ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা;###;ষড়যন্ত্র হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে, আর আমরাই সমালোচনার শিকার

চক্রান্তকারীদের বিচার হবেই

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৯ এপ্রিল ২০১৬

চক্রান্তকারীদের বিচার হবেই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার চেষ্টার ঘটনা তুলে ধরে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যারা চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারী, যারা এতিমের টাকা মেরে খায়, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে তাদের বিচার বাংলাদেশের মাটিতেই হবে। শত কথা বলেও এ বিচার বন্ধ করা যাবে না। আমরা যেখানে অন্যায় দেখি, সেখানেই তার প্রতিকার করি, ব্যবস্থা নেই। আমরা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেই না, দেবও না। ন্যায়-নীতি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করব এবং সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে নিয়ে যাব। কোন অপশক্তিই এই অগ্রযাত্রাকে রুখতে পারবে না। সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, অপরাধীকে গ্রেফতার করলেও অপরাধ হয় এখন! যদি অপরাধীকে গ্রেফতার করলেই অপরাধ হয়, তাহলে এদেশে বিচার কী করে হবে? তাহলে দেশে কোন হত্যার বিচার কী করে হবে? ষড়যন্ত্র করলে তাদের কিছু করা যাবে না? তিনি বলেন, তারা শুধু সাংবাদিক দেখল, দেখল না অপরাধী। ষড়যন্ত্রও হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে, আর সমালোচনারও শিকার আমরা। সবার মানবাধিকার আছে, আমাদের কোন মানবাধিকার নেই। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পর যারা মানবাধিকারের কথা বলেন, তাদেরই লজ্জা হওয়া উচিত। অন্যায় ও ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য সাংবাদিকদের মায়াকান্না দেখছি, যারা মায়াকান্না করছেন, তাদের তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতকে জিজ্ঞাসা করতে হবে। ১৭ এপ্রিল দেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের দিন ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে সোমবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, আমেরিকাই জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের ধরেছে. বিচার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তেই সেটা ধরা পড়েছে। সেখানে যাদের সাজা হয়েছে, আদালতে তাদের বয়ান থেকেই এসেছে শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের নাম। এটা আমাদের করা না, আমেরিকার কোর্টে প্রমাণিত। যারা এত বড় ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেফতার করা হলেই এত নিন্দা, অথচ ষড়যন্ত্র যে করল তাকে নিন্দা করেননি- এটা কোন ধরনের সাংবাদিকতা? যারা ষড়যন্ত্রকারী তাদের জন্য এত মায়া কান্না, আর যারা ভিকটিম তাদের কী কোন অধিকার নেই? যারা ষড়যন্ত্র করে, যাদের নাম বিদেশের কোর্টে উঠে এসেছে- তাদের পক্ষে যারা কথা বলে আসলে তাদেরই লজ্জা হওয়া উচিত। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে তাদের মূল লক্ষ্য থাকে অর্থ লোপাট। আর সে অর্থ তাদের এত পরিমাণে রয়েছে যে, তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআইকে ঘুষ দিয়ে ভাড়া করে ফেলেছে। কী কারণে জয়কে (সজীব ওয়াজেদ জয়) অপহরণ করে হত্যা করতে হবে। সেই ষড়যন্ত্রে তাঁরা জড়িত (শফিক রেহমান), এটাও কিন্তু ধরা পড়েছে আমেরিকায়। আমেরিকাই ধরেছে, তারাই বিচার করেছে, আর তাদেরই বয়ানে- কোর্টে যে স্বীকারোক্তি দিয়েছে সেখানেই এদের নাম এসেছে। এগুলো আমাদের করা না, আমেরিকার কোর্টে প্রমাণিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধীকে গ্রেফতার করলে যদি অন্যায় করা হয়, তাহলে এরা আর কোনদিন হত্যাকারীদের বিচার চাইবে না। অপরাধীদের বিচার চাইবে না। একজন সাংবাদিককে দেখবে, তাঁর অপরাধটা দেখবে না? আর এটা আমাদের দেশে হয়নি, আমেরিকায় হয়েছে, তাদের দেশ ও কোর্টে হয়েছে। তাহলে তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করলেই হয়। যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, আমার প্রশ্ন জাগে, যখন আমার বাবা-মা ছোট্ট ভাইকে হত্যা করা হয়েছিল, তখন ইন্ডিমিনিটি দেয়া হয়েছিল হত্যাকারীদের বিচার করা যাবে না। তার মানে আমাদের কেউ মারা গেলে, কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলে বিচার চাওয়া যাবে না। তবে আমাদের কী কোন মানবাধিকার নেই? আমাদের কী বাঁচার অধিকার নেই। আমরা কী কোন মানুষ না? ষড়যন্ত্রকারীকে গ্রেফতার করলে, যারা ষড়যন্ত্রকারী তাদের সমর্থন করবে? দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম। আওয়ামী লীগের লোক মারা গেলে বিচার হবে না? তাহলে কোন কিছু ঘটলে বা মানুষ মারা গেলে বিচার চায় কেন? তিনি বলেন, আমার কাছে অবাক লাগে যখন দেখি একজন ষড়যন্ত্রকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটা নিয়ে অনেক কথা। তাহলে কার আছে বিচার চায়? সকলের মানবাধিকার থাকবে, শুধু আমাদের থাকবে না কেন? আমরা যেখানে অন্যায় দেখি, সেখানে ব্যবস্থা নেই। আমরা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেই না, দেব না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন খাদ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, সুজিত রায় নন্দী, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ এমপি, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত ও সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও অসীম কুমার উকিল। দেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আজ মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলে তারা কীভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের সঙ্গে বসে কথা বলে? এদের কাছে বসলেই তো তাদের গায়ে পোড়া মানুষের গন্ধ পাওয়া যাবে। এই বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন বানচাল এবং আন্দোলনের নামে তিনটি বছর শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, সারাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। ছোট ছোট শিশুরাও এদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। কী জঘন্য ও ভয়াবহ কর্মকা- তারা ঘটিয়েছে। এরপরেও কীভাবে এরা (বিএনপি-জামায়াত) মানুষের সমর্থন পায় ভাবতেও অবাক লাগে। আসলে বিএনপি-জামায়াত শুধু ধ্বংস করতে জানে, মানুষের কল্যাণ করতে জানে না। দেশবাসীকে এদের ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। মুক্তচিন্তার নামে ধর্মকে আঘাত করে নোংরা ভাষা প্রয়োগের কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, মুক্তচিন্তার অর্থ কী? মুক্তচিন্তার মানে যদি নোংরা চিন্তা, বিকৃত মানসিকতা বা নোংরা-জঘন্য ভাষা লেখা হয়- সেটা কখনোই মুক্তচিন্তা হতে পারে না। এটা আসলে বিকৃত মানসিকতা। তিনি বলেন, আমাদের পবিত্র সংবিধানেই সকল ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা আছে। দেশের প্রতিটি নাগরিক নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে। পবিত্র ইসলাম ধর্মেও তা বলা আছে। তিনি বলেন, আমরা যাঁকে মানি তাঁর সম্পর্কে নোংরা ভাষা লেখা হবে, তা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কেউ যদি ধর্ম না মানে তার বিচারও আল্লাহ করবে। কিন্তু তাদের হত্যা বা বিচার করার দায়িত্বও আল্লাহ কাউকে দেয়নি। যারা ইসলাম কায়েমের নামে, মানুষকে সঠিক পথে আনার জন্য হত্যাকা- চালাচ্ছেন, তারা কোন অধিকারে হত্যা করছেন? আল্লাহ বলেছেন, শেষ বিচারের কথা, তারা হত্যা করে বিচার করার কে? কিন্তু মুক্তচিন্তার নামে এমন কিছু লেখা হয় তা পড়তেও আমাদের লজ্জা ও ঘৃণা হয়। এটা কখনোই মুক্তচিন্তা হতে পারে না। এসব কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। আমরা কোন ষড়যন্ত্র এদেশে মানব না। এদেশ শান্তির হবে। সেটাই আমরা প্রতিষ্ঠা করব। বাংলাদেশের বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতিসহ সবক্ষেত্রে বিস্ময়কর অগ্রযাত্রায় অবাক হন। বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোলমডেল স্বীকৃতি দেন। এটি আসলে সম্ভব হয়েছে যে দল স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেন, একটি আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে সেই দল ক্ষমতায় থাকলেই এটি সম্ভব হয়। দেশ সবক্ষেত্রে এগিয়ে যায়। আর যারা স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও একাত্তরের গণহত্যাকারী তারা ও তাদের দোসররা ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নতি করবে না, এটাই স্বাভাবিক। এরা তো দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। দেশ ও জাতির উন্নতি ও মঙ্গল চাইবে কেন? বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এরা ক্ষমতায় থাকতে দেশ সবদিক থেকে পিছিয়ে যায়। নিজেরা দুর্নীতি, দুঃশাসন চালায়, বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে। আমেরিকার ফেডারেল কোর্ট ও সিঙ্গাপুরের আদালতেই প্রমাণ হয়েছে বিএনপি নেত্রীর পুত্রদের বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের ঘটনা। আমেরিকা থেকে এফবিআই এসে আমাদের আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। আর আমরাই প্রথম সরকার যে, বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বিদেশে পাচারকৃত কিছু অর্থ আমরা দেশে ফেরত এনেছি। আর বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের কারণেই দেশে ওয়ান ইলেভেন এসেছিল তাও দেশবাসীকে ভুললে চলবে না। সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বিদ্যুতের কোন সমস্যা নেই। এ কারণে অনেকেই ঘরের মধ্যে এসি চালিয়ে অনেকে বলেন যে, গ্রামে উন্নতি হয়নি। আমি তাদের প্রতি অনুরোধ করব- ঘরে বসে না লিখে গ্রামে গিয়ে ঘুরে দেখুন। দেশের এমন কোন গ্রাম খুঁজে পাবেন না যেখানে আমরা উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে দেইনি। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করি। তাঁর স্বপ্নই ছিল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, আমরা সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। বাঙালীরা এখন বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলছে, চলবে। কী পেলাম সেটা বড় কথা নয়, দেশের মানুষকে কী দিতে পারলাম- সেটাই আমার কাছে বড়। বাংলাদেশ আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ করে জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবই। এই অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না। আমির হোসেন আমু বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রাকে রুখতেই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও দেশকে যিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে নিরলসভাবে কাজ করছে সেই সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এরা আসলে দেশদ্রোহী, দেশের স্বাধীনতা ও অগ্রগতিতে বিশ্বাস করে না। একাত্তরের মতোই এসব ষড়যন্ত্রকারীদের রুখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
×