ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবিরোধী লড়াইয়ে ঢাকা দিল্লীকে পাশে চায় ওয়াশিংটন

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৭ আগস্ট ২০১৬

জঙ্গীবিরোধী লড়াইয়ে ঢাকা দিল্লীকে পাশে চায় ওয়াশিংটন

তৌহিদুর রহমান ॥ জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে ঢাকা-দিল্লী-ওয়াশিংটনের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দুই প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও ভারতকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সন্ত্রাস প্রতিরোধের ক্ষেত্র বিস্তৃত করতে চায় ওয়াশিংটন। এই অঞ্চলে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য। সে কারণে আসন্ন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ঢাকা-দিল্লী সফরকালে এ বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাবে। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি আগামী ২৯-৩১ আগস্ট ঢাকা-দিল্লী সফর করবেন। তিনি প্রথমে ঢাকা আসবেন। তারপর ঢাকা থেকে দিল্লী যাবেন। জন কেরির ঢাকা ও দিল্লী সফরের সময় জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের বিষয়টিই প্রাধান্য পাবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি দিল্লী সফরকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও বাংলাদেশের সঙ্গে সন্ত্রাস প্রতিরোধের বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারি অ্যন্টনি ব্লিনকেন ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই অঞ্চলে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের শিকড় গড়ার আগেই আমরা সেটা উপড়ে ফেলতে চাই। সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে দেয়া এক বক্তব্যে ব্লিনকেন এসব কথা বলেন। গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলার পরে বাংলাদেশে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের বিষয়ে প্রাধান্য দিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে ভারতকে সঙ্গে নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র এখানে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ করতে চায়। এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এছাড়া মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই ঢাকায় এসে ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গেও বৈঠক করেন। বৈঠকে ঢাকা-দিল্লী-ওয়াশিংটন একযোগে কিভাবে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে কাজ করতে পারে সেসব বিষয় আলোচনা করেন। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ পর্যবেক্ষণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে আলাদা আলাদা মনোভাব রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব নিয়ে ওই দুটি দেশের মনোভাব আলাদা। বাংলাদেশে আইএস বা আল কায়েদার সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমত নয় বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রকেও একাধিকবার সেটা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একই মনোভাব পোষণ করে আসছে প্রতিবেশী ভারত। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হয়েছে, শুরু থেকেই এখানে যেসব জঙ্গী হামলা হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে দেশী জঙ্গীরা জড়িত। হুজি, জেএমবি, আনসারুল্লাহ, আনসার আল ইসলামসহ বিভিন্ন ব্যানারে জঙ্গীরা কার্যক্রম চালাচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের রক্ষা করতে ও উন্নয়নে বাধা দিতেই তারা এসব করছে। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বেশিরভাগ হামলাকারী চিহ্নিত হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে আইএস নিয়ে একমত না হলেও যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস প্রতিরোধে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে ইতোমধ্যেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জন কেরির আসন্ন ঢাকা ও দিল্লী সফরকালে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের আলোচনা প্রাধান্য পাচ্ছে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ প্রশ্নে যেসব বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত নয়, সেসব বিষয়ও আলোচনায় আসবে। এ বিষয়ে ঢাকা ও দিল্লীর সঙ্গে একই প্লাটফর্মে আসতে চায় ওয়াশিংটন। একই প্লাটফর্মে থেকে জঙ্গী ও সন্ত্রাবাদ প্রতিরোধ জোরদার করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের লড়াইয়ে বাংলাদেশ ও ভারতকেই পাশে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কেননা এই অঞ্চলে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে এই দুটি দেশই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। সে কারণে এই অঞ্চলে বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক চায় দেশটি। হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার পরে ঢাকায় এসেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। তিনি ঢাকা থেকে ফিরে গিয়ে নিজ দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ সফর নিয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করেছেন। সেই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে মার্কিন প্রশাসনকে বিস্তারিত অবহিত করেছেন তিনি। বাংলাদেশে জঙ্গী ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞ সহযোগিতা দেয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন নিশা দেশাই। জন কেরির আসন্ন ঢাকা সফরের সময় জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশকে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে সহযোগিতা বাড়াতে চায়। দেশটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে সহযোগিতা দেবে। মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই ইতোমধ্যেই বলেছেন, আগামী ২০১৭ সালের অর্থবছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাজেট বাড়ানোর জন্য সুপারিশ করেছে। আগামী বছরের জন্য এই অঞ্চলে ২০৭ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এই অর্থ যেসব খাতে ব্যয় হবে তার মধ্যে অন্যতম খাত হলো জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ। গত পহেলা জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলায় ২০ দেশী-বিদেশী নাগরিক নিহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন জন কেরি। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বলে প্রেসিডেন্ট ওবামার পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন তিনি। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত বছর কেরিকে ঢাকা আসার আমন্ত্রণ জানান। সে সময় তিনি শীঘ্রই আসবেন বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী। সে অনুযায়ী ঢাকা আসছেন জন কেরি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জন কেরির এটি প্রথম ঢাকা সফর। এছাড়া বিগত পাঁচ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এটি দ্বিতীয় ঢাকা সফর। এর আগে ২০১২ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন। সে সময় হিলারি বাংলাদেশ সফর শেষে ভারতেও গিয়েছিলেন।
×