রাজশাহীর সবকিছুই এখন পদ্মাকে ঘিরে। গ্রীষ্ম, শীত, বর্ষা কিংবা শরত, সব ঋতুতেই পদ্মা নদীকে ঘিরে মানুষের আনাগোনা। গ্রীষ্মে শুকিয়ে কাঠ পদ্মা আর বর্ষায় জলে টইটম্বুর সব সময় মানুষকে কাছে টানে। নিয়ে যায় এর নৈসর্গিকতায়। আর উৎসব হলে তো কথাই নেই। প্রতিটি উৎসবে বিনোদন পিয়াসীদের কাছে সেরা ঘোরাঘুরির স্পট হিসেবে প্রথম পছন্দ পদ্মা নদী। ঈদের সময় এ পদ্মার পাড় মুখরিত থাকে বিনোদন প্রেমিকদের পদচারণায়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের ভাললাগার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু বলতে রাজশাহীর পদ্মার পাড়। নদীর প্রবাহমান সেই জোয়ার, কলকলিয়ে পানির শব্দ, মাঝিদের গান সবই আজ অতীত হলেও নদীর কূলে এখনও শুধু তারুণ্যের জয়গান। রাজশাহীর বিনোদনের সব স্রোত মিশে একাকার পদ্মা নদীর তীর ঘিরে। সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে খানিক রাত অবধি পদ্মা নদীর কূলে মানুষের আনাগোনা। আর তারুণ্যের ঢেউ রাজশাহীর পদ্মা নদীর অন্তত ১০ কিলোমিটার জুড়ে। জলরাশির পাশে খানিকটা আনন্দের ঢেউ। শান্তির সুবাতাস। আর ভরা পদ্মার নৈসর্গিক রূপে মানুষের টান থাকে সর্বক্ষণ। সারাদিন হৈ চৈ, আনন্দে মাতামাতি, ছোট ছোট নৌকায় পাড়ি দেয়া এ নিয়ে এখন মুখরিত পদ্মা নদীর পাড়।
নগরীর বুলনপুর থেকে বড়কুঠি ও পঞ্চবটি হয়ে সাতবাড়িয়া। দীর্ঘ প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পদ্মার পাড় এখন রাজশাহীবাসীর জন্য বিনোদনের সেরা ঠিকানা। সকাল নেই, দুপুর নেই, সব সময় পদ্মাকে ঘিরে নতুন প্রাণচাঞ্চল্যে মুখরিত এখন পদ্মার পাড়। পদ্মার ধার ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়ে। উন্নতমানের এ সড়ক দিয়ে সহজেই বিনোদন পিপাসুরা হেঁটে পদ্মার অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পারে।
পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে ব্যবসা-বাণিজ্যও এখন জমে উঠেছে। সারাদিন মানুষের আনাগোনায় মুখরিত নদী পাড়ে তাই গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক বাণিজ্যকেন্দ্র। বুলনপুর এলাকায় ‘আড্ডা’ সেখান থেকে পেরিয়ে সামান্য এগোলেই চোখে পড়ে ‘টি-বাঁধ’। তার পাশেই ছোট পরিসরে পার্ক তৈরি করেছে বিজিবি। এখানে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বহির্নোঙ্গর’ আর ‘সীমান্ত নোঙ্গর’। হাল্কা সব ধরনের খাবারের আয়োজন রয়েছে এখানে। সেই সঙ্গে ছোট ছোট আমবাগানের ফাঁকে ফাঁকে বসার সুরম্য স্থান। সেখানে বসে অনায়াসে নদীর সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। এখানে নদী ভ্রমণে আগ্রহীদের জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে ‘গাঙচিল’ নামের ছোট আকারের নৌকা। রাতের আঁধারে রঙিন নিয়ন আলোয় আরও ফুটে ওঠে এ স্পটের চেহারা। ‘বহির্নোঙ্গর’ আর ‘সীমান্ত নোঙ্গর’ পেরিয়ে অল্প সামান্য হাঁটা পথ পেরুলেই চোখে পড়ে সুদৃশ্য গ্যালারি সমৃদ্ধ মুক্তমঞ্চ। এটি লালন শাহ পার্ক। আঁকাবাঁকা সিঁড়ির মতো সাজানো-গোছানো গ্যালারিতে বসে অনায়াসে দেখা যায় পদ্মার রূপ। বর্ষায় পাল তোলা নৌকার কলকলিয়ে ছুটে চলার অনুপম দৃশ্য। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এ পার্কের দেখভাল করে। এখানে যে কোন বড় অনুষ্ঠানের জন্য রয়েছে বিস্তৃত মুক্তমঞ্চ।
লালন শাহ পার্ক পেরিয়ে অদূরেই রয়েছে হযরত শাহ মখদুম (রহ)-এর মাজার। নদীর পাড় ঘেঁষে এ মাজারের অবস্থান। মাজার জিয়ারত কিংবা পরিদর্শনে এসে এক পলকের দেখা মেলে পদ্মা নদীর। মাজার সড়কের এপারেই নদীর ঘাট পর্যন্ত সুরম্য সিঁড়ি করে দেয়া হয়েছে। বর্ষায় এখান থেকে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় পদ্মার স্বচ্ছ পানি।
মাজার শরীফ থেকে সোজা পূর্বদিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় মানুষের জটলা। তরুণ-তরুণীদের হৈ চৈ। আড্ডা। সঙ্গে পাখির কিচির মিচির শব্দও কানে ভেসে আসে। এটি পদ্মা গার্ডেন। মিনি পার্কও বলা যায় এটিকে। সকাল থেকে বিকেল এ পার্ক তরুণ-তরুণীদের আড্ডায় মুখরিত থাকে। এখানেও রয়েছে ফাস্টফুডের দোকান। ছায়া ঢাকা নদীর পাড় ঘিরে সব বয়সী মানুষের মিলনমেলা এটি। পদ্মা পাড়ের বড়কুঠি ঘিরে গড়ে উঠেছে আধুনিক মানের কয়েকটি হোটেল। চা-কফি কিংবা স্ন্যাকস সবই মেলে হাতের কাছে। আর সুউচ্চ কাঁচের ঘরে বসে নদী দেখতে চাইলে সেখানেই রয়েছে পাঁচতলা কফি বার। কফির কাপে চুমুক আর উঁচু থেকে নদী দেখার সুযোগ মেলে এখানে।
-মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: