ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পাঁয়তারাকে বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কার্যক্রমে সংশয়

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ৪ মার্চ ২০১৬

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কার্যক্রমে সংশয়

এম শাহজাহান ॥ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই বাধার মুখে পড়ল প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ খ্যাত পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যক্রম। আরও এক বছর ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের যাত্রা শুরু হবে কি-না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের আশঙ্কা, বিশেষ গোষ্ঠীর সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। তবে চলতি বছরের ১৬ জুনের মধ্যে ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরু না হলে আইন সংশোধনের প্রয়োজন হবে। ইতোমধ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন সংসদে পাস করা হয়েছে। আইনটির ভেটিং সম্পন্ন করেছে আইন মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, গ্রামের সাধারণ মানুষকে ক্ষুদ্রঋণের কিস্তির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে যে আট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, সেখানেও জায়গা করে নিতে সক্ষম হয় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। কিন্তু ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরু না হতেই একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর অপচেষ্টা চলছে। যদি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়, তাহলে ব্যাংকটির কার্যক্রম সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শুরু হতে পারবে কি-না তা নিয়ে কিছুটা সংশয় তৈরি হয়েছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। তাদের লক্ষ্য স্পষ্ট, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে সুবিধা লুফে নেয়া। তাই এ প্রকল্পটির মেয়াদ না বাড়িয়ে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা উচিত। তিনি বলেন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন পাস করা হয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী আগামী ১৬ জুনের মধ্যে ব্যাংকটির কার্যক্রম উদ্বোধন করতে হবে। যদি ওই সময়ের মধ্যে উদ্বোধন না করা হয় তাহলে আইন সংশোধনের প্রয়োজন হবে। জানা গেছে, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন সমবায় অধিদফতরের একটি প্রকল্প। পুরো প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকেই এতদিন তদারকি করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটি যখন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক নাম ধারণ করল তখন থেকেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আইন তৈরি, চাকরি প্রবিধানমালা করা, চেয়ারম্যান নিয়োগ ও বোর্ড গঠনসহ যাবতীয় কার্যাবলী সম্পাদন করছে। আগামী ১৬ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হলে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওপর ন্যস্ত হবে। এছাড়া নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও জবাবদিহি করতে হবে। এই বাস্তবতায় প্রকল্পটির সুবিধাভোগী গোষ্ঠী একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) প্রশান্ত কুমার দাস জনকণ্ঠকে বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যক্রম চালাতে কোন অসুবিধা হবে না। প্রকল্পটি তখন ব্যাংকের প্রকল্প হয়ে যাবে। কেন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ॥ গ্রামীণ ব্যাংকসহ এনজিওগুলো ক্ষুদ্রঋণের বিপরীতে উচ্চমাত্রার সুদ আদায় করছে। এতে গরিব হয়ে পড়ছে আরও গরিব। বাড়ছে অর্থনৈতিক শোষণ। কিন্তু পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক থেকেই এবার জামানতবিহীন ঋণ দেয়া হবে। গরিব ও সমাজের প্রান্তিক মানুষদের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের মূল ধারায় আনতে ৪৫টি খাতে ঋণ দেবে এই ব্যাংক। সরকার মনে করছে, এই ব্যাংক পুরোপুরিভাবে কার্যক্রম শুরু করলে ক্ষুদ্রঋণের কিস্তির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে দেশের খেটে খাওয়া গরিব মানুষ। কমে আসবে ক্ষুদ্রঋণের সুদহার। একই সঙ্গে ক্ষুদ্রঋণের নামে বিভিন্ন এনজিও এবং ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। পাশাপাশি ঋণগ্রহীতারা সঞ্চয় করবেন এই ব্যাংকে। ফলে চাঙ্গা হবে গ্রামীণ অর্থনীতি। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। ব্যাংকটি দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন এক হাজার কোটি টাকা রাখার বিধান রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে পরিশোধিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। পরিশোধিত মূলধনের ৫১ শতাংশ দেবে সরকার। ৪৯ শতাংশ দেবে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অধীনে গঠিত সমিতি। জানা গেছে, ইতোমধ্যে সাবেক সচিব ড. মিহির কান্তি মজুমদারকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। পরিচালনা পর্ষদও গঠন করা হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় প্রতিষ্ঠা ও চাকরি বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে।
×