ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তনু হত্যার প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২০ এপ্রিল ২০১৬

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তনু হত্যার প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও স্মৃতির মিনার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে উঠল প্রতিবাদের আশ্রয়স্থল। চাওয়া হলো নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার বিচার। কবিতার দোলায়িত ছন্দে, গানের সুরে, বক্তার কথায় ও নৃত্যশিল্পীর নাচের মুদ্রায় জানানো হলো নিষ্ঠুরতম হত্যাকা-ের প্রতিবাদ। বৈশাখী সন্ধ্যায় সংস্কৃতির শাণিত শক্তিতে উচ্চারিত হলো বিচারের দাবি। আঁততায়ীর প্রতি জানানো হলো ঘৃণা। মঙ্গলবার থেকে শুরু হলো পাঁচ দিনব্যাপী তনু হত্যার প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উদ্বোধনী দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত চলমান অনুষ্ঠানটি প্রতিদিন শুরু হবে বিকেল পাঁচটায়। তনু হত্যার প্রতিবাদে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পূর্ব ঘোষণার প্রেক্ষিতে জাতীয়ভিত্তিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে পরিবেশিত হবে পথনাটক, গান-কবিতা, নাচসহ বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। তনুর প্রতি ভালবাসা জানিয়ে এক মিনিটের নীরবতা পালনের মাধ্যমে বিকেলে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এর পর অনুষ্ঠিত হয় তনু হত্যার বিচার দাবিতে বিশিষ্টজনদের আলোচনা। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে ছিল খ- খ- আবৃত্তি পরিবেশনা। আলোচনায় অংশ নেনÑ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ, পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ ও ও গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর। আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য ইস্তেকবাল হাসানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহ্্কাম উল্লাহ্। নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, বর্তমান সরকার বিচারিক সংস্কৃতি চালু করেছে। অথচ তনু হত্যার বিচার নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। দীর্ঘসূত্রতা হলে আন্দোলনও দীর্ঘ হবে। যতদিন তনু হত্যার দৃশ্যমান অগ্রগতি না হবে ততদিন পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, আমরা তনু হত্যাকা-ের প্রকৃত সত্যটা জানতে চাই। হত্যাকা-ের বিচার চাই, এর বেশি আমরা আর কিছু চাই না। এ সরকারের মেরুদ- এত দুর্বল নয় যে, তারা হত্যাকারীকে ভয় পাবে। অন্য বক্তারা বলেন, তনু আমাদের মেয়ে কিংবা বোন। তাঁর আত্মাটি ঘুরে বেড়ায় আমাদেরই সঙ্গে। কখনও অশরীরী হয়ে অংশ নেয় কর্মশালায়। আমাদের মাঝে সে যেন প্রশ্ন ছুড়ে দেয়Ñ আমার জন্য আপনারা কী করছেন? প্রায় এক মাস হয়ে গেল এখনও তনু হত্যার কোন কূল-কিনারা হয়নি। প্রাথমিকভাবে পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে তনুকে। পরবর্তীতে ময়নাতদন্তে বলা হলো, ধর্ষণের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। কেমন করে হত্যা করা হয়েছে সেটাও নাকি জানা যায়নি। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের নামে তনুকে পুনরায় ধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণ করা হয়েছে আমাদের সংস্কৃতিকে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ কোন দানবের দেশ নয়। তাই এভাবে যতই টালবাহানা হোক তনু হত্যার বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তনু হত্যার বিচার দাবিতে পথে নেমেছে সংস্কৃতিকর্মীরা। আর এই হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত পথেই থাকবে সংস্কৃতিকর্মীরা। আলোচনা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনুষ্ঠানে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা ও স্ব-ভূমি। বহ্নিশিখার শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘আজ যত যুদ্ধবাজ’ ও ‘শুভ্র সুনীল আকাশে পাখিরা উড়ছে’। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেনÑ বাকশিল্পী আশরাফুল আলম, মাহিদুল ইসলাম, ফয়জুল আলম পাপ্পু, মাসুম আজিজুল বাসার, ফখরুল ইসলাম তারা, আহসান উল্লাহ তমাল, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী, রেজিনী ওয়ালি লিনা, মাসুদুজ্জামান, এনামুল হক, তামান্না তিথি, সুপ্রভা সেবতী, শিরিন ইসলাম, সাবিরা মাহবুব জনি, কাজী বুশরা আহমেদ তিথি প্রমুখ। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে কথাÑ আবৃত্তি চর্চাকেন্দ্র, স্বরশ্রুতি, মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র, স্বরব্যঞ্জন, ত্রিলোক, স্বরচিত্র, মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চাকেন্দ্র, দৃষ্টি এবং সংবৃতা আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র। তারা আবৃত্তি করেনÑ ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’, ‘আমি সেই মেয়ে’, ‘মানুষ জাগবে ফের’, ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ ইত্যাদি প্রতিবাদী কবিতা। পাঁচ দিনের আয়োজনে আজ বুধবার বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার পথনাটক পরিষদ, শুক্রবার গণসঙ্গীত শিল্পী সমন্বয় পরিষদ এবং শনিবার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। জাদুঘরে ইকেবানা ও ওশিবানা আর্ট প্রদর্শনী ॥ জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে এখন ফুলের সুবাস। নানা রং-বেরঙের ফুলের সঙ্গে চমৎকার সজ্জা। জাপানের বিখ্যাত ইকেবানার আদলে ফুলগুলো সজ্জিত হয়েছে। অপরদিকে দেয়ালজুড়েও ফুলের ছবি। ওশিবানা আর্টের ছবিগুলোতে রয়েছে ফুল, রয়েছে জাপানের আবহমান সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। আরও রয়েছে ফুলের মাঝে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আলোকচিত্র। চমৎকার এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। জাতীয় জাদুঘর, ইকেবানা ও ফ্লাওয়ার ক্লাবের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেনÑ আন্তর্জাতিক ইকেবানা সমিতির সভাপতি শিল্পী কাজুই হোশামি জোহা ও জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি এম আজিজুর রহমান। আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এ প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সফিকুল ইসলামের ‘প্রবাসে প্রদোষে’ বইয়ের প্রকাশনা ॥ গীতিকবি, প্রাবন্ধিক, কথাশিল্পী ও রাষ্ট্রপতির সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম রচিত নতুন গদ্যগ্রন্থ ‘প্রবাসে প্রদোষে’। লেখক বইটিকে ‘ননফিকশন’ বই হিসেবে বলতেই বেশি পছন্দ করেন। মঙ্গলবার ছিল ‘প্রবাসে প্রদোষে’ বইটির প্রকাশনা উৎসব। বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনারকক্ষে বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাশিল্পী সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইটির প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। পাঠ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মাসুদ আহমেদ।
×