ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত

মক্কা ও মদিনা শরিফ রক্ষায় জোট হলে সেনাবাহিনী পাঠানো হবে

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৪ জুন ২০১৬

মক্কা ও মদিনা শরিফ রক্ষায় জোট হলে সেনাবাহিনী পাঠানো হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) পরিচালনায় একটি অধিদফতর প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর আইন ২০১৬’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এদিকে মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিশ্বের সেরা ক্ষমতাধরদের তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম এগিয়ে আসায় অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, গত ৬ জুন ফোর্বসে আর্টিকেল বের হয় ‘দ্য ওয়ার্ল্ড মোস্ট পাওয়ারফুল উমেন ইন-২০১৬’। এই তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ৩৬তম। এজন্য তাকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছেন মন্ত্রিপরিষদ। মার্কিন সাময়িকীটির গতবারের এ তালিকায় শেখ হাসিনার অবস্থান ছিল ৫৯তম। বিএনসিসি প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন এই আইনের অধীনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ঢাকায় বিএনসিসি অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই অধিদফতরের দায়িত্বে একজন মহাপরিচালক থাকবেন। প্রতিরক্ষা সচিবের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের একটি উপদেষ্টা কমিটিও থাকবে। প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ; সেনা, নৌ ও বিমান সদর; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে একজন করে প্রতিনিধি এই উপদেষ্টা কমিটিতে রাখা হবে। বিএনসিসির মহাপরিচালক হবেন এই উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সচিব। নির্ধারিত যোগ্যতা থাকা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জুনিয়র ও সিনিয়র ডিভিশনের ক্যাডেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন বলেও শফিউল আলম জানান। তিনি বলেন, ১৯৫০ সালের একটি সার্কুলারের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে বিএনসিসি পরিচালিত হচ্ছিল, কোন পূর্ণাঙ্গ আইন ছিল না। একে আইনী কাঠামো দিতেই নতুন আইন করা হচ্ছে। গত বছর ২৮ ডিসেম্বর বিএনসিসি আইনের খসড়ায় মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দেয়। শফিউল সেদিন বলেছিলেন, ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের পরিধি বিস্তৃত হওয়ায় একে আইনী কাঠামোতে এনে সুসংগঠিত ও গতিশীল করতে আইন করা হচ্ছে। বিএনসিসিতে সশস্ত্র বাহিনী থেকে সংযুক্ত বা প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা যদি শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেন, তবে নিজ বাহিনীর অধীনে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ারও বিধান রাখা হয়েছে এই খসড়ায়। আর বিএনসিসিতে যুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা শৃঙ্খলাবিরোধী কোন কাজ করলে অধিদফতর বা কোরের সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের কোন সদস্য শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করলে কোরের বিধি অনুযায়ী তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। আর বিএনসিসিতে যুক্ত জনপ্রশাসনের কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী তাদের শাস্তির মুখোমুখি করা হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সেদিন জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সৌদি সফর ॥ গত ৩ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরের বিষয়টি বৈঠকে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, সফরকালে সৌদি বাদশার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছাড়াও দেশটির ৯ জন মন্ত্রী এবং বিভিন্ন সংস্থার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে যোগদানের বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কি না- এই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন হেরেম শরিফ অর্থাৎ পবিত্র মক্কা শরিফ এবং মদিনা শরিফ রক্ষার জন্য যদি কোন জোট গঠন করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাতে যোগদান করবে। প্রয়োজনে পবিত্র দুই মসজিদ রক্ষায় বাংলাদেশ সেনা পাঠাবে, এটা হলো প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা কোন যৌথ বাহিনী নয়, হয়ত একাধিক রাষ্ট্র পাঠালে (সেনা) তখন যৌথ হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলেছেন। সৌদি জোটে অংশগ্রহণ নিয়ে মন্ত্রিসভার কোন মন্ত্রী দ্বিমত পোষণ করেননি বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সৌদি আরব সফরকালে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সৌদি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও বলেন তিনি। নারী শ্রমিকরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সৌদি আরব যেতে পারবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে নারী শ্রমিক একা যেতেন, এখন পরিবারের সদস্য বাবা, ভাই বা স্বামী যেতে পারবেন। এতে পারিবারিক পরিবেশে তারা থাকতে পারবেন। আর একটা সমস্যা ছিল, একজন শ্রমিক যে এলাকায় বসবাস করেন সে এলাকায় কাজ করতে হবে, ওই কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতে হবে, ট্রান্সফারের কোন সুযোগ ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রেক্ষাপটে ট্রান্সফারটা উন্মোচিত হয়েছে। এখন যে কোন শহরে তারা যেতে পারবে এবং অন্য কোম্পানিতে কাজ করতে পারবে। এই সুবিধাগুলো তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, আর একটি বড় সুবিধা হলো দক্ষ শ্রমিকদের যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। সরকার আশা করছে, বছরখানেকের মধ্যে প্রায় ৫ লাখ বিভিন্ন ক্যাটাগরির শ্রমিক সৌদি আরবে যেতে পারবে। বৈঠকে গত ৯-১১ মে মিসরের রাজধানী কায়রোতে ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলোর সভায় শিল্পমন্ত্রীর অংশগ্রহণ, ৩ মার্চ প্যারিসে সংস্কৃতিমন্ত্রীর মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান ও ৯-১৩ মে শ্রীলঙ্কা সফর সম্পর্কে অবহিত করা হয়। এ ছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে ১৬-২০ মে রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট সংক্রান্ত খসড়া এগ্রিমেন্ট চূড়ান্তকরণ সম্পর্কিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের রাশিয়ান ফেডারেশন সফরের বিষয়টিও মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে।
×