ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজস্বে কূটকৌশল-শেষ

জটিল কর কাঠামোয় প্রকৃত উদ্দেশ্য ভেস্তে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ৬ মে ২০১৬

জটিল কর কাঠামোয় প্রকৃত উদ্দেশ্য ভেস্তে যাচ্ছে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ পরিকল্পিত করারোপ নেই। ফলে তামাকের করের প্রকৃত সুফল মিলছে না। সিগারেটের ক্ষেত্রে স্তরভিত্তিক করারোপ, বিড়ির ক্ষেত্রে ট্যারিফ ভ্যালু ও গুল জর্দার ক্ষেত্রে এক্স ফ্যাক্টরি ভ্যালুর নামে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করায় কর কাঠামো জটিল আকার ধারণ করেছে। ফলে তামাকের কর একদিকে যেমক কাক্সিক্ষত হারে বাড়ছে না, অন্যদিকে তেমনি কর বাড়ানোর উদ্দেশ্যও পূরণ হচ্ছে না। মাঝ থেকে তামাক কোম্পানিই লাভবান হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সিগারেটের মূল্যস্তর তুলে দেয়া এবং তামাক পণ্যের প্যাকেটপ্রতি স্পেসিফিক কর বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেছেন, সিগারেটের ক্ষেত্রে স্তরপ্রথা বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনার বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে কর পদ্ধতি সহজ করা উচিত। এ বিষয়ে এফসিটিসির কোন নির্দেশনার আলোকে বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। সূত্র জানায়, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সিগারেটের ক্ষেত্রে ৪৮ থেকে ৬৩ শতাংশ, বিড়ির ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ এবং জর্দা ও গুলের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ সুনির্দিষ্ট শুল্ক বিদ্যমান আছে। পাশাপাশি ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ রয়েছে। এর বাইরে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে ৪০ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত না হলে ৪৫ শতাংশ কর্পোরেট আয়কর দিতে হয়। দেখা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে তামাক পণ্যে সর্বোচ্চ ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট শুল্ক (এসডি) আরোপের কথা বলা হলেও এ ঘোষণার মধ্যেই রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে, আইনে বলা হয়েছে ৩০০ শতাংশ এসডি আরোপের কথা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সেখান থেকে বিশেষ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলো ২৩৭ থেকে ২৭৫ শতাংশ পর্যন্ত দায়মুক্তি দিয়েছে। অর্থাৎ সিগারেটের ক্ষেত্রে দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে ২৩৭ থেকে ২৫২ শতাংশ পর্যন্ত। আর বিড়ির ক্ষেত্রে দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৭৫ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই রেয়াজ একটি নিয়মে দাঁড়িয়েছে। স্তরপ্রথা বিষয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি জটিল স্তরপ্রথা তুলে দেয়া উচিত। তাছাড়া দেখা যাচ্ছে বাজেটে সাধারণত বেশি দামের সিগারেটের কর বাড়ানো হয়। আর কম দামের সিগারেটের কর ওই তুলনায় বাড়ানো হয় না। ফলে যেটা হয়, সেটা হচ্ছে বেশি দামের সিগারেট যেহেতু কম মানুষ খায় সেহেতু সেখান থেকে খুব বেশি রাজস্ব বাড়ে না। আবার যাদের কিনতে কষ্ট হয় তারা নিচের দামের সিগারেটে চলে যায়। কিন্তু যদি কম দামের সিগারেটে দাম বাড়ানো হয়, তাহলে সব দিক থেকেই লাভ হবে। কেননা, কম দামের সিগারেট খায় বেশি মানুষ, সেখানে কর বাড়ালে রাজস্ব বেশি আসবে। আসল যে উদ্দেশ্যÑ মানুষ বাধ্য হয়েই সিগারেট খাওয়া কমিয়ে দেবে অথবা সিগারেট ছেড়ে দেবে সেটি পূরণ হবে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে,বিশ্বে সবচেয়ে কম দামে সিগারেট পাওয়া যায় এমন তিনটি দেশের মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। এর পরই অবস্থান করছে নেপাল ও মিয়ানমার। ক্যাম্পেন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস-এর এক প্রস্তাবনাপত্রে দেখা গেছে, বাংলাদেশে তামাকের বর্তমান কর কাঠামো অত্যন্ত জটিল। বলা হয়েছে, সম্পূরক শুল্ক (এক্সসাইজ ট্যাক্স), মূল্যের শতাংশ হিসেবে ধার্য রয়েছে। তামাক পণ্যের ধরন এবং ব্রান্ডভেদে সম্পূরক শুল্কের উল্লেখযোগ্য তফাৎ রয়েছে। দামী ব্রান্ডের তুলনায় সস্তা ব্রান্ডের ওপর করের মাত্রা অনেক কম। সিগারেটের ক্ষেত্রে স্তরভিত্তিক যে কর কাঠামো বিদ্যমান, যা ভিন্ন ভিন্ন এ্যাড- ভ্যালোরেম কর হিসেবে খুচরা মূল্যস্তরের ওপর ধার্য রয়েছে। বিড়ির ওপর ধার্য কর অত্যন্ত কম এবং তা কেবল সরকার নির্ধারিত ট্যারিফ ভ্যালুর ওপর প্রযোজ্য।
×