ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জেলায় জেলায় উপবৃত্তির অর্থ আত্মসাত, কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৫ আগস্ট ২০১৬

জেলায় জেলায় উপবৃত্তির অর্থ আত্মসাত, কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি

বিভাষ বাড়ৈ ॥ জেলায় জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের উপবৃত্তির টাকা লোপাটে জড়িয়ে পড়েছেন প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। এ পর্যন্ত অন্তত ২০ জেলার ২৫ উপজেলায় শিশুদের এ অর্থ নিয়ে রীতিমতো হরিলুট শুরুর তথ্য এসেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। প্রতিদিনই অভিযোগ আসছে মন্ত্রী ও সচিবের দফতরে। অভিযোগের তথ্য সমন্বয় করার পর বেরিয়ে আসা চিত্রকে ‘উদ্বেগজনক ও ভয়াবহ’ অভিহিত করে কর্মকর্তারা বলেছেন, শিশুদের অর্থ লুটপাটের এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। কোন দুর্নীতিবাজ শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্য রেহাই পাবে না। যদি কোন শিক্ষা কর্মকর্তা অপরাধীদের রক্ষা করতে চান তাকেও ছাড় দেয়া হবে না। এদিকে উপবৃত্তির টাকা লোপাটের ঘটনায় অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে বেশকিছু জেলা ও উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। মানববন্ধনসহ নানান কর্মসূচীও শুরু করেছেন অভিভাবকরা। জনরোষে পড়ে কয়েক উপজেলায় প্রকাশ্যে দায় স্বীকার করে টাকাও ফেরত দিয়েছেন কোন কোন প্রধান শিক্ষক। তবে দুর্নীতিবাজ এসব শিক্ষকের কেবল বদলি নয়, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি উঠেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। জানা গেছে, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের অনিয়ম তদন্ত করে দায়ীদের চিহ্নিত করতে ১১ কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যেই দায়িত্ব দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশে পুরো ঘটনা দেখছেন সচিব মোঃ হুমায়ুন খালেদ। তিনি কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে শক্ত অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ২০ জেলার ২৫ উপজেলায় উপবৃত্তির টাকা বিতরণের অনিয়ম তদন্তে ১১ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রণালয় বলছে, কর্মকর্তাদের সরেজমিন তদন্ত শেষে অনিয়মের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে ভবিষ্যত করণীয় নির্ধারণে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন গণশিক্ষা সচিবের কাছে জমা দিতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্পের (তৃতীয় পর্যায়) টাকা বিতরণে সারাদেশে ব্যাপক অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভিযোগ ওঠেছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ নানান অজুহাতে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা কেটে রাখছে। এছাড়া উপবৃত্তির কার্ডে স্বাক্ষরের জন্যও অর্থ নেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কেএম রুহুল আমীনকে মাদারীপুরের কালকিনি, ফরিদপুরের নগরকান্দা ও শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের অনিয়ম তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। উপসচিব নেছার আহমদ রংপুরের পীরগাছা ও বদরগঞ্জ, কুড়িগ্রামের রৌমারী, উপসচিব গোপাল চন্দ্র দাশ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও সিদ্দিরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার অনিয়ম তদন্ত করবেন। উপসচিব তানভীর আহমেদ সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, সত্যকাম সেন কুমিল্লার মুরাদনগর ও নাঙ্গলকোট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় অনিয়ম তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন। জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব রেবেকা সুলতানা জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, টাঙ্গাইলের নাগরপুর, জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধান কাজী মোখলেছুর রহমান ময়মনসিংহের ভালুকা, ত্রিশাল, নেত্রকোনার মদন এবং সহকারী সচিব মোঃ রেজাউল করিম মেহেরপুর সদরের উপবৃত্তির টাকা বিতরণে অনিয়ম তদন্ত করবেন। এছাড়া সহকারী সচিব মিজানুর রহমানকে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেনকে পটুয়াখালীর বাউফল, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া, বরগুনার বেতাগী উপজেলায় তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দিন খান সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় অনিয়ম তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন। প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ৫০ টাকা ও প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ১০০ টাকা করে উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে প্রাথমিকের শতভাগ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী এক কোটি ৯৫ লাখ ৫২ হাজার ৯৭৯ জন। আর প্রাক-প্রাথমিকে পড়ালেখা করছে ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ৪৬০ জন। জেলায় জেলায় অভিযোগ, অর্থ লোপাট, ক্ষোভ ॥ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মাদারীপুর জেলার কালকিনি, ভোলার তজুমদ্দিন, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া, কুমিল্লা, কুষ্টিয়াসহ কিছু জেলা ও উপজেলায় প্রধান শিক্ষকরা সরাসরি অর্থ লোপাটে জড়িয়ে পড়েছেন বলে তথ্য এসেছে। গণমাধ্যম ও এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণায়ের কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন। কয়েকটি এলাকায় প্রধান শিক্ষক অপারাধ স্বীকার করে টাকাও ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না হলে অসন্তোষ কমবে না বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাই। ভোলার তজুমদ্দিন ॥ জেলার তজুমদ্দিনে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি বিতরণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ এসেছে মন্ত্রণালয়ে। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা মনিটরিং কর্মকর্তা বরাবর শিক্ষার্থী অভিভাবকদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। চাচড়া কাটাখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাসিমা আক্তার উপবৃত্তির কার্ড বিতরণকালে স্কুলের উন্নয়ন ফান্ড ও শিক্ষা অফিসের নামে ৫০ থেকে ২০০ টাকা করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করেনÑ এমন অভিযোগ তদন্তে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। মাদারীপুরের কালকিনি ॥ মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ৩৬নং নবগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হালদার রানী বালার বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা প্রদানে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এতে ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ৩৬নং নবগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তিপ্রাপ্ত ৩৬৪ জন ছাত্রছাত্রীদের মাঝে এক হাজার ২০০ টাকা করে দেয়ার কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষিকা হালদার রানী বালা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ৬০০ টাকা করে প্রদান করেন এবং বাকি টাকা তিনি আত্মসাত করেন বলে অভিভাবকরা লিখিত অভিযোগ করেন। ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরা ডিজি, জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, আমরা উপবৃত্তির টাকা ১২শ’ করে না পেয়ে ৬শ’ টাকা করে পেয়েছি। ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর জনরোষে পড়ে প্রধান শিক্ষক দায় স্বীকার করে কিছু টাকা ফেরত দিয়েছেন। তবে তার অপসারণসহ কঠোর শাস্তির দাবিতে অসন্তোষ বাড়ছে এলাকাজুড়ে। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ॥ ধোবাউড়ায় একাধিক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্রছাত্রীদের ১ বছরের ১২শ’ টাকা বিতরণের কথা থাকলেও ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বিতরণ করছেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা। ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। তারা অভিযোগ করেন, ছাত্রছাত্রীদের থেকে কার্ড নিয়ে এক হাজার ২০০ টাকার বদলে ৭০০ টাকা দিয়েছেন। অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেছেন, আমাদের কার্ড নিয়ে টাকা দেননি। যে কয়েকজনকে দিয়েছেন তাও কম। জামালপুরের সরিষাবাড়ী ॥ সরিষাবাড়ীতে রুদ্র বয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে ৮টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তির টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের যোগসাজশে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বিতরণে অনিয়ম করার অভিযোগ পাওয়া যায়। পোগলদিঘা ইউনিয়নের রুদ্র বয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এবার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হয়। উপবৃত্তির টাকা বিতরণের বিদ্যালয়গুলো হলোÑ পূর্ব-বয়ড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবিন্দনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, তারাকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুঠিয়ারপাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া আছে বগারপাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিন্নাফৈর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবিন্দপটল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম পোগলদিঘা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের যোগসাজশে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রতি শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির ৩০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত কেটে রেখে বিতরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ॥ নাঙ্গলকোট উপজেলার বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যলয়ে উপবৃত্তির টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিভাবকদের অভিযোগ ময়ূরা, আলীয়ারা, হেসাখাল ও ভাতড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা থেকে বিভিন্ন অজুহাতে প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ২০ থেকে ৩০ টাকা করে কেটে রাখছেন প্রধান শিক্ষকরা। আবার কেউ কেউ বঞ্চিত হয়েছে এই উপবৃত্তির টাকা থেকেই। ময়ূরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক অভিভাবক জানান, তারা উপবৃত্তির টাকার জন্য গেলে শিক্ষকরা বলেন, আপনার ছেলে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণে প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ২০ থেকে ৩০ টাকা করে কেটে নেয়া হয়েছে। এলাকার প্রভাবশালী ও বিদ্যালয়ের সদস্যদের ছেলেমেয়েদের উপবৃত্তির সব টাকা দেয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ॥ আখাউড়ায় উপজেলার টনকী সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তির টাকা বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তাদের প্রাপ্য টাকা আদায়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কক্ষ ঘেরাও করে রাখেন। ঘটনায় অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। আখাউড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আলীম রানা অভিভাবকদের বলেছেন, বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি। অভিযোগ সত্য হলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিলেটের জগন্নাথপুর ॥ এ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপবৃত্তির টাকার জন্য শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, উপবৃত্তির জন্য এবার উপজেলার ১৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই কোটি ১৮ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে ওই টাকা বিতরণ করার কথা থাকলেও অভিভাবকরা জানিয়েছেন টাকা বিতরণে কিছু কিছু বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। কুষ্টিয়ার কুমারখালী ॥ কুমারখালীতে উপবৃত্তির টাকা বিতরণে অনিয়মের কথা জানতে পেরেছে মন্ত্রণালয়। অনেক শিশুকে অর্ধেক টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া এক হাজার ২০০ টাকার খাতায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। উপজেলার নন্দলালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তির টাকা নিতে আসা শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা অভিযোগ করেন। অভিভাবকরা জানান, নন্দলালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক হাজার ৪৫৪ ছাত্রছাত্রীর মাঝে মোট ১৮ লাখ ৫০০ টাকার উপবৃত্তি বিতরণ করা হয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আরও অভিযোগ করেন, উপবৃত্তি টাকা নেয়া জন্য শিক্ষার্থীদের ৫০ থেকে ১০০ টাকা হারে স্কুল কর্তৃপক্ষ আদায় করেছে। পটুয়াখালীর বাউফল ॥ বাউফলে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কার্ডের পরিবর্তে ৩০ টাকার বিশেষ সিøপের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের চেষ্টা করা হয়েছে। দাশপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুল, উত্তর পূর্ব দাশপাড়া আমিনা খাতুন, দাশপাড়া খেজুর বাড়িয়া সংলগ্ন প্রাইমারী স্কুলসহ মোট ৫টি স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা প্রদান করায় অভিযোগ উঠেছে। ময়মনসিংহের গফরগাঁও ॥ এ উপজেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বিতরণে ব্যাংক কর্মকর্তা ও স্কুল প্রধানদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের গফরগাঁও উপজেলার ২৩৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা ১৩ জুলাই থেকে বিতরণ শুরু করে সোনালী ব্যাংক গফরগাঁও শাখা। সে মোতাবেক উপজেলার পাঁচবাগ ইউনিয়নের চরশাখচূড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬২৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে সুবিধাভোগী ৫৭৩ জনের মধ্যে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হয়। অভিভাবকদের অভিযোগ, চরশাখচূড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সারোয়ার আলম টাকা বিতরণের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক টাকা কেটে রাখেন। এ সময় উত্তেজিত অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সারোয়ার আলমকে কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। ফরিদপুরের নগরকান্দা ॥ নগরকান্দা উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বিতরণে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কতিপয় ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা ভুয়া মাস্টার রোল তৈরি করে এবং নানা খরচের কথা বলে উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কক্সবাজারের চকরিয়া ॥ উপজেলার ছিটমহল খ্যাত ৪নং বমু বিলছড়ি ইউনিয়নে ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি টাকা প্রদানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। একই অভিযোগ উঠেছে ২০ জেলার ২৫ উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে।
×