ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিতাসের তিন হাজার কোটি টাকার হিসাবে গরমিল

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৬ মার্চ ২০১৬

তিতাসের তিন হাজার কোটি টাকার হিসাবে গরমিল

সংসদ রিপোর্টার ॥ ছয় বছরে তিতাসের তিন হাজার কোটি টাকার হিসাবের গরমিল! আর্থিক বিধি অনুসরণ না করা, চুরি, ঘাটতি ও সিস্টেম লস দেখিয়ে তিতাস গ্যাস ছয় বছরে ৩ হাজার ১৩৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকার হিসাবে গরমিল দেখিয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত সরকারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের আর্থিক অনিয়মের এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। কমিটির সভাপতি শওকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও আব্দুর রউফ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে তিতাস গ্যাস তাদের বিভিন্ন কাজে ২০১০-২০১১ অর্থবছর থেকে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর পর্যন্ত ২১২টি অডিট আপত্তির কথা জানায়। অডিট আপত্তির সঙ্গে মোট জড়িত অর্থের পরিমাণ তিন হাজার ১৩৮ কোটি ৩৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। সবচেয়ে বেশি অডিট আপত্তি ২০১২-২০১৩ ও ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের। ওই দুই বছর মোট ৭৪টি অডিট আপত্তির সঙ্গে জড়িত অর্থের পরিমাণ এক হাজার ৩৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। কমিটি দ্রুত এসব অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করার সুপারিশ করেছে। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শওকত আলী সাংবাদিকদের বলেন, এত বিশাল পরিমাণ অডিট আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়। কমিটি দ্রুত অডিট আপত্তিগুলো নিষ্পত্তি করে জানাতে বলেছে। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ১৯৭২-১৯৭৫ থেকে ২০০৯-২০১০ পর্যন্ত ৩৭২টি অডিট আপত্তি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। এর সঙ্গে জড়িত অর্থের পরিমাণ ছয় হাজার ৪৩৮ কোটি ২১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এসব অডিট আপত্তির ক্ষেত্রে আর্থিক বিধি অনুসরণ না করা, সিস্টেম লস, চুরি ও ঘাটতি, মন্ত্রণালয় কর্তৃক গাড়ি ব্যবহার, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ এবং ‘অন্যান্য’ কারণ দেখিয়েছে তিতাস গ্যাস। এই ‘অন্যান্য’ কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে কমিটির সভাপতি শওকত আলী বলেছেন, অন্যান্য কারণ বলে কিছু হতে পারে না। এটা সুনির্দিষ্ট করতে হবে। এসব কারণ সুনির্দিষ্ট করতে তিতাস গ্যাসকে বলা হয়েছে। আসলে ওদের এত অডিট আপত্তি যে, সেগুলোর তালিকাও ঠিকমতো করতে পারেনি। কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের (সিএজি) একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু একজন সহকারী পরিচালক আসায় কমিটি অসন্তোষ প্রকাশ করে। পরবর্তী বৈঠক থেকে মহাপরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে একজনকে বৈঠকে অংশ নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া বৈঠকে জানানো হয়েছে, অবৈধ গ্যাস বিতরণ লাইন উচ্ছেদের অংশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৯৯টি অভিযানের মাধ্যমে প্রায় ৩১৬ কিলোমিটার পাইপ লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কমিটি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের মাধ্যমে অবৈধ গ্রাহক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সিস্টেম লস কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছে। এছাড়া অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার সঙ্গে যে সমস্ত অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।
×