ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মার্চ শেষে নির্মাণ কাজ ৩২ ভাগ সম্পন্ন হবে

আসছে জানুয়ারি থেকেই পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করবে মানুষ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৯ মার্চ ২০১৬

আসছে জানুয়ারি থেকেই পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করবে মানুষ

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার আগেই সুফল ভোগ করবে জনগণ। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। আগামী জানুয়ারি থেকেই শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি ফেরি সার্ভিসের দূরত্ব কমবে এক তৃতীয়াংশেরও বেশি। এতে পারাপারে আধাঘণ্টা সময় বাঁচবে। দেশের প্রধান এই ফেরি সার্ভিসের নানা রকম প্রতিকূলতা হ্রাস পাবে। কাওড়াকান্দি প্রান্তের পদ্মা সেতুর ৮ কিলোমিটার এ্যাপ্রোচ ব্যবহার করে যান চালাচল শুরু হবে জানুয়ারি থেকে। এতে কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট পাঁচ কিলোমিটার কাছে কাঁঠালবাড়িতে সরে আসবে। এই সুসংবাদে উদ্বেলিত এই অঞ্চলের মানুষ। এদিকে বৈচিত্র্যময় পদ্মার নানা রকম প্রতিকূলতা ছাপিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ সব ক’টি প্যাকেজেই দ্রুত এগিয়ে চলছে। মাওয়া প্রান্তের মত জাজিরা প্রান্তেও এখন চলছে বিশাল কর্মযঞ্জ। এখন পদ্মার সোয়া ছয় কিলোমিটার এ্যালাইনমেন্টের সবখানেই কাজ আর কাজ। এছাড়া দু’তীরের এ্যাপ্রোচ এবং নদী শাসনের কাজের গতিও দ্রুত বাড়ছে। তাই মার্চ শেষে পদ্মা সেতুর কাজ গড়ে ৩২ শতাংশে পৌঁছবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। বিআইডব্লিউটিএ’র এজিএম শাহ মোঃ খালেদ নেওয়াজ শুক্রবার জনকণ্ঠকে জানান, শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি ফেরি রুটের দূরত্ব বর্তমানে ১৪ কিলোমিটার। এটি কাঁঠালবাড়ি সরে এলে দূরত্ব কমে হবে ৯ কিলোমিটার। সময় বাঁচবে প্রায় আধাঘণ্টা। তাই এক ঘণ্টারও কম সময়ে বিশাল পদ্মা পারি দেয়া যাবে। এতে ফেরিগুলো দ্রুত আসাযাওয়া করতে পারবে। বাড়বে নাব্য, সরু চ্যানেলের নানা রকমের ঝক্কি ঝামেলা আর পোহাতে হবে না। তাই এই রুটে চলাচলকারীদের বিড়ম্বনা অনেকাংশ হ্রাস পাবে। এ বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিআইডব্লিউটি ঘাট সরিয়ে নিতে সম্মতি প্রকাশ করেছে। তাই কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট ডিসেম্বরেই বিলুপ্ত হবে। ঘাটটি সরে আসবে কাঁঠালবাড়িতে। বর্তমানে এই কাঁঠালবাড়ি ঘাটে শরীয়তপুরের যান পারাপার হয়। এছাড়া এই ঘাট সরিয়ে নিলে পদ্মা সেতুর নদী শাসনের কাজে সুবিধা হবে। এই চ্যানেলে ফেরি পারাপারের কারণে নদী শাসনের কাজেও কিছুটা বিঘিœত হচ্ছিল। এদিকে কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে খুলনা সড়কে যোগাযোগের সুবিধার্থে নবনির্মিত পদ্মা সেতুর ৮ কিলোমিটার এ্যাপ্রোচ রোড খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ সহজ হবে। পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ বুধবার জানিয়েছে, এই নিয়ে সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ’র বৈঠক হয়েছে। সেই অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, বিআইডব্লিউটিএ ঘাটটি সরাতে চাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে সেতু কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করবে। আর এই ফেরি সার্ভিসের নাম হবে- ‘শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ফেরি সার্ভিস’। চলছে এখন মূল সেতুর কাজ। সেতুটিতে পাইল বসানো হচ্ছে। প্রায় ৪শ’ ফুট গভীরে প্রবেশ করানো হয়েছে বিশাল এই পাইল। কিন্তু পাইলের শেষ মাথায় সাধারণত বালু রাখার কথা। কিন্তু ৪শ’ ফুটের পরে প্রায় ১শ’ ফুট জুড়ে রয়েছে কাদার স্থর। তাই এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হচ্ছে বিশেষ টেকনোলজি ব্যবহার করে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উত্তাল পদ্মা নদী নানাভাবে বৈচিত্র্যময়। তাই নতুন নতুন নানা সম্ভাবনা আর সমস্যা মোকাবেলা করেই সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে গুণগত মান সঠিক রেখে। এ ব্যাপারে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকেলে জনকণ্ঠকে জানান, এগুলো নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। সঠিকভাবে মূল সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে এটিই এখন খবর। নদীর তলদেশের বিভিন্ন রকমের স্তর থাকতেই পারে। কোথাও বালু, মোটা বালু, চিকন বালু এভাবেই মাটির স্তর সাজানো। এই নিয়ে সমস্যার কারণ নেই। সেতুটির ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে পাইল স্থাপনের কাজ প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। প্রথমে ৩৯ নম্বর পিলারে পাইল ড্রাইভ করা হবে। ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট প্রকল্প এলাকা এখন চষে বেড়াচ্ছে। মাওয়া ও জাজিরা উভয় প্রান্তে এই প্রতিষ্ঠানকে অফিস দেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের হাই পয়েন্ট রেন্ডেল নামের প্রতিষ্ঠানটির ২৩ বিশেষজ্ঞ কাজ করবেন। ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যের ভাড্রামান জোনসের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের টিম কাজ করছে এখন বাকিরাও শীঘ্রই যোগ দেবে। আজ শনিবার পাক্ষিক সভা হবে মাওয়া প্রান্তের দো-গাছি সার্ভিস এরিয়া সভাকক্ষে। এতে পদ্মা সেতু সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও সংশ্লিষ্টরা যোগ দেবেন। এদিকে করলী চরে সাপ্লিমেন্টারি কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড (চরল্যান্ড) স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যান্ত এই ইয়ার্ডের ২৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মাওয়ার পাশের কুমারভোগের মূল কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে এটির দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। এটির অবস্থান সেতুর ৩৫ নম্বর পিলারের কাছে। এছাড়া পদ্মা সেতুর কাজে আরও গতি আনতে এই বছরের মধ্যে ১৬শ’ কিলো জুলক্ষমতাস¤পন্ন একটি হ্যামার এবং ১ হাজার টন ওজনের আরও একটি ভাসমান ক্রেন যোগ করা হচ্ছে।
×