ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

আজ পাটকল শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১৩ এপ্রিল ২০১৬

আজ পাটকল শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশের সকল পাটকল শ্রমিক আজ বুধবার বেতন পেতে যাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার ২০ কোটি টাকা ছাড় করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। পহেলা বৈশাখের পর অর্থ মন্ত্রণালয় পর্যায়ক্রমে বাকি টাকা ছাড় করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, সোমবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে এক দিনের মধ্যে টাকা ছাড় করা সম্ভব নয়। এ দিকে পহেলা বৈশাখের আগে পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামীকাল পহেলা বৈশাখ। সে হিসেবে পহেলা বৈশাখের আগে আজই শেষ কর্মদিবস। এ কারণে তার বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে তাদের নিজস্ব ফান্ড থেকে জরুরী ভিত্তিতে টাকা ছাড় করে পরিস্থিতি সামাল দিতে অনুরোধ জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পরে তারা অর্থ ছাড় করলে এই টাকা তাদের ফান্ডে রেখে দেবে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, খুলনার পাটকল শ্রমিকদের মোট চার সপ্তাহের বেতন বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া দেশের অনান্য অঞ্চলের শ্রমিকদের বেতন বকেয়া রয়েছে দুই সপ্তাহের। এই বেতন মেটাতে মোট খরচ হবে ২০ কোটি টাকা। এই ২০ কোটি টাকা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে মঙ্গলবার ছাড় করা হয়েছে। আজ বুধবার সকল শ্রমিক বেতন পেয়ে যাবেন বলে সূত্র জানিয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক ও প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের সঙ্গে জরুরী এক বৈঠকে মিলিত হন শ্রমিক নেতারা। দেশের ২৭টি পাটকলের মধ্যে ১৮টি মিলের নেতারা এই বৈঠকে যোগ দেন। এই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, বস্ত্র ও পাট সচিব এম এ কাদের সরকার, পাট অধিদফতরের মহাপরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ। বৈঠকে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, বৈঠকে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম দেশের পাটকলগুলো নিয়ে সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির কথাও জানান। এতে শ্রমিক নেতারা আশ্বস্ত হয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আজ বুধবার দেশের সকল পাটকল শ্রমিকরা বকেয়া বেতন পাবেন। তবে এ সময় প্রতিমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেন, এতো কিছু দেয়ার পরও কেউ যদি আন্দোলন করে তা হলে দেশের প্রচলিত আইন ও বিজিএমসি আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে বৈঠক শেষে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব সভাস্থল ছাড়ার কিছুক্ষণ পর নিজেদের মধ্যে বাগ্বিত-তায় জড়িয়ে পড়েন শ্রমিক নেতারা। এক পর্যায়ে তা হাতাহাতির রূপ নিতে যায়। পরে মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে তারা সচিবালয় ছাড়েন। মঙ্গলবার বিকালে এই ঘটনার পর আন্দোলনে থাকা পাটকল শ্রমিক সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের সভাপতি মোঃ সোহরাব হোসেন খুলনা অঞ্চলের অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। চলমান আন্দোলনের বাইরে থাকা ১৮টি পাটকলের শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন পাটমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিব। আন্দোলনে থাকা খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলের শ্রমিক নেতাদের এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা ‘নন-সিবিএ’ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ না নিয়ে সম্মেলন কক্ষের বাইরে অবস্থান নেন। বৈঠক শেষে পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়েছি। সবাইকে অবরোধ কর্মসূচী প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। কর্মসূচী প্রত্যাহার না করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। একাংশের সঙ্গে বৈঠকের পর খুলনা অঞ্চলের পাটকল শ্রমিক নেতারা মন্ত্রীর সঙ্গে বসতে চাইলে মির্জা আজম তাদের বুধবার বেলা আড়াইটায় সময় দেন। এরপর সোহরাব হোসেনের নেতৃত্বে অন্য পাটকল নেতারা সাংবাদিকদের বলেন, নন-সিবিএদের নিয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বৈঠক করেছেন, তাই আমরা বৈঠকে যাইনি। সোহরাবের এই কথায় উত্তেজিত হয়ে অন্য অংশের নেতারা তাদের ওপর চড়াও হন। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে মন্ত্রণালয়ের করিডরে দুই পক্ষের নেতাদের হাতাহাতি চলতে থাকে। পরে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে করিডর ছাড়েন পাটকল শ্রমিক নেতারা।
×