ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

ইমানুয়েল ম্যাক্রন ফ্রান্সের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট?

প্রকাশিত: ০৭:১০, ২৭ জুলাই ২০১৬

ইমানুয়েল ম্যাক্রন ফ্রান্সের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট?

ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী ইমানুয়েল ম্যাক্রন দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। আগামী বছরের এপ্রিল ও মে মাসে ফ্রান্সে দুই ধাপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এখনও পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে কিছু না শোনা গেলেও লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে যে ৩৮ বছর বয়স্ক ম্যাক্রন তাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ফ্রান্সের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টের মতো গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিতে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। একদিকে সন্ত্রাসবাদের উপর্যুপরি ছোবলে জর্জরিত হচ্ছে ফ্রান্স। তার ওপর আছে বিক্ষোভ, ধর্মঘট, শ্রমিক অসন্তোষ। অর্থনীতিতে একটা স্থবিরতা বিরাজ করছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রায় শূন্য। বেকারত্বের হার ১০ শতাংশের বেশি। আর তরুণদের ক্ষেত্রে এই হার ১৫ শতাংশ। সর্বত্র একটা অস্বস্তি, অশান্তি ও হতাশা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের একটা পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে সবাই। সেই পরিবর্তন ম্যাক্রনের হাত দিয়ে আসবে কি আসবে না সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। রথসচাইল্ডের সাবেক বিনিয়োগ ব্যাংকার এই মানুষটিকে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদই তার মন্ত্রিসভায় নিয়ে এসেছিলেন। ম্যাক্রন দেশের অর্থনীতিকে একেবারে ঢেলে সাজানোর বা খোল নলচে বদলে দেয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে সোচ্চার এবং সে কারণে সৃষ্ট অসন্তোষেরও সবচেয়ে দৃশ্যমান টার্গেট তিনি। অনেকে মনে করেন যে ওলাঁদ তার নোংরা কাজগুলো করানোর জন্যই ম্যাক্রনকে নিয়ে এসেছেন। তাই যদি হয় তাহলে তো ম্যাক্রনের গায়েই যত কাঁদা লাগবার কথা, কিন্তু তা না হয়ে স্বয়ং ওলাঁদের গায়েই বেশি করে কাঁদা লাগছে। ওলাঁদের জনপ্রিয়তার রেটিং ক্রমশ নামতে নামতে ১২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। কয়েক প্রজন্মের মধ্যে কোন ফরাসী নেতার জনপ্রিয়তা এত নিচে নামেনি। অন্যদিকে ম্যাক্রনের জনপ্রিয়তা ওলাঁদের প্রায় দ্বিগুণ। নেতৃস্থানীয় রাজনীতিকদের জনপ্রিয়তা নিয়ে অনেক জরিপ হয়েছে। সেগুলোতে ম্যাক্রনের জনপ্রিয়তা শীর্ষস্থানের কাছাকাছি। ম্যাক্রন কখনও নির্বাচন করেননি। ব্যাংকার থেকে সরাসরি ওলাঁদের স্টাফ হয়েছেন। তথাপি প্রতিটি ম্যাগাজিন ও সংবাদপত্রে সম্ভাব্য পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার ছবি ছাপা হয়েছে। লন্ডনের টাইমস পত্রিকায় এক সাংবাদিক মন্তব্য করেছেন : ‘বহু বছরের মধ্যে এটাই হয়ত হতে যাচ্ছে ফ্রান্সের সেরা খবর।’ ম্যাক্রন যদিও বলেছেন যে তিনি ওলাঁদের প্রতি অনুগত রয়েছে তথাপি ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ওলাঁদের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে যে গুঞ্জন চলছে তা দূর করার ব্যাপারে কিছুই করেননি। ফরাসী রাজনৈতিক ব্যবস্থার সমালোচনাও বন্ধ করেননি। গত এপ্রিলে তিনি ‘এন মার্চ’ নাম দিয়ে তার নিজস্ব রাজনৈতিক দল চালু করেন। অচিরেই সেই দলে ৫৫ হাজার সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কোন কেবিনেট মন্ত্রীর দিক থেকে এমন একটা পদক্ষেপ রীতিমতো বিস্ময়কর যা সরাসরি ওলাঁদের প্রতি চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ জোরদার হয়ে ওঠে গত ১২ জুলাই যখন ম্যাক্রন প্যারিসে অনুষ্ঠিত দলের প্রথম জনসভায় ভাষণ দেন। অনেকের কাছে এ কজাটা সরকারকে পরিত্যাগ করার নামান্তর। ম্যাক্রন প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়াচ্ছেন এটাই শুধু ঘোষণা করেননি। এটা বাদ দিয়ে অনেক কিছুই বলেছেন। এটাও বলেছেন যে ‘ওলাঁদ আমার ওপর আস্থা রেখেছেন এবং তাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার নেই।’ তথাপি সমস্ত লক্ষণ এই ইঙ্গিত বহন করে যে ম্যাক্রনের চোখ রয়েছে ওলাঁদের পদটির ওপর। কারণ তিনি জনসমাবেশে এমনও বলেছেন : ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ঘটনায় আমার দেশবাসী ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত।’ আরও একটা ব্যাপার এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করার দাবি রাখে। তা হলো বাস্তিল দিবসে ওলাঁদের বার্ষিক ভাষণ দেয়ার কথা ছিল। তার দু’দিন আগে ম্যাক্রন এই জনসভা করলেন। অর্থাৎ এদিক দিয়েও তিনি ওলাঁদকে হারিয়ে দিলেন। ম্যাক্রন নিয়োগ আইন শিথিল করার চেষ্টা করছেন যাতে লোকে দীর্ঘতর সময় কাজ করার এমনকি ধনী হয়ে ওঠার সুযোগ পায়। তার দলের একটা লক্ষ্য হলো ফরাসী রাজনীতির অন্যতম মৌলিক সমস্যার সমাধান এবং সেটা হলো ব্যয়বহুল সুযোগ-সুবিধার ক্রমপ্রসার। ম্যাক্রন বলেন, ফরাসীদের আরও বেশি উৎপাদন করতে হবে। প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ একবার বার্ষিক ১২ লাখ ডলারের ওপর আয় যাদের তাদের ওপর ৭৫ শতাংশ কর ধার্যে প্রস্তাব করেছিলেন। ম্যাক্রন ঘোর আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন যে তা হলে ফ্রান্স ‘সূর্যবিহীন কিউবায় পরিণত হবে।’ ওলাঁদ নিঃশব্দে ওই ধারণাটি বাদ দিয়ে দেন। ম্যাক্রন হেয়ার ড্রেসার ও ড্রাইভিং স্কুলগুলোর মতো নিয়ন্ত্রিত পেশা চালু করার জন্যও কাজ করেছেন। বিক্ষুব্ধ, অস্থির ফ্রান্সে ম্যাক্রন জনগণের সঙ্গে নিজের সংযোগ সাধনের জন্য একটা আন্দোলন গড়ে তোলার প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তার দল ‘এন মার্চের’ হাজার হাজার সদস্য জুন মাসের প্রথম থেকে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জানতে চেয়েছে। রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে তারা কি চান। এই তৃণমূল উদ্যোগ থেকে যেসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে তা প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়ালে ম্যাক্রনের জন্য অমূল্য উপাদান হিসেবে কাজ করবে। এসব কার্যকলাপ থেকে ক্রমবর্ধমানভাবে এই ইঙ্গিত মিলছে যে ম্যাক্রন আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একজন পদপ্রার্থী। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরও অভাব হবে না। সোশ্যালিস্ট প্রার্থীরা তো আছেনই, তার ওপর আছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারাকাজি ও রক্ষণশীল প্রার্থী লে পেন। এদের সঙ্গে ম্যাক্রনের তফাত হলো তিনি লক্ষণীয়ভাবে তরুণ, উচ্চাভিলাষী ও তীক্ষè মেধাসম্পন্ন। চেহারা অতি ঝকঝকে। অনর্গল ইংরেজী বলতে পারেন। বক্তৃতায় প্রায়ই দার্শনিকদের উক্তি টেনে আনেন। তার পারিবারিক জীবনটাও ব্যতিক্রমধর্মী। বিয়ে করেছেন তার চেয়ে ২০ বছরের বেশি বয়সী এক প্রাক্তন হাই স্কুল শিক্ষায়িত্রীকে যার সঙ্গে সেই কিশোর বয়স থেকে তিনি ডেটিং শুরু করেছিলেন। তার রয়েছে ৭টি সৎ নাতি-নাতনি। সূত্র : টাইম
×