ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাফিজ বিন রহমান

চলচ্চিত্রে নজরুল

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১৮ আগস্ট ২০১৬

চলচ্চিত্রে নজরুল

নজরুল ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘নজরুলের জীবনবোধ ও চিন্তাধারা’ গ্রন্থে তাহা ইয়াসিন লিখেছেন, ‘কবি, সাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক, রাজনীতিক, বৈজ্ঞানিক সকলে একটা নির্দিষ্ট সময়ের চিন্তাকে ধারণ করেন। কোন একটি জাতির অভ্যন্তরে ঐতিহাসিক বিকাশের কাল পর্বে সার্বিক মুক্তির আকাক্সক্ষায় তাঁরা জেগে ওঠেন। এ অবস্থায় যখন প্রতিনিয়ত সংগ্রাম চলতে থাকে তখন সেই জাতির মধ্য থেকে বহু সংগ্রামী সৃষ্টিশীল মানুষের জন্ম হয়।’ ঠিক তেমনি ব্রিটিশের শাসনের নামে শোষণ, বিচারের নামে প্রহসন, প্রতিশ্রুতির নামে যখন ভারতবর্ষে চলছিল প্রতারণা, সেই বিভীষিকাময় পরিবেশে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। স্বদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তিনি রচনা করলেন এমন অগ্নিসাহিত্য, আগ্নেয়গিরির মতো যে সাহিত্যের লাভায় পুড়ে যেতে থাকল অত্যাচারীর সিংহাসন। কবিতা, গান, প্রবন্ধ, নাটকসহ চলচ্চিত্র বিনির্মাণেও তিনি অপার মেধার প্রকাশ ঘটান। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস গ্রন্থে’ গবেষক অনুপম হায়াত লিখেছেন, ‘চলচ্চিত্রে কাজী নজরুল ইসলামের উপস্থিতি একজন চিত্র পরিচালক, কাহিনীকার, সুরকার, গীতিকার এবং অভিনেতা হিসেবে।’ সাহিত্যের সকল শাখায় সফল কাজী নজরুল ইসলাম চলচ্চিত্রেও দারুণ সফলতা প্রদর্শন করেছেন। সত্যেন্দ্রনাথ দে এর সঙ্গে যৌথভাবে কাজী নজরুল তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘ধ্রুব’ এর পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এই চলচ্চিত্রে তিনি ‘নারদ’ এর ভূমিকায় অভিনয় করেন। এই সিনেমার গীত রচনা, সুর সংযোজনসহ সঙ্গীত পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। আধুনিক সিনেমাতে এক এক সেক্টরে এক একজন বিশেষজ্ঞ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু নজরুল তাঁর কুশলী চিন্তা ও সৃষ্টিশীল মানসিকতা দিয়ে একাই ‘ধ্রুব’ সিনেমাকে প্রদর্শন উপযোগী করে তোলেন। কবি নজরুল এই চলচ্চিত্রে একক কণ্ঠে তিনটি গান করেন এবং দ্বৈত কণ্ঠে মাস্টার প্রবোধের সঙ্গে একটি গান করেন। ‘ধ্রুব’ মুক্তি পায় ১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি। ১৯৩৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘পাতালপুরী’ ছবিতে নজরুল গান রচনা করেন। এরপর ১৯৩৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গ্রহের ফের’ ছবির সঙ্গীত পরিচালনাও করেন। রবীন্দ্রভক্ত নজরুল রবীন্দ্র সঙ্গীতকে ‘গোরা’ সিনেমায় প্রথম সংযোজন করেন। এটি ১৯৩৮ সালের ঐতিহাসিক ঘটনা। একই সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বিদ্যাপতি’ সিনেমার কাহিনী লেখেন নজরুল। এ ছবির গানের সুরকারও ছিলেন তিনি। এছাড়াও নজরুল বিদ্যাপতি (হিন্দী), সাপুড়ে (বাংলা), সাপেড়া (হিন্দী), নন্দিনী, চৌরঙ্গী (হিন্দী ও বাংলা), দিকশূল, অভিনয় নয় প্রভৃতি সিনেমার রূপকার হিসেবে নিজেকে চিত্রিত করেন। অমর কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত কবিতা, গান, নাটক দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি ও মানব মনের অব্যক্ত অভিপ্রায় প্রকাশে শুধু বাংলা সাহিত্য নয়, বিশ্ব সাহিত্যেও অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তেমনি তার অভিনীত ও পরিচালিত সিনেমা দর্শকমন জয় করতে সক্ষম হয়েছে।
×