ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রিহ্যাব সদস্য ছাড়া কোম্পানি নিবন্ধন অনুমোদন নয়

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

রিহ্যাব সদস্য ছাড়া কোম্পানি নিবন্ধন অনুমোদন নয়

রহিম শেখ ॥ আবাসন খাতে প্রতারকদের উৎপাত বাড়ছে। এ খাতের মর্যাদাবান সংগঠন রিহ্যাবের সদস্য নয় এমন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি উঠেছে প্রতারণার অভিযোগ। জমি নিয়েও কাজ শুরু না করা, টাকা দেয়ার পরও ফ্ল্যাট হস্তান্তর না করে উধাও হওয়া এমন সব অভিযোগ আসছে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে। ফলে ইমেজ সঙ্কটে পড়ছে রিহ্যাব। সম্প্রতি আবাসন খাতের সঙ্কট কাটাতে ও ত্রুটিমুক্ত রাখতে রিহ্যাব সদস্য ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এ্যান্ড ফার্মসে নিবন্ধন ও নবায়ন, রেজিস্ট্রি এবং ট্রেড লাইসেন্স না দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউসিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। পেশকৃত সুপারিশ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে রিহ্যাব মনে করছে তাদের মেম্বার ছাড়া ভবিষ্যতে আর কোন কোম্পানি নিবন্ধনের অনুমোদন পাবে না। জানা গেছে, রিহ্যাবের অভিযোগ রিহ্যাব মেম্বার ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন বা ট্রেড লাইসেন্স দিলে তাদের কাছ থেকে ফ্ল্যাট, প্লট ক্রয় করে ক্রেতারা বেশির ভাগ সময়ই প্রতারণার শিকার হয়। এসব কোম্পানি ২ থেকে ৩টি ফ্ল্যাট ক্রেতাদের বুঝিয়ে দিয়ে কোম্পানি গাঢাকা দেয়। তখন ক্রেতারা রিহ্যাবের কাছে আসে অভিযোগ নিয়ে। ক্রেতারা রিহ্যাবের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসলেও রিহ্যাব এসব অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে পারে না। বাধ্য হয়ে এসব ক্রেতাকে আদালত অথবা নিকটস্থ থানায় প্রতারণা মামলা করতে হয়। যেটা রিহ্যাব মেম্বার হলে এসব প্রতিষ্ঠানকে বিচারের আওতায় আনা হতো সহজেই। এজন্য নিবন্ধন বা ট্রেড লাইসেন্সের ক্ষেত্রে রিহ্যাবের সদস্যপদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা জরুরী বলে মনে করে রিহ্যাব। এ সংক্রান্ত সুপারিশ নিয়ে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে দেখা করেন। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৪ থেকে ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত শত কোটি টাকার বিনিয়োগের এ খাতে অভিযোগ রয়েছে প্রায় ১৪০০টি। যার মধ্যে রিহ্যাব কাস্টমার এ্যান্ড মেডিয়েশন সেলের মাধ্যমে সমাধানকৃত প্রায় ১৩৫০টি। বাকি অভিযোগগুলো বিচারাধীন। এর আগে ২০১৫ সালে বিভিন্ন অভিযোগের কারণে ৮টি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে রিহ্যাব থেকে বহিষ্কৃত করে রিহ্যাব। জানা যায়, রিহ্যাব গঠিত মেডিয়েশন সেলে একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে ১২ জন মেম্বার আছে অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ পরিলক্ষিত হয়েছে বা হয়। এর ফলে অনেক সময় ক্রেতারা প্রতারণার শিকার হচ্ছে। তারা রিহ্যাব সদস্য হলে এটা হয়ত ঘটতে পারত না। আমরা রিহ্যাবের সুপারিশগুলোকে প্রক্রিয়াধীন রেখেছি, যাচাই-বাছাই চলছে। জনগণের যাতে দুর্ভোগ না হয়, সেটাই দেখা সরকারের কাজ। অনেক কোম্পানি ক্রেতাদের ফ্ল্যাট, প্লট বুঝিয়ে দিতে পারে না। জনগণ যাতে তাদের প্রতারণার শিকার না হয় সেটা অবশ্যই দেখা হবে। সূত্রে জানা গেছে, রিহ্যাবের বর্তমান সদস্য সংখ্যা রয়েছে ১১৩৯টি। রিহ্যাব ছাড়া আরও প্রায় ২২০০ ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রিহ্যাব সদস্যবহির্ভূত এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিযোগ পরিলক্ষিত হওয়ার কারণে এ সেক্টরের প্রতি জনসাধারণ আস্থা হারাচ্ছে। এই শিল্পটি যেহেতু সঙ্কটকালীন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে, সেহেতু এ খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত কল্পে নিবন্ধন ও নবায়ন এবং ট্রেড লাইসেন্সের ক্ষেত্রে রিহ্যাবের সদস্যপদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা জরুরী বলে জানায় রিহ্যাব নেতারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশের বিষয়ে রিহ্যাবের ডিরেক্টর ও প্রেস এ্যান্ড মিডিয়া কমিটির কো-চেয়ারম্যান কামাল মাহমুদ বলেন, কিছু কোম্পানির কারণে এক লাখ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের এ খাতটি আজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা চাই এসব কোম্পানির কারণে এ খাতের ইমেজ সঙ্কট যেন না হয়। তারা যেন রেজিস্ট্রিসহ নিববন্ধন, নবায়ন না করতে পারে। করতে চাইলে রিহ্যাব সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক করার যৌক্তিক দাবি আমরা জানিয়েছি মন্ত্রণালয়ে। বাণিজ্যমন্ত্রীও আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। মন্ত্রীর এ আশ্বাসে আমরা বলতে পারি ভবিষতে রিহ্যাব সদস্য ছাড়া কোন কোম্পানির রেজিস্ট্রি, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন আর করতে পারবে না। তিনি বলেন, এটা হলে তাদের ট্রেড লাইসেন্স যদি থাকেও তারপরও তারা রাজউক থেকে প্লান নিতে পারবে না। এ বিষয়ে রিহ্যাব সহ-সভাপতি (প্রথম) লিয়াকত আলী ভূইয়া বলেন, অনেকে কোম্পানি লাইসেন্স পেয়েছে আবার কিছু চাইছে। এসব কোম্পানির কোন প্লান নেই, রাজউক অনুমতি নেই, অফিস নেই, আর্কিটেকচার, ইঞ্জিনিয়ার নেই। এসব কোম্পানি যেন আর নতুন করে না আসে সেটা আমাদের দেখতে হবে। তাছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আসলে আমরা এসব অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে পারি না। কারণ তারা রিহ্যাব মেম্বার না। আমরা চাই পোশাক শিল্পের মতো যারা আছে সবাই রিহ্যাবের সদস্য হোক তাহলে ক্রেতা-সাধারণ প্রতারণা থেকে মুক্তি পাবে। তিনি বলেন, প্রায় দুই যুগ ধরে আবাসন খাতের সমস্যা সমাধানে সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বেসরকারী উদ্যোক্তাগণ। প্রবৃদ্ধিতে বড় অবদানও রয়েছে এই শিল্পের।
×