ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

দ. আফ্রিকার রাজনীতির উদীয়মান নক্ষত্র

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১০ আগস্ট ২০১৬

দ. আফ্রিকার রাজনীতির উদীয়মান নক্ষত্র

এমমুসি মেইমেন দক্ষিণ আফ্রিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করেন। ইতোমধ্যে তিনি দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনের উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অতি সম্প্রতি সে দেশে পৌর নির্বাচন হয়ে গেছে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মস্ত ওলটপালট ঘটার পথ সুগম হয়ে গেছে এবং বার বার সামনে চলে আসছে এমমুসি মেইমেনের নাম। দক্ষিণ আফ্রিকায় শাসন ক্ষমতায় রয়েছে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)। ১৯৯৪ সালে বর্ণবাদ ও বর্ণবাদী শাসনের অবসান ঘটার পর থেকে এই দলটি অবিচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় আছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে দুর্নীতির বেশ কিছু কেলেঙ্কারি, সরকারের অব্যবস্থাপনা ও অপশাসন এবং অর্থনীতির অধপতনের কারণে প্রবাদপুরুষ নেলসন ম্যান্ডেলার এই দলটির জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। অন্যদিকে এর পাশাপাশি জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্ববৃহৎ বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক এ্যালায়েন্সের (ডিএ)। আর এই দলটিরই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নেতা হলেন এমমুসি মেইমেন। বর্ণবাদের অবসানের পর থেকে দেশে যত নির্বাচন হয়েছে প্রতিটি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক এ্যালায়েন্সের (ডিএ) ভোট বেড়েছে। বর্তমানে পার্লামেন্টের ২২ শতাংশ আসন এই দলটির দখলে। তবে আগামী নির্বাচনে দলটিকে চমক লাগানোর মতো কিছু করতে হলে অনেক কিছু করতেও হবে। ডেমোক্র্যাটিক এ্যালায়েন্স বর্ণবাদবিরোধী সংগঠন প্রগ্রেসিভ পার্টি নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৫৯ সালে মূলত শ্বেতাঙ্গ উদারপন্থীদের দল হিসেবে। কিন্তু সে দেশের জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ সেখানে নির্বাচনী সাফল্য অর্জনের জন্য দলটিকে প্রমাণ দিতে হবে যে এর শিকড় শ্বেতাঙ্গ গোষ্ঠীকে ছাড়িয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যেও ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে গেছে। স্মরণ করা যেতে পারে যে ২০১৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডিএ মাত্র ৬ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ভোট পেয়েছিল। মেইমেনকে জিততে হলে ব্যাপক কৃষ্ণাঙ্গ ভোট ছাড়াও বর্ণবাদের অবসানের পর জন্ম নেয়া কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের ব্যাপক সমর্থনও বাগাতে হবে। কারণ এবারই ১৯৯৪ সালের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ার কারণে ক্রমবর্ধমান হারে হতাশাগ্রস্ত ও ক্ষুব্ধ। ক্ষুব্ধ হওয়ার সঙ্গত কারণও আছে। বর্ণবাদের অবসানে যে নতুন রাজনৈতিক স্বাধীনতার উন্মেষ ঘটেছিল তা তাদের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটাতে পারেনি। অর্থনীতির উন্নতির বদলে অবনতি ঘটেছে। জনগোষ্ঠীর মধ্যে আয়-অসমতা বিশ্বের সর্বাধিক এবং সেটা শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষেত্রেই বেশি প্রকট। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত প্রতি ১০ জন দক্ষিণ আফ্রিকানের ৯ জনই কৃষ্ণাঙ্গ। শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় গড়ে ৬ গুণ বেশি আয় করে। কৃষ্ণাঙ্গদের অভিযোগ তাদের বেশিরভাগের বাস শহরতলিতে যেখানে এখনও রয়েছে পিট ল্যাট্রিন, সেখানে বিদ্যুত নেই, চিকিৎসার ভাল ব্যবস্থা নেই, শুধু আছে দারিদ্র্যের অভিশাপ ও কষাঘাত। কৃষ্ণাঙ্গদের এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে মেইমেন নির্বাচনী সাফল্য পেতে চান। তবে একটু জটিলতাও আছে। ডেমোক্র্যাটিক এ্যালায়েন্সের কৃষ্ণাঙ্গ প্রধান বলেই যে তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের ব্যাপক ভোট টানতে পারবেন এমন মনে করার কারণ নেই। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তো তাকে শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের কাছে আত্মবিক্রীত কৃষ্ণাঙ্গ বলে আখ্যায়িত করে থাকে। বলে যে মেইমেন শ্বেতাঙ্গদের হাতের পুতুল। এটার মোকাবেলা করতে গিয়ে মেইমেন তার নিজের কৃষ্ণাঙ্গ সত্তাটিকে বার বার টেনে আনেন যা খুব কম রাজনীতিকই করে থাকেন। তথাপি তিনি এ কথাও জোর দিয়ে বলতে ছাড়েন না যে বর্ণগত বিভেদের ওপর অতিমাত্রায় দৃষ্টি নিবন্ধ করার সুযোগেই এএনসি দেশের আসল সমস্যাগুলোকে পাশ কাটিয়ে যেতে পেরেছে। আর এভাবেই এএনসি সমাজকে বর্ণগতভাবে বিভাজন করে ফেলেছে। গত বছর মে মাসে দলের ৯০ ভাগ সদস্যের ভোটে ডিন প্রধান হিসেবে নির্বাচিত মেইমেন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজে বিদ্যমান অসাম্য লাঘবের অঙ্গীকার করেছেন। তিনি সুশাসন প্রতিষ্ঠার এবং দুর্নীতির রাশ টেনে ধরার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন মাথাভারি প্রশাসন সমাজের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কারণে সরকারের অবয়ব কাটছাঁট করতে হবে। তিনি নিজেকে ম্যান্ডেলার উত্তরাধিকার বলতে রাজি নন। বলেন এটা অনেক বাগাড়ম্বরময় উক্তি। তবে অঙ্গীকার করেছেন যে ম্যান্ডেলার দৃষ্টিকল্প ‘রঙধনু জাতি’ গড়ে তোলার স্বপ্ন পূরণে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×