যে দাম কমানো না হলে লবণ আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়া হতে পারে। ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। কোরবানি ঈদ সামনে রেখে সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজিতে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে লবণ। বেড়েছে ভোজ্য ও শিল্প লবণের দাম। আর তাই দাম কমাতে দেড় লাখ টনের পর এবার আরও এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে এই লবণ প্রকৃত মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমহারে বণ্টন করার দাবি জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও ১ লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন ও গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, দাম কমানোসহ চাহিদা বিবেচনা নিয়ে আরও এক লাখ টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া দেড় লাখ টনের এলসি খোলা সম্পন্ন হয়েছে। এরপরও দাম বাড়াতে কারসাজি করা হলে লবণ আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়া হতে পারে। এদিকে, বুধবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পাঁচ লবণ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেছেন বাণিজ্য সচিব। ওই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন পূবালী সল্ট, এসিআই, কনফিডেন্স, মধুমতি এবং মোল্লা সল্টের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের লবণের দাম কমানোর জন্য সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছে। এরপরও দাম না কমলে লবণের বাজার উন্মুক্ত করে দেয়ার ঘোষণা দেন সচিব। শুধু তাই নয়, লবণ নিয়ে কারসাজি করা হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, এর আগে বাজারে লবণের ঘাটতি পূরণ ও কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ১৪ আগস্ট ৭৫ হাজার ভোজ্য ও ৭৫ হাজার টন শিল্পে ব্যবহৃত লবণ আমদানির অনুমতি দেয়। গত বৃহস্পতিবার আমদানি ও রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতর থেকে ১২১টি মিলকে ৬২০ টন করে ভোজ্য লবণ ও ১২০টি মিলকে ৬২৫ টন করে শিল্পে ব্যবহৃত লবণ আমদানির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। লবণ আমদানির এ অনুমতি দেয়া হয়েছে দেশে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত লবণের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার পর। লবণ বিপণনকারীরা জানিয়েছেন, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসেও প্রতি কেজি ভালমানের লবণের দাম ছিল কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ২৬ টাকা। এখন তা ৪০ থেকে ৪২ টাকায় উঠেছে, যা সাম্প্রতিককালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে অপরিশোধিত লবণের দাম উঠেছিল কেজিপ্রতি ১৬ টাকায়, যা সাধারণত ৫ টাকার আশপাশে থাকে। প্রকৃত মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমহারে বণ্টন করা হলে ২০ টাকায় ভোজ্য লবণ বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম অঞ্চল লবণ মিলমালিক সমিতির সভাপতি নূরুল কবির এবং কক্সবাজার জেলা লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি শামসুল আলম আজাদ। এই দুই জেলায় প্রায় দুই শতাধিক লবণের মিল রয়েছে। তারা জানান, গুটি কয়েক ব্যবসায়ী লবণ আমদানির সুযোগ পেলে তারা একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ নেবে। এতে ৬০ টাকায়ও দেশে লবণ মিলবে না। তাই সমহারে লবণ আমদানির সুযোগ দিয়ে বাজার মূল্য স্বাভাবিক রাখতে হবে। কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে লবণের চাহিদা বেড়েছে ॥ এদিকে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের অতি জরুরী উপাদান লবণের দাম বেড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ হওয়ায় কোরবানি সামনে রেখে এখনও লবণ কেনেননি পোস্তার চামড়া ব্যবসায়ীরা। লবণের দাম না নামলে চামড়ার দাম পড়ার পাশাপাশি অন্য সময়ের চেয়ে এবার বেশি পরিমাণে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। সাধারণত কোরবানির ঈদের মাসখানেক আগে থেকেই লবণ কেনা শুরু করেন পোস্তার আড়তদাররা। বাংলাদেশে সাধারণত লবণের দামে তেমন হের-ফেরও হয় না। তবে গতবার এই সময়ে ৭৪ কেজি লবণের যে বস্তা ৬৫০ টাকায় মিলছিল এবার তার দাম ১৩০০ টাকা। এ প্রেক্ষাপটে লবণের দামে লাগাম টানতে দু’বারে মোট আড়াই লাখ টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই পরিমাণ লবণ আনতে মঙ্গলবার এলসি খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দু-একদিনের মধ্যে আরও এক লাখ টন লবণ আমদানির এলসি খোলা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব। ঈদের আগে এসব লবণ চলে এলে দাম কমে যাবে বলে মনে করছেন সচিব। তবে আমদানির লবণ এলে দাম কমবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। তিনি জানান, আমাদের দেশে যে জিনিসের দাম একবার বাড়ে, তা আর কখনও কমে না। লবণের দাম না কমলে চামড়ার দামে তার প্রভাব পড়বে মন্তব্য করে তিনি বলেন, খরচ ঠিক রাখতে গতবারের চেয়ে কম দামে চামড়া কিনবেন তারা। কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীরা জানান, একটি গরুর চামড়ায় প্রায় দশ কেজি লবণ ব্যবহার করতে হয়। সে হিসেবে আগে একটি চামড়া সংরক্ষণে লবণ বাবদ যেখানে ৮৭ টাকা ব্যয় হতো, সেখানে বর্তমান বাজার দরে লাগবে প্রায় ১৭৫ টাকা। বাংলাদেশে প্রতিবছর মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ চামড়া কোরবানির ঈদে জবাই করা পশু থেকে আসে। এই সময়ে গড়ে ৩০ লাখ চামড়া আসে আড়তে। পোস্তা এলাকার লবণ বিক্রেতা মদিনা সল্টের জামিল আহম্মেদ জানান, কোরবানির ঈদের এক মাস আগে থেকে লবণ বেচা শুরু হয় তার। তবে এবার এখন পর্যন্ত একটাও অর্ডার পাইনি। তিনি জানান, গেলবার প্রতি বস্তা লবণের দাম ছিল ৬৫০ টাকা। সেখানে গত এক মাস ধরে লবণের দাম ১৫০০ থেকে ১৫৫০ টাকার মধ্যে ওঠা-নামা করছে।
×