ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২০ ওষুধ কোম্পানির উৎপাদন লাইসেন্স বাতিল

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২১ এপ্রিল ২০১৬

২০ ওষুধ কোম্পানির উৎপাদন লাইসেন্স বাতিল

নিখিল মানখিন ॥ অবশেষে দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো তৃতীয়বার পরিদর্শন ও জিএমপি মূল্যায়ন বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এ সংক্রান্ত গঠিত তদন্ত কমিটির বিশেষজ্ঞ পরিদর্শক দল। পাঁচ বছর আগে ওষুধ কোম্পানিগুলোর মান যাচাই করতে এই তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বুধবার তৃতীয়বার পরিদর্শন প্রতিবেদনে ২০টি কোম্পানির ওষুধ উৎপাদনের লাইসেন্স বাতিল করতে সুপারিশ করা হয়েছে। সব ধরনের এন্টিবায়োটিক উৎপাদনের অনুমতি বাতিল করতে বলা হয়েছে ১৪টি ওষুধ কোম্পানির। আর ২২টি কোম্পানির পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপের এন্টিবায়োটিক উৎপাদনে সক্ষমতা নাই বলে জানানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞ পরিদর্শক দলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত ৯ম জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তৃতীয় সাব-কমিটির দ্বিতীয় প্রতিবেদনের ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম ক্যাটাগরি ওষুধ কোম্পানিগুলো (নতুন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিসহ) ১০ম জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২য় বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গঠিত বিশেষজ্ঞ পরিদর্শক দল কর্তৃক হালনাগাদ পরিদর্শন সমাপ্ত করার পর এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। এবার সারাদেশে বিস্তৃত মোট ৮৪টি কারখানা পরিদর্শন করা হয়। যার মধ্যে নতুন প্রতিষ্ঠিত কারখানার সংখ্যা ১৫টি (নতুন ৭টি, পুরনো কোম্পানি কিন্তু নতুন কারখানা ৮টি) এবং পুরনো চলমান কারখানা ৬৯টি। এবার যে কারখানাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে সেগুলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জিএমপি নীতিমালা অনুযায়ী ওষুধ উৎপাদনে তাদের বিরাজমান সক্ষমতার আলোকে বিবেচনা করা হয়েছে। এদের অনেকে গত ৫ থেকে ৬ বছরে তাদের কারখানার সন্তোষজনক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। অনেকের উন্নয়ন মাঝারি ধরনের। অনেকে উন্নয়নের নামে শুধু সময়ক্ষেপণ করেছে। কারও কারও কারখানায় কোন উন্নয়ন হয়নি, বরং আগের চাইতে মানের অবনতি ঘটেছে। ওষুধ উৎপাদনকালে জিএমপি নীতিমালা অনুসরণ না করলে উৎপাদিত ওষুধ মানসম্পন্ন হয় না। ব্যবহারকারীর অসুখ না সেরে বরং শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। যে ক্ষতি প্রাণঘাতীও হতে পারে এবং এই ওষুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য সার্বিক বিবেচনায় পরিত্যাজ্য। বিশেষজ্ঞ পরিদর্শক দল তাদের পরিদর্শিত কারখানাগুলোর বিষয়ে সুপারিশ পেশ করেছে। ২০টি কোম্পানির ওষুধ উৎপাদনের লাইসেন্স বাতিল ॥ যে সব ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলোর মান সম্পর্কে প্রতিবেদনে লেখা রয়েছে, ওসব কোম্পানির কারখানা জিএমপি নীতিমালা অনুসরণ করে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ওই সব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে এক্সিম ফার্মাসিউটিক্যালস লি., এভার্ট ফার্মা লি., বিকল্প ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ড্রাগল্যান্ড লি., গ্লোব ল্যাবরেটরিজ (প্রা.) লি., জলফা ল্যাবরেটরিজ, কাফমা ফার্মাসিউটিক্যালস লি., মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ন্যাশনাল ড্রাগ ফার্মা লি., নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যালস লি., রেমো কেমিক্যালস লি.(ফার্মা ডিভিশন), রিড ফার্মাসিউটিক্যালস লি., স্কাইল্যাব ফার্মাসিউটিক্যালস লি., স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস লি., স্টার ফার্মাসিউটিক্যালস লি., সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যালস লি., টুডে ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ইউনিভার্সাল ফার্মাসিউটিক্যালস লি.। সব ধরনের এন্টিবায়োটিক উৎপাদনের লাইসেন্স বাতিল ১৪টি কোম্পানির ॥ ১৪টি ওষুধ কোম্পানির সব ধরনের এন্টিবায়োটিক উৎপাদনে সক্ষমতা নেই বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ওই সব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে আদ-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যালস লি., আলকাদ ল্যাবরেটরিজ লি., বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যালস লি., বেঙ্গল ড্রাগস এন্ড কেমিক্যালস (ফার্মা) লি., ব্রিস্টল ফার্মা লি., ক্রিস্টাল ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লি., মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যালস লি., এমএসটি ফার্মা এন্ড হেলথকেয়ার লি., অরবিট ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ লি., ফোনিক্স কেমিক্যাল ল্যাবরেটরিজ(প্রা.) লি., রাসা ফার্মাসিউটিক্যালস লি., সেভ ফার্মাসিউটিক্যালস লি.। পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপের এন্টিবায়োটিক উৎপাদনে সক্ষমতা নেই ২২টি কোম্পানির ॥ ২২টি কোম্পানির কারখানা জিএমপি নীতিমালা অনুযায়ী নন-পেনিসিলিন গ্রুপের এন্টিবায়োটিক উৎপাদনে সক্ষম, কিন্তু মানসম্পন্ন পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপের এন্টিবায়োটিক উৎপাদনে সক্ষম নয়। এমন মানের ২২টি কোম্পানিকে পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপের এন্টিবায়োটিক উৎপাদনের অনুমতি বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে। ওই সব কোম্পানি হলো- এ্যামিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লি., এ্যাজটেক ফার্মাসিউটিক্যালস লি., বেঙ্গল টেকনো ফার্মা লি., সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ডিসেন্ট ফার্মা লি., ডাঃ টিমস ল্যাবরেটরি লি. (রিমেডি ফার্মাসিউটিক্যালস লি.), গ্লোবেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস লি., গ্রীনল্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ইনোভা ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ম্যাক্স ড্রাগস লি., মেডিমেট ল্যাবরেটরিজ লি., মডার্ন ফার্মাসিউটিক্যালস লি., মিসটিক ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিজ, অর্গানিক হেলথকেয়ার লি., ওয়েস্টার ফার্মা লি., প্রিমিয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লি., প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লি., সিমা ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ইউনাইটেড কেমিক্যালস এন্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লি., হোয়াইট হর্স ফার্মাসিউটিক্যালস লি.। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, একটি কোম্পানির টেকনো ড্রাগস লি. ইউনিট-১, টেকনো ড্রাগস লি. ইউনিট-২ টেকনো ড্রাগস লি. ইউনিট-৩ কারখানাগুলো জিএমপি নীতিমালা অনুসরণ করে মানসম্পন্ন পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপের এন্টিবায়োটিক, এন্টিক্যান্সার ড্রাগ এবং হরমোনজাতীয় ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ হয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞ পরিদর্শক দল কর্তৃক তাদের পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপের এন্টিবায়োটিক, এন্টিক্যান্সার ড্রাগ ও হরমোনজাতীয় ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে। আর ১১টি কোম্পানির সংস্কার/নির্মাণ/স্থানান্তর কাজের জন্য বন্ধ থাকায় পূর্ণাঙ্গ পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি। তাই ওই কারখানাগুলো উৎপাদনের জন্য তৈরি হওয়ার পর বিশেষজ্ঞ পরিদর্শন দল কর্তৃক পরিদর্শন করে এদের জিএমপি সক্ষমতা বিষয়ে মতামত দেয়া সম্ভব হবে হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
×