ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাত বেসরকারী কলেজ সরকারী হলো

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১২ এপ্রিল ২০১৬

সাত বেসরকারী কলেজ সরকারী হলো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বদলি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর প্রথমবারের মতো সরকারী হলো দেশের সাতটি বেসরকারী কলেজ। সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব কলেজকে সরকারীকরণের পৃথক আদেশ জারি করেছে। আদেশে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব কলেজের শিক্ষকরা অন্যত্র বদলি হতে পারবেন না। এদিকে বেসরকারী কলেজ সরকারী করার শর্ত হিসেবে বদলির বিষয় যুক্ত করার মধ্য দিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যসহ বিশেষজ্ঞদের বহুদিনের দাবি কার্যকর হলো। শর্ত দ্রুত কার্যকর করায় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন শিক্ষকরা। এর আগে গত সপ্তাহে সরকারী বা জাতীয়করণ হওয়া স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারী বদলি বন্ধের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকা অবস্থায় সরকারী বা জাতীয়করণ হবে সেখানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ওই প্রতিষ্ঠানের বাইরে বদলির সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণাকে অভিনন্দন জানিয়ে এটি দ্রুত কার্যকর করার দাবি ছিল বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের। সোমবার বদলি বন্ধের শর্ত দিয়ে সাত কলেজ সরকারী করার ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা কার্যকর করা হলো। সরকারী হওয়া নতুন সাত কলেজ হলো- মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার রাজৈব ডিগ্রী কলেজ, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজ, রাজধানীর পল্লবী থানার বঙ্গবন্ধু কলেজ, খুলনার কয়রা উপজেলার কয়রা মহিলা কলেজ, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার মুকসুদপুর কলেজ, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কাজী মাহবুব উল্লাহ (কেএম) কলেজ ও একই জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার আলফাডাঙ্গা ডিগ্রী কলেজ। এসব কলেজকে সরকারীকরণ করে পৃথক আদেশ জারি করেছে মন্ত্রণালয়। প্রত্যেক আদেশেই বলা হয়েছে, এসব কলেজের শিক্ষকরা অন্যত্র বদলি হতে পারবেন না। এই সাত কলেজের সব শিক্ষক-কর্মচারী এখন সরকারী কর্মচারী হিসেবে জাতীয় বেতন কাঠামোর আওতায় আসবেন। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যয়ও কমবে। প্রতিষ্ঠানগুলোও মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কলেজগুলোকে সরকারী করা হলো বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান। সরকারের সিদ্ধান্ত হলো প্রত্যেক উপজেলায় একটি কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকারী করা। তারই আলোকে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারী করা হচ্ছে। বদলি বন্ধের শর্ত দিয়ে বেসরকারী কলেজ সরকারী করার উদ্যোগের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে অভিন্দন জানিয়ে ঢাকা টিসার্স ট্রেনিং কলেজের উপাধ্যক্ষ সৈয়দ সাদিক জাহিদুল ইসলাম বলেছিলেন, এমন বহু কলেজ আছে যেখানে একেকজন শিক্ষক দু’টি বা তারও বেশি তৃতীয় শ্রেণী পেয়েও টাকা পয়সা দিয়ে তদ্বির করে শিক্ষক হয়েছেন। এখন তৃতীয় শ্রেণী না হলেও আগে হয়েছে এমন। তবে এখনও বহু শিক্ষক শিক্ষাগত যোগ্যতা ভাল না হলেও তদ্বিরের বলে বেসরকারী কলেজের শিক্ষক হয়েছেন। কিন্তু সরকারী হয়ে গেলেই সেখানকার শিক্ষকরা ক্যাডার সার্ভিসের সদস্য হয়ে যান। এরপর তারা দ্রুত শহরের এমনকি রাজধানীতে তাদের পছন্দের কলেজে চলে আসেন। ফলে তার সেই কলেজে শূন্যতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অত্যন্ত সময়োপযোগী। যা শিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। নতুন এ উদ্যোগে দ্রুতই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আমাদের মফস্বল এলাকার শিক্ষায়। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ঢাকা কলেজের শিক্ষক আবদুল কুদ্দুস শিকদার বলছিলেন, একটি এলাকার শিক্ষার উন্নয়নের কথা চিন্তা করে ওই এলাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হয়। এখন মফস্বলের প্রতিষ্ঠানগুলোই জাতীয়করণের আওতায় আসছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হওয়ার পর দেখা যায়, শিক্ষকরা আর মফস্বলে থাকতে চান না। তারা শহরমুখী হন। বদলির জন্য তদ্বির করেন, সফলও হন। ফলে মফস্বলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সঙ্কট দেখা যায়। এতে ওই এলাকার শিক্ষাব্যবস্থার খুব একটা উন্নতি হয় না। আমরা শিক্ষা ক্যাডারে চাকরির জন্য বিসিএসের মতো পরীক্ষার মুখোমুখি হই। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা বলছেন, সরকারী হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত। সেখানে শিক্ষক নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই টাকার বিনিময়ে কম মেধাবী ও অদক্ষরা নিয়োগ পান এসব প্রতিষ্ঠানে। অথচ জাতীয়করণ হওয়ার পর সবাই সমমর্যাদা ও সমান সুবিধা লাভ করেন। তবে সরকারী হওয়া কলেজ শিক্ষকদের প্রথমে নন-ক্যাডারভুক্ত এবং একটি নির্দিষ্ট সময় ও যথাযথ প্রশিক্ষণ শেষে ক্যাডারভুক্ত হওয়ার সুযোগ রাখার দাবি জানিয়েছেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের অনেকেই।
×