ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুশব্যাক করা হবে

অবৈধ অবস্থান ॥ মিরপুরে ৪৪ নেপালী আটক

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৬ আগস্ট ২০১৬

অবৈধ অবস্থান ॥ মিরপুরে ৪৪ নেপালী আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএসের ৭ নম্বর সড়কের ১০৬০ নম্বর বাসা থেকে ৪৪ নেপালি নাগরিককে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে আটকের পর তাদের ওই বাড়িতে বন্দী রাখা হয়। পুলিশ জানায়, সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী পল্লবীর আটককৃত ওই নেপালি নাগরিকদের পুশব্যাক করা হবে। যদি ফেরত না পাঠানো যায় তাহলে ফরেন এ্যাক্টে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। পল্লবী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মইনুল কবির জানান, সকালে ডিওএইচএসের ওই হোল্ডিংয়ের সাত তলা ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাট থেকে তাদের আটক করা হয়। ওই ভবনে তাদের পুলিশ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আটককৃতরা সবাই পুরুষ। তাদের ভিসার মেয়াদ বহু আগেই শেষ হয়েছে। এ জন্য তাদের আটক করা হয়েছে। এছাড়া আর কোন বিষয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে নেপাল দূতাবাসসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দূতাবাসের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছি। তাদের বক্তব্য পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। ওসি তদন্ত জানান, তাদের যিনি বাসাভাড়া নিয়ে দিয়েছিলেন আদম ব্যবসায়ী অলি উল্লাহকে আটক করা হয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। সরকারী তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে বৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকের সংখ্যা সোয়া দুই লাখের মতো। এর বাইরে প্রায় ১০ হাজার বিদেশীর ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বলে পুলিশের তথ্য। নাইজিরিয়া, উগান্ডা, ঘানা, আলজিরিয়া, ক্যামেরুন ও লাইবেরিয়ার মতো আফ্রিকান দেশ থেকে আসা অনেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ২০১৪ সালে তালিকা করে অভিযান শুরুর উদ্যোগ নেয় গোয়েন্দা পুলিশ। সে সময় শতাধিক বিদেশী নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে যে বিদেশী নাগরিকদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের একটি বড় অংশ খেলোয়াড় হিসেবে অথবা স্টুডেন্ট ভিসায় এ দেশে এসে আর ফিরে যাননি। এদিকে মিরপুরে ডিওএইচএস পরিষদের কর্মকর্তা কাজী এলেম হোসেন জানান, নেপালিদের সব তথ্য বাড়ির মালিক পুলিশকে দিয়েছেন। আইনী প্রক্রিয়াতেই বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি জানান, গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর মিরপুর ডিওএইচএস পরিষদ ওই এলাকা থেকে সব মেস বাসার ভাড়াটিয়াদের বাসা ভাড়া না দেয়ার জন্য বাড়িওয়ালাদের চিঠি দিয়ে অনুরোধ করে। এরপর গত ২৯ জুলাই ডিওএইচএস ৭ নম্বর সড়কের ১০৬০ নম্বর বাসার মালিক ব্রিগেডিয়ার (অব) আশরাফুল ইসলাম খান তার বাসা থেকে ৪৭ নেপালিকে বাসা ছেড়ে চলে যেতে বলেন। কিন্তু ১ আগস্ট তারা বাসা ছাড়েনি। এর ফলে বাড়ির মালিক বিষয়টি পরিষদকে ফের জানান। পরে ডিওএইচএস পরিষদ বিষয়টি পল্লবী থানাকে জানায়। এরপরই বৃহস্পতিবার পল্লবী থানা পুলিশ ওই বাড়িতে যায়। এর আগে তিন নেপালি চলে যান। তাদের তিনজনের ভিসার মেয়াদ থাকায় তারা যেতে পেরেছেন বলে পুলিশ জানায়। পুলিশ জানায়, মিরপুর ডিওএইচএসে আটক ৪৪ নেপালি বনানীর একটি হোটেলে কাজ করতেন। দুটি শিফটে ভাগ হয়ে তারা কাজ করতেন। গাড়িতে করেই তাদের আনা-নেয়া করা হতো। তারা বাসার বাইরে তেমন বের হতেন না। বাংলাদেশে ওয়ালিউল্লাহ নামে তাদের এক এজেন্ট আছেন। তিনি আদম ব্যবসা করেন বলে জানা গেছে। তাকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, চলতি বছরের ২ মে বেনাপোল বর্ডার দিয়ে এই ৪৭ নেপালি নাগরিক বাংলাদেশে আসেন। এরপর বাংলাদেশী নাগরিক ওয়ালিউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ২২ মে তারা ডিওএইচএসের ৭ নম্বর রোডের ১০৬০ নম্বর বাসায় ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। বাসার মালিক ব্রি. জে. (অব) আশরাফুল ইসলাম। তাদের মধ্যে অনেকে কয়েকদিন কলাবাগানের একটি বাসাতেও ছিলেন। পুরো ভবনটিতেই তারা ছিলেন। তারা ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। তবে ১৯ জুন তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ওয়ালিউল্লাহর কাছে সবার পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলেন। তবে কারও পাসপোর্ট তিনি ফেরত দেননি। ডিওএইচএসের ৭ নম্বর রোডের সাত তলা ভবনে দুই ইউনিট। এখানে মোট ১২টি ফ্ল্যাট আছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটেই এই নেপালি নাগরিকদের থাকতে দেয়া হতো। ওই বাড়ির কেয়ারটেকার জালাল মিয়া পুলিশকে জানায়, ২২ মে একটি বাসে করে ডিওএইচএস গেটে নেমে হেঁটে এই বাসায় আসেন। ওয়ালিউল্লাহ নামে এক ব্যক্তি এই বাসাটি আমার স্যারের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছেন। তাদের সব কাগজপত্র স্যারের কাছে দেয়া আছে। তবে ডিওএইচএস পরিষদ মেসবাসা ভাড়া না দেয়ার অনুরোধ করলে, স্যার মেসবাসা তুলে দেন। এ সময় স্যার বাড়ির মালিক ব্রিগেডিয়ার (অব) আশরাফুল) নেপালিদের সবাইকে গত ২৯ জুলাই বাসা ছেড়ে চলে যেতে বলেন। তাদের ১ আগস্ট চলে যাওয়ার কথা থাকলেও যাননি। কারণ তাদের কারও ভিসার মেয়াদ নেই। গত জুলাই মাসে তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তিনজনের মেয়াদ থাকায় তারা বৃহস্পতিবার চলে যান। বাকিরা এখানেই আছেন। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ আসে। তাদের আটক করে নিয়ে যায়। জালাল মিয়া আরও বলেন, নেপালিরা হিন্দী এবং উর্দুতে কথা বলে। আমি তাদের সঙ্গে উর্দুতে কথা বলতাম। আমি উর্দু একটু একটু পারি। শুনেছি বনানীর একটি ক্লাবে তারা কাজ করে। গত কয়েকদিন ধরে তারা সেখানে যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ওয়ালিউল্লাহর বাড়ি কুমিল্লাতে। সেই বাড়িটি ভাড়া নিয়েছে স্যারের কাছ থেকে। তবে কত টাকা ভাড়া তাও জানি না। বাড়িটির দায়িত্ব পালনকারী নিরাপত্তাকর্মী হাছান জানান, তিনি আজই প্রথম এই বাড়িটিতে দায়িত্ব পালন করতে এসেছেন। বাড়ির মালিক মিরপুরের একটি বাসাতে ভাড়া থাকেন। এখানে তাকে কখনও দেখেননি।
×