ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও হারিয়ে যায়নি হাইত হাওক, বা-হইত

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

এখনও হারিয়ে যায়নি হাইত হাওক, বা-হইত

হাওড় বাওড় মোষের শিং-এই তিনে ময়মনসিং’ প্রচলিত প্রবাদটির সঙ্গে ময়মনসিংহে উৎসবের মাছ ধরার যথার্থ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এক সময় ময়মনসিংহের হাওড়, নদী ও খালেবিলে প্রচুর স্বাদু মাছ ধরা পড়েছে। প্রতিবছরের নির্ধারিত দিনে ময়মনসিংহের চিহ্নিত হাওড়, বিল ও ডোবায় ঘটা করে আনন্দ-উৎসবের সাথে ছেলে-বুড়োরা মেতে ওঠে মাছ ধরার প্রতিযোগিতায়। স্থানীয়ভাবে হাইত, হাওক ও বা-হইত নামে পরিচিত এই মাছ ধরা এখনও হারিয়ে যায়নি। পলো, চাবিজাল, উড়াজাল, শিবজালসহ নানাজাতের মাছ ধরার সামগ্রী নিয়ে এখনও মেতে ওঠে ময়মনসিংহের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। মাছ ধরার এই উৎসব ময়মনসিংহের গ্রামীণ সংস্কৃতিরও অংশ। ময়মনসিংহ অঞ্চলে রয়েছে বেশ কয়েকটি বিল, ডোবা ও খাল। এর মধ্যে ময়মনসিংহ সদরের নাওভাঙ্গা ও পুটামারা বিল, লাখের ডোবা, নান্দাইল উপজেলায় বলদার বিল, টঙ্গীর বিল, জাইল্ল্যার বিল, জলুন্দার বিল, জলহরি বিল, সাবার বিল, বাহাইল বিল, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার শিরনী বিল, ডেইলা ও আন্দাইল বিল, গৌরীপুরের জলবুরুঙ্গা, ফুলবাড়িয়া উপজেলার বড়বিলার বিলসহ অনেক বিল ও ডোবা রয়েছে। এর সাথে ছোটবড় খাল তো আছেই। শীতের শুরুতে এসব বিল, ডোবা ও খালের পানি কমতে থাকে ক্রমশ। আর তখনই শুরু হয় মাছ ধরার উৎসব। অনেক এলাকায় আগাম ঘোষণা দিয়ে বছরের নির্ধারিত দিনে এই মাছ ধরার উৎসব হয়। এজন্য স্থানীয় হাট ও বাজারে ঢাক-ঢোল পিটিয়েও আগাম ঘোষণা দেয়া হয়। মাছ ধরার এমন উৎসবে ছেলে-বুড়ো সবাই যোগ দেয়। তবে এজন্য কাউকে কোন টাকা-পয়সা দিতে হয় না। জলবায়ুর প্রভাবে দিন দিন পানিশূন্যসহ দখল, জবরদখল ও পলি জমে ভরাট হওয়ায় এসব বিল, ডোবা ও খালের অস্তিত্ব এখন বিপন্নের পথে। আর যেসব বিল ও ডোবায় পানি থাকছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল সেগুলো দীর্ঘ মেয়াদে লিজ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করায় উৎসবের মাছ ধরার সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে। এছাড়া সেচ দিয়ে মাছ ধরার কারণে মাছের বংশ বৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি মাছ ধরার পলো ও জালসহ নানা উপকরণও এখন ব্যযবহুল ও দুর্লভ হয়ে পড়ছে। এসব কারণে ময়মনসিংহ অঞ্চলের এক সময়কার ঐতিহ্যের এই মাছ ধরার উৎসব কমে যাচ্ছে। তারপরও মাঘী পূর্ণিমাসহ বিশেষ দিনক্ষণে এখনও চোখে পড়ে মাছ ধরার উৎসব। Ñবাবুল হোসেন ময়মনসিংহ থেকে
×