ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চির তরুণ সদা অরুণেন্দু

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ২৩ জুন ২০১৬

চির তরুণ সদা অরুণেন্দু

তাঁর সম্পর্কে গৌতম চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন ‘অরুণদা সেই কবেকার আগেকার এক নাগরিক চারণ। আমাদের সব্বার আগে, ঘোড়াদেরও আগে এগিয়েছিল তাঁর গান।’ হ্যাঁ, সেই ১৯৫৬-৬১ সালে হেমন্ত, মান্না, সন্ধ্যা অধ্যুষিত বাংলা গানের জগতে গীটার সহযোগে গান বাঁধতে শুরু করেন অরুণেন্দু দাস। সেসময় তিনি শিবপুর (বি.ই) কলেজের আর্কিটেকচারের ছাত্র, পাশাপাশি শিখছেন গীটারও। গীটার বাজানো শিখতে গিয়েই বিদেশী গানের প্রেমে পড়া এবং নিজে নিজে গান লেখার দুঃসাহস। তাঁর কথামতোই, ‘গানগুলো রচিত হয়েছিল গীটারের ওপর আঙুল চালানোয় পারদর্শিতা অর্জনের উদ্দেশ্যে।’ নতুন ধারার বাংলা গানের ধারণা তখনও ভবিষ্যতের গর্ভে। এরপর ষাটের দশকের শেষে ইংল্যান্ড, তখন বব ডিলানদের ফোক রিভাইভালের অভিঘাতে আচ্ছন্ন গোটা বিশ্ব। অরুণেন্দুও অবিলম্বে হয়ে গেলেন একটি ফোক ক্লাবের সদস্য। তাঁর অধিকাংশ গান এ সময়েই লেখা। ষাটের দশকের প্রথমে তিনিই সর্বপ্রথম বব ডিলানের ‘ইষড়রিহ’ রহ ঃযব রিহফ’ গানের বাংলা করেন ‘আরও কত পথ বলো হাঁটলে মানুষ/তবে সে মানুষ হবে?’, প্রচলিত স্কটিশ প্রার্থনা সঙ্গীত ‘গড়ৎহরহম যধং ইৎড়শবহ’ গানের অনুপ্রেরণায় লিখেছিলেন ‘হল যে প্রভাত’ গানটি, পলি সাইমনের ‘ঋষড়বিৎ হবাবৎ নবহফ রিঃয ঃযব ৎধরহভধষষ’ গানটি অনুবাদ করে বাংলায় গান বাঁধেন ‘ঘুমের আবছা আঁধার পথ, পেরিয়ে চলে ভাবনা রথ’ এ রকম কিছু গান। অরুণেন্দুর গানগুলো (বি.ই) কলেজের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয় তার মামাতো ভাই এবং নিজগুণে বিখ্যাত গীটারশিল্পী প্রশান্ত দে (ওরফে হাবুল। যাঁকে নিয়ে অরুণেন্দু গানও লিখেছিলেন, আগে জানলে কি হাবুল/কেউ করে এমন ভুল)’র হাত ধরে। কলেজে প্রশান্তবাবুর এক বছরের সিনিয়র ছিলেন গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের ভাই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়। সে সময় অরুণেন্দু লং ডিস্ট্যান্স কলে বা চিঠিতে লিখে গান পাঠাতেন আর প্রশান্ত সেই গান তুলতেন গীটার দিয়ে। বিই কলেজের ছাত্রদের মুখে মুখে ঘুরতে থাকা এই অরুণদার গান শুনেই গৌতম চট্টোপাধ্যায় ১৯৮৬-৮৭র কোন সময়ে যোগাযোগ করেন অরুণেন্দুর সঙ্গে। তারই ফলে ১৯৯৫ সাল থেকে ’৯৯ সাল অবধি ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ সম্পাদিত চারটি এ্যালবামে সঙ্কলিত হয় অরুণেন্দুর গানগুলি। আর সে কী সব গান! ‘ভিক্ষেতে যাব’, ‘দিশেহারা যে মোর মন’, ‘গঙ্গা’, ‘যাস কোথা তুই, কীসের এত তাড়া’, ‘তোরা কে কে যাবি রে’, ‘ভালোবাসি তোমায়, তাই জানাই গানে’, ‘সারা রাত’... অথচ এসব গান কোনদিনই নিজে রেকর্ড করেননি অরুণেন্দু। করতে চানওনি। গানকে যিনি চিরকাল মনে করেছেন ব্যক্তিগত। সাধনা তাঁর কীই বা প্রয়োজন প্রকাশিত হওয়ার। ২০০৪ সালে প্রেস্টো স্টুডিও থেকে তাঁর একমাত্র এ্যালবাম ‘অরুণদার গান’ মুক্তি পায়, এ ছাড়া তাঁর গানের আর কোন সঙ্কলন নেই। তবে তিনি লিখেছিলেন এবং গেয়েছিলেন প্রচুর গান। যেগুলোর বেশির ভাগই অপ্রকাশিত রয়ে গেছে।
×