ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

কান উৎসবে প্রিন্সকে শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ২৮ এপ্রিল ২০১৬

কান উৎসবে প্রিন্সকে শ্রদ্ধা

এবারের কান চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ বিভাগে স্মরণ করা হবে প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী প্রিন্সকে। গত ২১ এপ্রিল তার আকস্মিক মৃত্যুর পর এ পরিকল্পনা করেছেন আয়োজকরা। উৎসবের একজন প্রতিনিধি বলেন, প্রিন্সের জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি থাকবে। তবে এখনই এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি তথ্য দেয়া যাচ্ছে না। ফ্রান্সের সাগরঘেষা শহর কানে আগামী ১১ মে শুরু হবে কানের ৬৯তম আসর। চলবে ২২ মে পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় নিজের বাড়ি ও স্টুডিও প্রাঙ্গণে প্রিন্সকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তার বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। গত ২৩ এপ্রিল তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এখানে পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও কয়েকজন সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। তবে কোথায় তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে তা জানানো হয়নি। প্রিন্সের মৃত্যুর কারণ এখনও রহস্য হয়ে আছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেতে চার সপ্তাহ লাগবে বলে জানা গেছে। ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারী ক্লিনটন পেনসিলভানিয়ায় এক নির্বাচনী প্রচারণায় বলেন, প্রিন্স ছিলেন অসাধারণ ও মনেপ্রাণে একজন আমেরিকান। গত বছর হোয়াইট হাউসে প্রিন্সকে সঙ্গীত পরিবেশনের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেন, আমাদের সময়ে সবচেয়ে প্রতিভাধর ও সক্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন তিনি। গানের মানুষ হলেও চলচ্চিত্রের সঙ্গেও ছিল তার নিবিড় যোগাযোগ। ১৯৮৪ সালের ছবি ‘পার্পল রেইন’-এর জন্য অস্কারের সেরা মৌলিক গান বিভাগে পুরস্কার জেতেন তিনি। চলচ্চিত্রে তিনি নিজেই নিজের চরিত্রে অভিনয় করেন। ‘পার্পল রেইন’ নামটি তার বিখ্যাত এ্যালবাম থেকে নেয়া। এতে ছিল ‘হোয়েন ডোভস ক্রাই’ ও ‘লেটস গো ক্রেজি’ গান দুটি। ১৯৮৬ সালে ‘আন্ডার দ্য চেরি মুন’ নামে সঙ্গীতনির্ভর চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন প্রিন্স। এর দৃশ্যায়ন হয়েছিল ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরায়। টিম বার্টনের ‘ব্যাটম্যান’ (১৯৮৯) চলচ্চিত্রের গান তৈরি করেছিলেন তিনি। এরপর স্পাইক লি পরিচালিত ‘গার্ল সিক্স’ চলচ্চিত্রের গানও তৈরি করেন প্রিন্স। প্রিন্সের জন্ম ১৯৫৮ সালে। অল্প বয়স থেকেই দেদার লিখেছেন ও গেয়েছেন তিনি। প্রথম গান লেখেন সাত বছর বয়সে। তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার, সঙ্গীতায়োজক। বাজাতে পারতেন অনেক বাদ্যযন্ত্র। তার মোট ৩০টি এ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। আশির দশকে আন্তর্জাতিক সুপারস্টার হয়ে ওঠেন প্রিন্স। ‘১৯৯৯’, ‘পার্পল রেইন’, ‘সাইন ও’ দ্য টাইমস’ এ্যালবামগুলোর সুবাদে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি পান তিনি। তার অভিনব সঙ্গীতের প্রসার হয়েছে রক, ফাঙ্ক ও জ্যাজে। সাতটি গ্র্যামিজয়ী এই শিল্পীর সঙ্গীত জীবনে তার গানের ১০ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত দুটি গান হলো- ‘লেটস গো ক্রেজি’ ও ‘হোয়েন ডোভস ক্রাই’। ৩৫ বছরের সঙ্গীতজীবনে রক, ফাংক, জ্যাজের জগতে প্রিন্সের উদ্ভাবনী বিচরণ ভক্ত-শ্রোতাদের দিয়েছে ৩৯টি এ্যালবাম। ১৯৮৪ সালে ‘পার্পল রেইন’ চলচ্চিত্রের গানের জন্য অস্কার এবং ২০০৭ সালে ‘হ্যাপি ফিট’ এর ‘সং অব দ্য হার্ট’ গানটির জন্য গোল্ডেন গ্লোব এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন প্রিন্স। প্রিন্সের জন্য গান লেখা ছিল চিরতাড়না, অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা ও একই সঙ্গে আনন্দময়। ১৯৯২ সালে ‘ডায়মন্ডস এ্যান্ড পার্লস’ ট্যুরের সময় সঙ্গীতচর্চা নিয়ে তিনি বলেছিলেন, কোন দৈব ঘটনা নয়, প্রয়োজনীয়তার জন্যই তৈরি হয় গান। এটা জীবনের অংশ, অনেকটা নিঃশ্বাস নেয়ার মতো। প্রায় এক হাজার গান গেয়েছিলেন প্রিন্স। এর বেশিরভাগই পেইসলি পার্কে তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রিন্সের গানের মধ্যে ৫০ কিংবা ১০০ তালিকা তৈরি করা অসম্ভব ব্যাপার। তবে জনপ্রিয়তা ও ভক্তদের পছন্দের নিরিখে বিবিসি তার সঙ্গীত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি গানের তালিকা তৈরি করেছে। এগুলো হলোÑ সফট এ্যান্ড ওয়েট (ফর ইউ, ১৯৭৮), ডার্টি মাইন্ড (ডার্টি মাইন্ড, ১৯৮০), লিটল রেড কর্ভেট (১৯৯৯, ১৯৮২), হোয়েন ডোভস ক্রাই (পার্পল রেইন, ১৯৮৪), ইরোটিক সিটি (লেটস গো ক্রেজি, ১৯৮৪), কিস (প্যারেড, ১৯৮৬), সামটাইমস ইট স্নোস ইন এপ্রিল (প্যারেড, ১৯৮৬), ক্রিস্টাল বল (ক্রিস্টাল বল, ১৯৮৬/১৯৯৮), ইউ গট দ্য লুক (সাইন ও’ দ্য টাইমস, ১৯৮৭), ইফ আই ওয়াজ ইওর গার্লফ্রেন্ড (সাইন ও’ দ্য টাইমস, ১৯৮৭), এ্যালফাবেট স্ট্রিট (লাভসেক্সি, ১৯৮৮), জয় ইন রিপিটিশন ( গ্রাফিটি ব্রুজ, ১৯৯০), গেট অব (ডায়মন্ডস এ্যান্ড পার্লস, ১৯৯২), সেভেন (লাভ সিম্বল, ১৯৯৩), ব্ল্যাক সোয়েট (১১২১, ২০০৬) ও ব্রেকডাউন (আর্ট অফিসিয়াল এজ, ২০১৪)।
×