মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ একটা সময় ছিল যখন রাজশাহী নগরীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র ছিল সোনাদীঘি। দীঘির স্বচ্ছ পানি দিয়ে এলাকাবাসী রান্না বান্নার কাজও চালাত। কিন্তু এখন সে সব শুধুই স্মৃতি। সাত বছর আগে এই সোনাদীঘি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনও তার কিছুই হয়নি।
এক সময়ের স্বচ্ছ পানির সোনাদীঘি এখন আর দেখায় যায় না। চারিদিকে গড়ে উঠা একাধিক ভবনের বেষ্টনিতে হারিয়ে গেছে। চারদিকের আবর্জনায় দীঘির পানি পচে পরিবেশ দূষণের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই সোনাদীঘি। এ দীঘির স্বচ্ছ জলে রঙিন শাপলা ফোটানোর কথা থাকলেও কারও নজর নেই সেদিকে। অথচ নগরবাসীর জন্য এ দীঘি হতে পাড়ে আকর্ষণীয় একটি বিনোদন কেন্দ্র। রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার এলাকায় ১ একর ৪৫ শতাংশ আয়তনের জলাশয় এটি।
স্থানীয়ভাবে সেই জলাশয়টিই সোনাদীঘি নামে পরিচিত। এক সময় মানুষ এখানে অবসর সময় কাটাতেন। চারিপাড়ে লোহার ফ্রেমে কাঠের চেয়ার পাতা থাকত। চারধারে ছিল পামগাছ। আর পাড়ে ছিল ফুলের বাগান। দীঘির পানি স্বচ্ছ থাকায় এলাকাবাসী তা রান্নায় ব্যবহার করত। এ জন্য তখন পৌরসভার পক্ষ থেকে সারাক্ষণ পাহারাদার নিযুক্ত ছিল। তারা কাউকে দীঘির পানিতে নামতে দিতেন না। পাড়ে বাঁশের পাটাতন থাকত। তার ওপর থেকে বালতিতে করে পানি তুলতে হতো। তবে এখন এ দীঘির করুণ দশা।
দীঘির পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে সিটি কর্পোরেশন মার্কেট। পশ্চিমে পুরনো সিটি ভবনস্থলে নির্মিত হচ্ছে নতুন সিটি সেন্টার। আর উত্তর-পশ্চিমে রয়েছে সার্ভে ইনস্টিটিউট। এসব স্থাপনার কারণে পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক থেকে দীঘি দেখা যায় না। উত্তর দিকে ছিল ফাঁকা। এখন সেখানেও দোকানপাট উঠেছে। আর চারিদিকের মার্কেটের যত ময়লা আবর্জনা সব গিয়ে পড়ছে এ দীঘিতে। ফলে সৌন্দয্য ম্লান হয়ে এ দীঘি এখন পরিণত হয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে।
জানা যায়, ২০০৯ সালে নগরীর পুরনো সিটি ভবনের স্থলে নতুন করে সিটি সেন্টার নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে বাগমারার সাংসদ এনামুল হকের প্রতিষ্ঠান এনা প্রপার্টিজ দরপত্র জমা দেয়। ১৬ তলাবিশিষ্ট কাজটি এনা প্রপার্টিজই পায়। চুক্তি অনুযায়ী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিটি সেন্টার সংলগ্ন সোনাদিঘির সংস্কার করে দেবে বলেও চুক্তি হয়। এছাড়া পাড়ে একটি মসজিদ, হাঁটার পথ, থিয়েটার ও তথ্যপ্রযুক্তি পাঠাগার করে দেয়ার কথা। সে জন্য পাড়ের দোকানগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সেগুলো সরানো হয়নি। দীঘির পূর্ব পাড়ে যে মসজিদ রয়েছে, সেটির সুয়ারেজের লাইন সরাসরি দীঘির সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ১০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাগানো হচ্ছে। পদাধিকারবলে এই মসজিদ কমিটির সভাপতি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশেদুল হক। তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা ছিল না। তিনি দেখবেন। একইভাবে চারিপাশের ভবন থেকেই পাইপলাইন করে দূষিত পানি ফেলা হচ্ছে ওই দীঘিতে। যেন দেখার কেই নেই। দূষণে দীঘিটি দিনে দিনে আরও নোংরা হয়েছে।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, সিটি সেন্টার নির্মাণের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেছে। তবে তারা কাজ করছেন। দীঘি সংস্কারের বিষয়টি চুক্তিতে রয়েছে। সিটি সেন্টার করার পর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এই কাজটি না করলে সিটি সেন্টার থেকে ফ্ল্যাট নিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া হবে। তবে এনা প্রপার্টিজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সিটি কর্পোরেশনকে একাধিক চিঠি দিয়ে সোনাদীঘির পাড়ের পজিশন (দোকান) ক্লিয়ার করতে বলা হলেও তা করছে না সিটি কর্পোরেশন। এ জন্য সোনাদীঘি সংস্কারের কাজে হাত দেয়া যাচ্ছে না।
দখল হয়ে যাচ্ছে সিলেটের
ফুটপাথ
সালাম মশরুর সিলেট অফিস ॥ ঈদকে সামনে রেখে প্রতিযোগিতামূলকভাবে দখল হচ্ছে ফুটপাথ। মার্কেট শপিংমলে ক্রেতাদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে নগরীতে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। এ নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে দিনভর যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী, হকারও ভ্যানগাড়ি ফুটপাত ও রাস্তার অর্ধেক অংশ দখল করে নেয়ার কারণে যানজট প্রকট আকার ধারণ করছে। রোজার শুরু থেকে নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, জেলরোড, লামাবাজার, চৌহাট্টা, নয়াসড়ক, নাইওরপুল, মিরাবাজার, শিবগঞ্জ, সোবহানীঘাট, আম্বরখানা, ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোড, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ রোড, রিকাবীবাজার, মধুশহীদ, কিনব্রিজের উভয় প্রান্ত, সুরমা মার্কেট পয়েন্টে দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। এ কারণে বাড়ি ফেরার পথে যানজটে আটকা পড়ে অনেককে রাস্তায় ইফতারের সময় পার করতে হয়। নগরীর মধু পয়েন্ট থেকে চৌহাট্টা হয়ে আম্বরখানা ও বন্দরবাজার হয়ে ধোপাদিঘার পার পর্যন্ত দিনভর যানজট নিত্যদিনের সমস্যা। ঈদকে সামনে রেখে কেনা কাটার জন্য অধিকাংশ লোকই একবার হলেও জিন্দাবাজার এলাকায় এসে থাকেন। বেশিরভাগ মার্কেট বিপণিবিতানের অবস্থান হচ্ছে জিন্দাবাজারে। ছোট্ট পরিসরের এই রাস্তায় ফুটপাথ নেই বললেই চলে। বন্দরবাজার থেকে জিন্দাবাজার পর্যন্ত রাস্তার পার্শ্বে ফুটপাত নেই। এর উপর রাস্তাজুড়ে ভাসমান ব্যবসা। হেঁটে পথচলাও কষ্ট সাধ্য। এদিকে গত সপ্তাহে ঢাকঢোল পিটিয়ে সিটি কর্পোরেশন ফুটপাথ দখলমুক্ত করার অভিযানে নেমেছিল। মালামালসহ ভাসমান দোকান সরিয়ে নিয়ে ফুটপাথ দখলমুক্ত করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু সেটা স্থায়িত্ব হয়নি। একদিকে দখলমুক্ত করে অভিযান পরিচালনাকারীরা স্থান ত্যাগ করেছেন অপরদিকে অন্যরা এসে সেইস্থান দখল করে নিয়েছেন। একই সময়ে হকাররা প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতা নিয়ে উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে। এখন ঈদ মৌসুম। হকারদের উচ্ছেদে নামতে সাহস পাবে না সিসিক। এমনিতেই ফুটপাথের চাঁদা বাণিজ্য নিয়মিত বিষয়। তার ওপর বর্তমান ঈদ মৌসুমে রাজনৈতিক দলের নামে, পুলিশের নামে, স্থানীয় চক্রের প্রয়োজন মেঠাতে ফুটপাথ বাণিজ্য নিয়ে সবার লোলপ দৃষ্টি। এই মুহূর্তে হকারদের উচ্ছেদ নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। ভোক্তভোগীর মতে হকার ও ভাসমান দোকানিদের নির্দিষ্ট করে একটি স্থানে বসিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হলে সমস্যার অনেকটা সমাধান হতো। বিশেষ করে ঈদ মৌসুমে চৌহাট্টা থেকে দাড়িয়াপাড়া পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তার একদিক বন্ধ করে, মহাজনপট্টি পয়েন্ট থেকে জেলরোড পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সান্ধ্য বাজার চালু করে দেয় হলে ক্রেতা বিক্রেতা উপকৃত হবেন। এতে দিনের বেলা ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখতে অসুবিধা হবে না।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: