ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

৯৯ ভাগ উপজেলা ইউনিয়নে রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৭ এপ্রিল ২০১৬

৯৯ ভাগ উপজেলা ইউনিয়নে রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো ও সেবা প্রদানের মাত্রার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামোর উন্নয়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হ্রাস, ওষুধের সরবরাহ বৃদ্ধি, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম ইত্যাদি উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। দেশের ৯৯ ভাগ উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা। বর্তমানে প্রতি মাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নেন। দেশে অনুর্ধ ১২ মাস বয়সের শিশুদের সকল টিকা প্রাপ্তির হার ৮১ ভাগ। তবে দেশের শতকরা ৬০ ভাগ নাগরিক বিদ্যমান উন্নত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা থেকে বঞ্চিত বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচী। এবার দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করুন : ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখুন’। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ২০১৬ উদ্যাপন উপলক্ষে বুধবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি, স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নূরুল হক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মাহমুদ হাসান, মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এম ইকবাল আর্সলান ও যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এম এ আজিজ প্রমুখ। একটি বৈষম্যহীন স্বাস্থ্য পরিসেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকার নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ এবং সরকারের ভিশন ২০২১ এবং ২০৪১ অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতের সূচকগুলো অর্জনের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা প্রণয়ন করছি। এজন্য চতুর্থ স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা উন্নয়ন খাত কর্মসূচী প্রণয়নের কাজ চলছে, যা ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস থেকে চালু হবে। প্রতিটি নাগরিকের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডায়াবেটিস বর্তমান বিশ্বের সর্বাপেক্ষা গুরুতর ব্যাধিগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে পৃথিবীতে প্রায় ৩৪ কোটি ৭০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছে। ২০১২ সালে ডায়াবেটিসের কারণে ১৫ লাখ মানুষ মারা যায়। ডায়াবেটিসে মৃত্যুর শতকরা ৮০ ভাগ হচ্ছে নি¤œ ও মধ্য আয়ের দেশসমূহে। আশঙ্কা করা হচ্ছে- ২০৩০ সাল নাগাদ মানুষের মৃত্যুর ৭ম কারণ হবে ডায়াবেটিস। উন্নত দেশে সাধারণত অবসরের পরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে এ রোগে আক্রান্তের বয়স ৩৫ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে। বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের মতে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ছিল ৭১ লাখ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ অর্থাৎ ৩৫ বছরের উর্ধের জনগোষ্ঠী ডায়াবেটিস নামক এক মারাত্মক ব্যাধিক শিকার। এ বৃহৎ উপার্জনক্ষম জনগোষ্ঠী জাতীয় আয়ের অংশীদার। ডায়াবেটিসজনিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা এবং প্রতিকূল আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে এ জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ উন্নয়ন কর্মকা-ে অংশগ্রহণ থেকে অনেকাংশে দূরে থাকছে। অপরিণত বয়সে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে এদের অনেকের মৃত্যু হচ্ছে, আবার অনেকে অক্ষমতার কারণে অন্যের বোঝা হয়ে বেঁচে আছে। এ ব্যাপারে যথাযথ জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা জরুরী। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বাল্যকাল থেকেই স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন, নিয়মিত খেলাধুলা, পরিমিত ব্যায়াম, নিয়মিত হাঁটা এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ২০১৬ উদ্যাপন উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ বছর দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচীর মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সেমিনার আয়োজন, স্যুভেনির প্রকাশ, ডায়াবেটিক নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষা, স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদর্শনী, জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ, সড়কদ্বীপ সজ্জিতকরণ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, জারিগান, সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার উদ্যোগে ডায়াবেটিকজনিত স্বাস্থ্য সমস্যার ওপর আলোচনা অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
×