ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারীভাবে ইরি-বোরো ধান সংগ্রহে নয়-ছয়

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১০ জুন ২০১৬

সরকারীভাবে ইরি-বোরো ধান সংগ্রহে নয়-ছয়

নিজস্ব সংবাদদাতা, সান্তাহার, ৯ জুন ॥ আদমদীঘি উপজেলায় সরকারীভাবে ইরি-বোরো ধান সংগ্রহে নয়-ছয় করার অভিযোগ উঠেছে। কৃষকের নামের কৃষি কার্ড, আইডি কার্ড ও ব্যাংক হিসাব হাতিয়ে নিয়ে ফড়িয়া মহাজনদের মাধ্যমে সরকারী ক্রয় কেন্দ্রে ধান দিচ্ছেন সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। তাদের দেয়া ধানের সবই আনা হয়েছে অন্য জেলা থেকে। এতে ভেস্তে যাচ্ছে উপজেলা কোটা প্রথা। এছাড়া দেয়া হচ্ছে পুরনো আমন ধানÑ এমন অভিযোগ সর্বত্র আলোচিত হলেও সরকারের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এ অভিযোগ খতিয়ে দেখার যেন কেউ নেই। জানা গেছে, উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে সরকারীভাবে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে দুই হাজার ৮শ’ ৫০ টন। এবার বেশি মুনাফা হওয়ার কারণে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে সরকারদলীয় কিছু নেতাকর্মী। তারা নিয়োগ করেছে চিহ্নিত ফড়িয়া মহাজন। এদের দাপটে সাধারণ কৃষকরা ক্রয় কেন্দ্রের ধারেপাশে ভিড়তে পারছেন না। কেউ সাহস করে ক্রয় কেন্দ্রে গেলেও কেনা শেষ বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এলাকার কৃষকের নামে ফড়িয়াদের দেয়া ধান আনা হয়েছে অন্য জেলা থেকে। এর ফলে উপজেলা কোটা ভেস্তে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার চিহ্নিত ফড়িয়া; যারা টেস্ট রিলিফ ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্পের চাল ও গম ক্রেতা এবং সরকারদলীয় কিছু নেতাকর্মী সহজ-সরল সাধারণ কৃষক এবং আত্মীয়স্বজন কৃষকের নিকট থেকে কৃষি কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি এবং ব্যাংক হিসাবের চেক হাতিয়ে নিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে যেসব কৃষকের ব্যাংক হিসাব নেই সেসব কৃষককে না জানিয়েই তার নামে ব্যাংকে হিসাব খুলে লেনদেন করা হচ্ছে বলেও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। কৃষকের নামে ফড়িয়া ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ধান দেয়ার কাজে সহযোগিতা করছে খোদ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট খাদ্য গুদামের ইনচার্জ। সে কারণে খাদ্য কর্মকর্তার অফিসে বসে হাজারও কৃষকের নামে স্বাক্ষর করেন বুলবুল ও এনামুল নামের ফড়িয়া মহাজনরা। এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেকেন্দার রবিউল ইসলাম বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে দেয়া কৃষি র্কাড মোতাবকে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। খাদ্য গুদামে কৃষক না ফড়িয়া ধান নিয়ে যাচ্ছে, তা আমার দেখার বিষয় নয়। তবে অন্য জেলা থেকে আনা ধান ক্রয়ের অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংগ্রহ করা ধান নিজ উপজেলা না অন্য জেলার সেটি বড় কথা নয়। কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এ উপজেলার কোন্ কৃষক কী পরিমাণ ধান বিক্রি করতে পারবেন সেটি নির্ধারণ করার দায়িত্ব কৃষি বিভাগকে পালন করার সরকারী নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু এ উপজেলার ক্রয় কমিটি সে নির্দেশ মানছে না। উল্টো খাদ্য বিভাগ থেকে তালিকা দেয়া হচ্ছে কৃষি বিভাগে। এদিকে ভুক্তভোগী সাধারণ কৃষকদের দাবি খাদ্য বিভাগ এবং ব্যাংকে দেয়া তালিকার নামের পাশের স্বাক্ষর যাচাই ও এসব কৃষককে সরেজমিন জিজ্ঞাসাবাদ করলেই মিলবে বিশাল দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র।
×