ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভের লোপাট অর্থ উদ্ধার ও জড়িতদের শাস্তি দাবি বিএনপির

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৫ মার্চ ২০১৬

রিজার্ভের লোপাট অর্থ উদ্ধার ও জড়িতদের শাস্তি দাবি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশের লোপাটের টাকা উদ্ধার ও এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রতিরোধে ব্যর্থতার অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর, অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি করেছে দলটি। দলের মুখপাত্র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকে লুটপাটের পরও সরকার কাউকে সাজা না দেয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে রাঘববোয়ালরা জড়িত। ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার অপপ্রয়াস চলছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। বলেন, অর্থ চুরির ঘটনাটি ঘটার এক মাস পর প্রকাশ হওয়ায় এতে সুস্পষ্ট বোঝা যায়, ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার অপপ্রয়াস চলছিল। ওই দিন সিসিটিভি ফুটেজের তথ্য-উপাত্ত কোথায় গেল। সর্বক্ষেত্রে অপশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলার অভাবের কারণেই বর্তমান আর্থিক খাতে বিরামহীন হরিলুট চলছে। বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ লোপাটের ঘটনা নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অজ্ঞতার সমালোচনা করেন তিনি। তিনি অবিলম্বে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধার ও এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করে বলেন, শুধুমাত্র অর্থমন্ত্রী ও গবর্নরের পদত্যাগেই পরিত্রাণ মিলবে না। এদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের মাধ্যমেই দেশ, মানুষ ও গণতন্ত্রের মুক্তি নিশ্চিত হবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দুর্বল থাকার এবং এ ঘটনার সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। এই অর্থমন্ত্রী হল-মার্ক কেলেঙ্কারির চার হাজার কোটি টাকা বড় অঙ্কের অর্থ নয় বলেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরি যাওয়ার বিষয়ে কিছুই জানি না। যে সরকার চোরকে নিরাপদ রাখতে বেশি ব্যস্ত থাকে তারা তো কিছুই জানবে না বলে উল্লেখ করেন। রিজভী বলেন, গণতন্ত্রহীন দেশের একটি ভোটারবিহীন স্বৈরাচারী সরকারের সর্বক্ষেত্রে অপশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলার অভাব রয়েছে। যার পরিণতি হচ্ছে বর্তমানের আর্থিক সেক্টরে বিরামহীন হরিলুট। এতে ক্ষমতাসীন মহলের বড় বড় রুই-কাতলা যে জড়িত তা সুস্পষ্ট। জাতি জানতে চায়- এই দুর্নীতির শেষ কোথায়। যেহেতু বর্তমান সরকার পুরনো বাকশালের প্রেতাত্মা তাই বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ির দিকে আবারও এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে অঘোষিত আর্থিক অবরোধের কারণে দেশের রফতানি খাত ধ্বংস হতে বসেছে। দেশে বিনিয়োগ প্রায় শূন্যের কোটায়। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে পুরো জাতি এখন নিরাপত্তাহীন। বিদেশীরাও এখন এ দেশে নিরাপদ নয়। বিনিয়োগ থেকে শুরু করে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের ওপরও রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। দেশে এখন আবারও সেই দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। জাতি এ থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়। এ সময় তিনি আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার ২নং চরবাদাম ইউনিয়ন, ভোলার মনপুরা উপজেলার ৩নং সাকুচিয়া ইউনিয়ন, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়ন, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মালিহাট ইউনিয়ন, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার নাটেশ্বরী ইউনিয়নে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলা, ভাংচুর ও প্রার্থীদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ প্রচারে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেন। বলেন, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের মনোনীত প্রার্থীদের প্রচার করতে দিচ্ছে না। এ বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে জানালেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না প্রার্থীরা। তিনি বলেন, ৬ মার্চ সকাল ১০টার দিকে ১০-১২ জনের একদল সাদা পোশাকধারী ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে খিলক্ষেতের বাসা থেকে বনানী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসানকে মাইক্রোবাসে করে ধরে নিয়ে যান। এখনও তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে খিলক্ষেত থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এই ন্যক্কারজনক ও অমানবিক ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আমরা অবিলম্বে তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপির কাউন্সিলের নামে কয়েকটি মোবাইল নম্বর ও ফেসবুকের মাধ্যমে তার নামে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মানুষের কাছে চাঁদা তোলা হচ্ছে। এরা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। এদের ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ কাউন্সিলের জন্য খুব ছোট জায়গা দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিএনপির মতো একটা বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের পক্ষে এত ছোট পরিসরে কাউন্সিল করা খুবই দুরূহ ব্যাপার। তাই আমরা কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের স্বাচ্ছন্দ্যভাবে বসার জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পাশের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশ বরাদ্দ দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবারও অনুরোধ করছি। এজন্য গণপূর্ত বিভাগের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, আমরা মনে করছি এটি তারা দেবেন। সংবাদ সম্মেলনে ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালাম, আবদুস সালাম আজাদ, এমএ মালেক, আবদুল লতিফ জনি, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, অর্থমন্ত্রীর কিছু করার ক্ষমতা নেই। এ কারণেই ৮শ’ কোটি টাকা চুরির ঘটনা তাঁকে জানানো হয়নি। কী ধরনের রাষ্ট্রে বাস করছি যেখানে দুই মাস আগে ৮শ’ কোটি টাকা লুট হলো, অথচ অর্থমন্ত্রী জানেন না। অর্থমন্ত্রীকে খবরও দেয়া হয়নি। এর কারণ যারা চুরি করেছে তারা জানে অর্থমন্ত্রীর কোন ক্ষমতা নেই। তিনি কিছু করতে পারেন না। সোমবার ইয়ুথ ফোরাম নামের একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
×