ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

আয়কর রিটার্ন

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আয়কর রিটার্ন

সেপ্টেম্বর মাস এলে দেশের সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক মহলে আয়কর সম্পর্কে অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। এ মাসে ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাগণ তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে থাকেন। দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে টিআইএন ধারীর সংখ্যা আশানুরূপ নয়। কারণ আয়কর দেয়ার ঝক্কি-ঝামেলা ও কম নয়। অনেকের নিকট আয়করের হিসাব মেলানো চিরতার রসের মতো তিক্ত মনে হওয়ায় তারা এ পথে পা মাড়ান না। বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইন্সটাইন পর্যন্ত বলেছিলেন- ‘পৃথিবীতে সবচেয়ে জটিল বিষয় হচ্ছে- আয়করের হিসাব’ অবশ্য আয়কর প্রদানের পদ্ধতিগত জটিলতা নিরসনে এনবিআর ইদানীং বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিয়েছে। কর অঞ্চল পুনর্বিন্যাস, আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার ফরম সহজীকরণ, আয়কর মেলার আয়োজন, শ্রেষ্ঠ আয়করদাতাদের সম্মাননা প্রদানসহ অনলাইনে আয়কর প্রদানের প্রশংসনীযয় উদ্যোগে ধীরে ধীরে সর্বসাধারণের মধ্যে আয়কর প্রদানের প্রতি আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। করদাতাদের সুবিধার্থে অনলাইনে চালু করা হয়েছে ইনকাম ট্যাক্স ক্যালকুলেটর। এটা ব্যবহার করে যে কেউ অতি সহজে নির্ণয় করে ফেলতে পারবেন নিজের জন্য প্রযোজ্য ট্যাক্সের পরিমাণ। করযোগ্য আয় থাকলে সরকারকে সেই আয়ের একটি অংশ আয়কর হিসেবে দিতে হয়। এ জন্য প্রতিবছর বার্ষিক আয়-ব্যয়ের বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিয়ে এ কর দিতে হয়। চাকরিজীবী, ছোট-বড় ব্যবসায়ী- সবাইকে এ কর দিতে হবে। ১ জুলাই থেকে ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমার সময় শুরু হয়ে গেছে। চলতি বছর থেকে এ সময়সীমা শেষ হবে ৩০ নবেম্বর। এ দিন কর দিবস ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এবার আপনি রিটার্ন জমা দেবেন ২০১৫-১৬ আয়বর্ষের। করযোগ্য আয় থাকলে টাকা দিতে হবে। বছরের মাঝপথেই কিছু ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর কেটে রাখা হয়। কেটে রাখা টাকা বছর শেষে রিটার্ন জমার সময় মোট করের সঙ্গে সমন্বয় করা যায়। তবে মনে রাখতে হবে, অগ্রিম কর কেটে রাখার বিষয়টি প্রমাণ করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যার মূল বেতন ২১ হাজার টাকা। এছাড়া চিকিৎসা ভাতা পান মাসে ৭০০ টাকা। বোনাস পান ২টি। আর যদি তিনি সরকারী বাসায় থাকেন এর বাইরে তিনি প্রতি মাসে প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্যত তহবিলে ২ হাজার টাকা, কল্যাণ তহবিলে ৫০ টাকা ও গ্রুপ বীমায় ৪০ টাকা দেন। তার বার্ষিক আয় ও কর হিসাব করলে দেখা যায় ১২ মাসের হিসাবে মূল বেতন ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা। বোনাস ৪২ হাজার টাকাসহ বার্ষিক মোট আয়ের পরিমাণ ২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কোন কর নেই। বাকি ৪৪ হাজার টাকার ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে ৪ হাজার ৪০০ টাকা। চলতি অর্থবছরের জন্য অর্থবিলে কিছুটা পরিবর্তন এনে মোট আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করে কর রেয়াত দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এবার চাকরিজীবীদের মধ্যে যারা বৈশাখী ভাতা পেয়েছেন সে ভাতার পরিমাণ বার্ষিক আয়ে যোগ করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন আমানতের সুদের আয়ের অর্থ তুলে নেয়ার সময় উৎসে কর কাটা হলেই তা মোট কর থেকে বাদ দিতে হবে। কোন চাকরিজীবী বা করদাতার গৃহ সম্পত্তি থেকে থাকে, আর সে থেকে যদি আয় হয় তাও করের আওতায় আনবে। তবে গৃহ সম্পত্তির মোট আয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অনুমোদিত নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত বাড়িঘর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, দারোয়ানের বেতন, সিটি কর্পোরেশনের কর বাদ দিতে হবে। এছাড়া এফডিআর কিংবা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে যে লভ্যাংশ পাওয়া যাবে তাও মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। এক্ষেত্রে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত। শুধু আয়কর ও সম্পদ বিবরণীর ফরম পূরণ করে দিলেই হবে না। আয় কিংবা বিনিয়োগ করে কর রেয়াতের বিপরীতে বেশকিছু কাগজপত্র আয়কর বিবরণীর দলিলের সঙ্গে জমা দিতে হবে। কোন করদাতা যদি কর রেয়াত পেতে চান তা বেশকিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে রয়েছে জীবন বীমার কিস্তির প্রিমিয়ামের রশিদ, ভবিষ্যত তহবিলে চাঁদার সনদ, ঋণ বা ডিবেঞ্চার, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারে বিনিয়োগের প্রমাণপত্র, ডিপোজিট পেনশন স্কিমের চাঁদার সনদ, কল্যাণ তহবিলে চাঁদা, গ্রুপ বীমা কিস্তির সনদ ও যাকাত তহবিলে চাঁদার সনদ। করমুক্ত সীমার বেশি আয় হলে বিভিন্ন হারে কর দিতে হবে। করমুক্ত আয় সীমার পর প্রথম ৪ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ হারে; পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ; পরবর্তী ৬ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ; পরবর্তী ৩০ লাখ টাকার জন্য ২৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। এ ছাড়া কোন ব্যক্তির মোট আয় যদি সাড়ে ৪৭ লাখ টাকার বেশি হয়; তবে বাকি টাকার জন্য ৩০ শতাংশ হারে কর বসবে। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতার জন্য ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা। অন্য সিটি এলাকার জন্য ৪ হাজার টাকা। আর এর বাইরের এলাকার জন্য ৩ হাজার টাকা। এর মানে হলো, আয়-ব্যয় হিসাব করে যদি দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট এলাকার করদাতাদের করের পরিমাণ ন্যূনতম করের চেয়ে কম হয়, তবে তাঁকে এলাকাভেদে ওই নির্দিষ্ট ন্যূনতম কর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যাঁদের বার্ষিক আয় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার মধ্যে, তাঁদেরই ন্যূনতম কর দিতে হবে।
×