ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেরিল লায়ন্স ব্যাংকের পূর্বাভাস;###;দেশের বাজারে এক ভরি স্বর্ণ কিনতে গুনতে হবে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা

স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ডলারে উঠতে পারে

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ১৯ জুলাই ২০১৬

স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ডলারে উঠতে পারে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সঙ্কট থেকে সঙ্কটের পথে হাঁটছে বিশ্ব। নুয়ে পড়ছে অর্থনীতি। তবে বিপরীত পথে হাঁটছে স্বর্ণ বাজার। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দর শুধু বাড়ছেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলতি বছর শেষে স্বর্ণের দর গিয়ে দাঁড়াতে পারে আউন্সপ্রতি (এক আউন্স ২.৪৩ ভরি) ১৫০০ ডলারে। আর ২০২০ সালের মধ্যে তা পৌঁছে যেতে পারে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার ডলারের মধ্যে। সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত শুক্রবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বিশ্ববাজারে এক আউন্স স্বর্ণ বিক্রি হয় ১ হাজার ৩৩৭ ডলার। বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস সত্যি হলে আগামী ৪ বছরের মধ্যে স্বর্ণের দাম বাড়বে প্রায় ৪ গুণ। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সাধারণত স্বর্ণের দর ঠিক করে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি। সমিতির সর্বশেষ তথ্য মতে, দেশের বাজারে বর্তমানে এক ভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ৪৮ হাজার ৩৪৭ টাকা। আর ২১ ক্যারেট স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ৪৬ হাজার ১৮৯ টাকা। পূর্বাভাস অনুযায়ী স্বর্ণের দাম বাড়লে আগামী ৪ বছরে দেশের বাজারেও এক ভরি স্বর্ণ কিনতে গুনতে হতে পারে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা। গালফনিউজের খবরে স্বর্ণের দর বাড়ার এ পূর্বাভাস জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০০৮ সালে বৈশ্বিক মন্দা ও সম্প্রতি ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রশ্নে গণভোটের পর গত মাসেই পণ্যটির দর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। যদিও গত কয়েক দিনে এই উর্ধগতি কিছুটা থিতু হয়েছে। কিন্তু তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টার পর তা আবারও উর্ধমুখিতায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিশ্বে নানা ধরনের অস্থিরতার সঙ্গে সঙ্গে স্বর্ণবাজারের এই অব্যাহত চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা গেছে বছরজুড়ে। আগামী কয়েক বছরে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। গোল্ড সার্ভিস এজির প্রধান নির্বাহী রলফ নিবলি জানান, স্বর্ণ বাজারে এখন মধুমাস চলছে। আগামীতে এ ধারা অব্যাহত থাকার ইঙ্গিত রয়েছে। এ বছর শেষে পণ্যটির দর আউন্সপ্রতি ১৫০০ ডলারের পৌঁছে যাওয়ার চান্স বেশি। তবে বর্তমানের এই ইতিবাচক ধারা নিশ্চিত করে বলা হচ্ছে না। বাজারে অস্থিরতার কথাও ফেলে দেয়ার নয়। তবে দাম যাই থাকুক না কেন- বিশ্ববাজারে পণ্যটি আউন্সপ্রতি ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার ডলারের মধ্যে থাকবে। অর্থাৎ বর্তমানে যেমন বাজার উর্ধমুখী, তেমনই থাকবে। যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদী নিম্ন সুদ হারের দিকে বিশ্ব যেভাবে ঝুঁকছে তার অর্থ- তারল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা আর কমবে না। ফলে স্বর্ণ কেনার প্রবণতা বাড়বে। বিপরীতে বাজারে বাড়তে দর। খবরে বলা হয়, অনিশ্চয়তার মুখে বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের বার, কয়েন- এমনকি অন্যান্য জুয়েলারি পণ্যের মজুদ বেড়ে যায়। সঙ্কট মুহূর্তে অনেক মানুষই স্বর্ণ কেনার দিকে ঝুঁকে পড়েন। এর ফলে পণ্যের দর বাড়তে থাকে। মি. নিবলির মতো প্রায় একই পূর্বাভাস দিয়েছে মেরিল লায়ন্স ব্যাংক। এর আগে ব্যাংকটি এক প্রতিবেদনে জানায়, এ বছরে স্বর্ণের দর আউন্সপ্রতি ১৫০০ ডলারে পৌঁছবে। এতে আরও বলা হয়, সঙ্কট থেকে সঙ্কটের পথে হাঁটছে বিশ্ব। আমরা শুধু ঝুঁকিই দেখছি- যা স্বর্ণবাজারের এই উর্ধগতি ঠেকাতে পারবে না। অবশ্য, চলতি বছরের শুরুতে প্যারিসভিত্তিক ফ্রেঞ্চ ইনভেস্টমেন্ট এ্যান্ড বুলিয়ন ব্যাংক কোম্পানির বিশেষজ্ঞ বার্নার্ড দাহদাহ পূর্বাভাস দেন, এ বছর স্বর্ণের দাম গত বছরের চেয়ে গড়ে ১৪ শতাংশ কম থাকবে। সে হিসেবে বাংলাদেশে এক ভরি স্বর্ণের দাম ভরিতে প্রায় ১০ হাজার কম থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, তার উল্টোটা ঘটছে। অবশ্য তিনি ডলার শক্তিশালী হওয়ার বিষয়টিকেই যুক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন। সুতরাং নতুন এ পূর্বাভাস আসলে কতটা বাস্তবায়িত হবে বা আউন্সপ্রতি স্বর্ণ ৫ হাজারে গড়াবে কিনা- তা এখন নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। এটি আসলে বলে দেবে সময় ও বিশ্ব অর্থনীতি।
×