ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে প্রথম এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তি সই আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৮ জুলাই ২০১৬

দেশে প্রথম এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তি সই  আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল নির্মাণের চূড়ান্ত চুক্তি আজ সই করা হবে। উদ্যোগ গ্রহণের ছয় বছরের মাথায় টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তিটি করা হচ্ছে। ফ্লোটিং স্টোরেজ এ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশনের জন্য (এফএসআরইউ) পেট্রোবাংলা এবং সিঙ্গাপুরভিত্তিক এক্সিলারেট এনার্জি পার্টনারশিপের মধ্যে চুক্তিটি সই হবে। এর আগে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সই করা টার্মশিট অনুযায়ী নয় মাসের মধ্যে সমীক্ষা ও টার্মিনালের নক্সা প্রণয়ন করা হবে। মূল টার্মিনাল নির্মাণে আরও ১৬ সময় প্রয়োজন রয়েছে। এটিই হবে দেশের প্রথম এলএনজি টার্মিনাল, যা প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি রি-গ্যাসিফিকেশন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে পারবে। প্রতিদিন সঙ্কট রয়েছে। বিদ্যুত উৎপাদন-শিল্প এবং অন্যান্য খাতে গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য এলএনজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সরকার। এর বাইরেও আরও দুটি স্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত ৩১ মার্চ পেট্রোবাংলা চুক্তিটি অনুস্বাক্ষর করে। পরে সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এলএনজি টার্মিনালের চুক্তিটি অনুমোদন করে। টার্মিনালটির ধারণ ক্ষমতা হবে দুই লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার। দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি গ্যাসে রূপান্তর বা রিগ্যাসিফিকেশনের জন্য দুই লাখ ৩৮ হাজার ডলার খরচ পড়বে। এর মধ্যে স্থায়ী ব্যয় দৈনিক ধরা হয়েছে এক লাখ ৫৯ হাজার ১৮৬ ডলার, পরিচালনা ব্যয় ৪৫ হাজার ৮১৪ ডলার এবং অন্যান্য ব্যয় ৩২ হাজার ডলার। এই চুক্তি ১৫ বছর বলবৎ থাকবে। প্রতি ইউনিট গ্যাস রিগ্যাসিফিকেশনের জন্য দশমিক ৪১ ডলার লাগবে। অন্যান্য সকল খরচ যোগ করে যা দাঁড়াবে দশমিক ৪৭৪ ডলার। প্রসঙ্গত ২০১০ সালে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরপর দরপত্রসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া এগুলেও কাজ দেয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তীকালে বিদ্যুত জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ আইনে দরপত্রের সর্বনিম্ন দরদাতা এক্সিলারেট এনার্জি পার্টনারশিপকে কাজটি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দরপত্রে প্রতি ইউনিট এলএনজি রি-গ্যাসিফিকেশনের জন্য দশমিক ৩৬ ডলার দাম দর প্রস্তাব করা হয়। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় যা বেড়ে দশমিক ৪৭ ডলার করা হয়। দেশে গ্যাসের বর্তমান মজুদের মাত্র আট টিসিএফ অবশিষ্ট রয়েছে। দেশের মোট প্রমাণিত মজুদ ২০ টিসিএফ। এর মধ্যে ১২ টিসিএফের মধ্যে উত্তোলন করা হয়ে গেছে। দেশের জ্বালানি পরিস্থিতিতে যা বড় শঙ্কার কারণ। সরকার বলছে ২০৩০ সালেই বর্তমান মজুদ শেষ হয়ে যাবে। পেট্রোবাংলা বলছে নতুন ক্ষেত্র না পেলে আর আগামী বছর শেষের দিকে গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন কমতে শুরু করবে। বিকল্প ব্যবস্থা না করলে ২০২০-২২ সালের দিকে সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। গত কয়েক বছরে দেশের স্থলভাগে বড় কোন মজুদের খবর দিতে পারেনি পেট্রোবাংলা। আর বাইরে বাপেক্স যে দ্বিতীয় মাত্রার জরিপ পরিচালনা করছে সেখানেও বড় কোন সুখবরের কথা কেউ বলছেন না। কেবল ভোলার পুরাতন গ্যাস ক্ষেত্রের মজুদ আগের ধারণার চেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই দাবিও কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অতীতে কূপ খননের আগে আগাম গ্যাস আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে বিপাকে পড়েছে বাপেক্স। শুধু নতুন গ্যাস ক্ষেত্রেই নয় পুরাতন গ্যাস ক্ষেত্রেও বাপেক্সের জরিপ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ফলে আমদানি করা এই গ্যাসকেই জ্বালানির চাহিদা পূরণের সব থেকে বড় ভরসা মনে করছে সরকার। জাইকা বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন করেছে তাতেও এসব কথাই বলা হচ্ছে। এই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে বাংলাদেশকে বিদ্যুত উৎপাদনে এলএনজি নির্ভরতা বৃদ্ধি করতে হবে। তার পরিমাণ মোট গ্যাস ব্যবহারের ৭০ শতাংশ হবে। আর দেশীয় গ্যাস ব্যবহার হবে ৩০ শতাংশ। জাইকার করা খসড়া ২০৪১ সাল মেয়াদী মহাপরিকল্পনায় দেখা যায়, কয়লার ব্যবহার অন্তত ১৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এলএনজি সহজে পাওয়া যায়। কয়লার মতো পরিবহন এবং ব্যবহারে কোন ঝামেলা নেই। এছাড়া প্রাকৃতিক গ্যাস হওয়ায় এতে কোন পরিবেশ দূষণও হয় না। যে কারণে এলএনজির প্রতি বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। এজন্য পরবর্তী দুটি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগই জ্বালানির পরিবর্তে বিদ্যুত বিভাগ নিয়েছে। এজন্য আগ্রহীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকাও তৈরি করেছে পাওয়ারসেল।
×