ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আঞ্চলিক নৌ-যোগাযোগ উন্নয়নে বড় অঙ্কের সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৫ মে ২০১৬

আঞ্চলিক নৌ-যোগাযোগ উন্নয়নে বড় অঙ্কের সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আঞ্চলিক নৌ-যোগাযোগ উন্নয়নে বড় অংকের সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা (৪০ কোটি মার্কিন ডলার)। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই প্রাথমিক আলোচনা শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক নেগোশিয়েশন হবে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশ রিজিওনাল ওয়াটারওয়ে ট্রান্সপোর্ট নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এই সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আযম জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং আশুগঞ্জ নৌ-রুটটি নিয়মিত ড্রেজিং করা হবে। ফলে এই রুটে ২৪ ঘণ্টা নৌ-যান চলাচল করতে পারবে। তাছাড়া এই রুটটির মাধ্যমে আঞ্চলিক নৌ-যোগাযোগ (বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান-নেপাল) প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। বিশ্বব্যাংকের আইডিএ ঋণের বিপরীতে বার্ষিক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হবে। এ ঋণের অর্থ ৬ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৮ বছরে পরিশোধের সুযোগ থাকছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের ঋণের ওপর কোন কমিটমেন্ট চার্জ নেই। কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় এ সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্যাপক সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। শুরুতে দারিদ্র্য নিরসনসহ সামাজিক খাতে বেশি সহায়তা দিলেও এখন বিদ্যুত ও জ্বালানিসহ নতুন নতুন খাতে সহায়তা বাড়াচ্ছে সংস্থাটি। সম্প্রতি ঢাকায় নতুন নিয়োগ পাওয়া বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডাইরেক্টর চিমিয়াও ফান বলেছেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে এবং কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশে সহায়তা অব্যাহত রাখবে বিশ্বব্যাংক। অন্যদিকে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে আগামীতে সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করতে নতুন কৌশলের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় নতুন কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্কের অনুমোদন দেয়া হয়। এর আলোকে আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশে সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করবে সংস্থাটি। নতুন এ কৌশলপত্র ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ে উন্নীত হতে সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২১ লাখ যুবক কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। তাদের জন্য ভালমানের কর্ম সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে নতুন কৌশলপত্র। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও দারিদ্র্য দূর করতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে প্রথম শর্ত হিসেবে দেখছে বিশ্বব্যাংক। নতুন কৌশলপত্রে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে নতুন কৌশলপত্রে। এই ফ্রেমওয়ার্ক অনুমোদনের পর বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ, নেপাল ও ভূটান কার্যালয়ের কান্ট্রি ডাইরেক্টর চিমিথাও ফান বলেছিলেন, অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ দারিদ্র্য দূরীকরণে উল্লেখ করার মতো অগ্রগতি করেছে। এ সময়ে অর্থনৈতিক উন্নতি এবং প্রবৃদ্ধিও হয়েছে বেশ ভাল। তবে এসব বিষয়ে দেশটির আরও ভাল কিছু করার সুযোগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বর্তমানে প্রধান আলোচ্য বিষয় কর্মসংস্থান। টেকসই ও বাড়তি প্রবৃদ্ধির জন্য কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। আগামীতে বাংলাদেশের উন্নয়নে বাধা দূর করতে বিশ্ববাংক সহায়তা দেবে। বিশ্বব্যাংক বলছে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নিম্ন মধ্য আয়ের দেশের মর্যাদা লাভ করেছে এবং ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে যেতে চাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক দারিদ্র্য নিরসন এবং কর্মসংস্থানের প্রয়োজন। বিশ্বব্যাংক গ্রুপ বাংলাদেশের উচ্চ এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপ বাংলাদেশ সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করে দেখেছে বাংলাদেশের টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান তৈরির জন্য আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরে বিদ্যুত উৎপাদন, চরাঞ্চলে যোগাযোগ, আঞ্চলিক ও বিশ্ব যোগাযোগ শহরায়ন এবং ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় বিশেষ নজর দিতে হবে। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়কালের কৌশলগত পরিকল্পনায় প্রবৃদ্ধি বাড়ানো, প্রবৃদ্ধির সুফল সবার কাছে পৌঁছে দেয়া ও টেকসই প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে প্রতিযোগী সক্ষমতা নিশ্চিত করায় গুরুত্ব দিতে হবে। সবার কাছে প্রবৃদ্ধির সুফল পৌঁছাতে নতুন কৌশলপত্রে সামাজিক অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থায় বিশেষ গুরুত্ব থাকছে। শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তায় দেয়া হচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব। সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র বাস্তবায়নেও গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। তিনি বলেন, টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব থাকছে। বিদ্যুত খাত, পরিবহন কৃষি ব্যবস্থায় দূষণ কমাতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
×