ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রিয়াজুল হক

পল্লী উন্নয়নই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চাবিকাঠি

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৮ আগস্ট ২০১৬

পল্লী উন্নয়নই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চাবিকাঠি

পল্লী উন্নয়ন বলতে পল্লীতে বসবাসরত সকল জনগণ, বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলোর জীবনমানের উন্নয়ন বোঝায়। তাদের মৌলিক চাহিদা তথা খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বস্ত্র ও বাসস্থানের প্রয়োজন মেটানোকে পল্লী উন্নয়ন বলে। বাংলাদেশের ৭৫ ভাগ মানুষ যেহেতু গ্রামে বাস করে, সেহেতু পল্লী উন্নয়নের মাঝেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিহিত। বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের সামগ্রিক উন্নতির উদ্দেশ্যে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে নানামুখী কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বেকারদের কর্মসংস্থানের বিষয়টিও জড়িত। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, যেমন-রাস্তা, বাঁধ, মার্কেট, স্কুল-মাদ্রাসা বিল্ডিং, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইত্যাদিতে সরকারই অধিকতর সক্রিয়। বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামে নির্দিষ্ট টার্গেট গ্রুপ, যেমন-ভূমিহীন, মহিলা ও যুবকদের আয় বৃদ্ধিতে বিভিন্ন রকম সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে গ্রুপভিত্তিক ঋণ বিতরণ, আয় বৃদ্ধিতে কর্মনির্বাচন ও ট্রেনিং প্রদান। এছাড়া, ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপিত তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক কেন্দ্র ‘ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার’ পরিষদকে নতুন মাত্রা প্রদান করেছে। ২০১০ সালের ১১ নবেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয় থেকে এবং নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) এর প্রশাসক মিস হেলেন ক্লার্ক ভোলা জেলার চর কুকরিমুকরি ইউনিয়ন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) একযোগে উদ্বোধন করেন। যার মূল লক্ষ্য হল, ইউনিয়ন পরিষদকে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, যাতে এসব প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের মধ্যে একটি তথ্য ও জ্ঞান-ভিত্তিক দেশ প্রতিষ্ঠায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের ফলে সাধারণ নাগরিকগণ এখন সহজে, কম খরচে ও ঝামেলাহীনভাবে প্রায় ৬০ ধরনের সরকারী-বেসরকারী সেবা পাচ্ছে। আমাদের দেশের পল্লী উন্নয়নে যেসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি জড়িত, সেগুলো হলো কৃষি মন্ত্রণালয়ের দফতরসমূহ, মৎস্য ও পশুপালন দফতরসমূহ, পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড ইত্যাদি। পল্লীর শ্রমজীবী মানুষের উন্নয়নের অংশ হিসেবে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকসমূহ কর্তৃক তাদের স্বনির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা এবং বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংকসমূহের নিট ঋণ ও অগ্রিমের ২% হারে ও সর্বশেষ চালুকৃত ৯টি বেসরকারী ব্যাংকসমূহের মোট নিট ও অগ্রিমের ৫% হারে হিসাবায়ন করে ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরে কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট ৩৪,২৬,১৩০ জন কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন, যার মধ্যে ব্যাংক নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিংকেজের মাধ্যমে মোট ১৫,১৯,৫৭৮ জন নারী প্রায় ৪,৪৮০.৫০ কোটি টাকা এবং প্রায় ২৬ লাখ কৃষক বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১২,০৯৩ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন। এছাড়া ১৪,৯১৬টি প্রকাশ্য ঋণ বিতরণ কর্মসূচীর মাধ্যমে ১.৪৮ লাখ কৃষকের মাঝে প্রায় ৫১৮.৭১ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ প্রকাশ্যে বিতরণ করা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শস্য ও ফসল চাষের ক্ষেত্রে সিআইবি রিপোর্ট ছাড়াই একজন কৃষক সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা ঋণ নিতে পারবেন, পূর্বে এই সীমা ছিল দেড় লাখ টাকা। একই সঙ্গে ঋণের আবেদন ১০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তিকরণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। পল্লীর দরিদ্র মানুষদের উন্নয়নের জন্য অবশ্যই ভাল একটি উদ্যোগ। ২০১০ সাল থেকে সরকার মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে পল্লী এলাকায় রাস্তাঘাট তৈরির ফলে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বার্ড) বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলে মানুষের আর্থ-সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বার্ড কৃষি, সমবায়, দারিদ্র্য, ক্ষুদ্রঋণ, গ্রামীণ ভৌত অবকাঠামো, গ্রামীণ শিল্প, উন্নয়ন যোগাযোগ, সুশাসন, জেন্ডার, পরিবেশ উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষার গুণগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্য-পুষ্টি, সমাজ পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন ফলপ্রসূ গবেষণা এবং কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে।
×