ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমছে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ক্রমেই কমছে। প্রাথমিকে হার কমলেও এই সংখ্যা এখন আছে উদ্বেগজনক পর্যায়ে। ২০০৮ সালে মাধ্যমিকস্তরে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার যেখানে ছিল ৬১ শতাংশেরও বেশি, সেখানে এই মুহূর্তে ঝরে পড়ার হার কমে দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ২৯ শতাংশে। উচ্চ শিক্ষাস্তরে ২০০৮ সালে ঝরে পড়ার হার ছিল যেখানে প্রায় ৪৭ শতাংশ, সেখানে এখন এ হার ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ। মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রীদের শিক্ষা গ্রহণে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন শীর্ষ দেশগুলোর কাতারে। এছাড়া বিশ্বের মোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ যেখানে ৪৭ শতাংশ সেখানে বাংলদেশে মাধ্যমিকস্তরের প্রায় ৫১ শতাংশই ছাত্রী। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) শিক্ষা পরিসংখ্যান রিপোর্টে দেশের শিক্ষার এই চিত্রই উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার ব্যানবেইস ভবনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের উপস্থিতিতে ‘শিক্ষা পরিসংখ্যান রিপোর্ট-২০১৫’ নামের এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় এক কর্মশালার মাধ্যমে। এদিকে শিক্ষার উন্নয়নের নানা তথ্য রিপোর্টে উঠে আসলেও প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নিয়ে যে হিসাব সেখানে দেয়া হয়েছে তা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দেয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা থেকে কোন কোন ক্ষেত্রে কমসংখ্যক উল্লেখ করা হয়েছে। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঠিক থাকলেও তারতম্য দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের সংখ্যায়। তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ভালভাবে যাছাই বাছাই করে সঠিক পরিসংখ্যান নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, তাড়াহুড়া করার কোন প্রয়োজন নেই। সঠিক ও নির্ভুল তথ্য বের করে আসতে হবে। এমন কোন পরিসংখ্যান যেন না হয় যাতে ভুল থাকে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেইন, ব্যানবেইস পরিচালক মোহাম্মদ ফসিউল্লাহ, প্রধান পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুল আলম প্রমুখ। রিপোর্টের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বাড়ছে, কমছে ঝরে পড়ার হার। তবে ঝরে পড়ার এই হার এখানও উদ্বেগজনক। শিক্ষার সার্বিক চিত্রকে আশাব্যঞ্জক অভিহিত করে শামসুল আলম বলেন, গত কয়েক বছরের দিকে তাকালে দেখা যাবে আমরা ক্রমেই ইতিবাচক অবস্থানে যাচ্ছি। রিপোর্টে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি তথ্যবহুল চিত্র বেরিয়ে এসেছে। বলা হয়েছে, ছাত্রীদের শিক্ষা গ্রহণে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন শীর্ষ দেশগুলোর কাতারে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রীদের অংশগ্রহণে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ওপরে আছে কেবল ভুটান। এখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী হচ্ছে ৫১ শতাংশ। যেখানে বাংলাদেশ ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া ইরান ৪৭ দশমিক ৫, ভারত ৪৭ দশমিক ৬, নেপাল ৫০ দশমিক ৬, আফগানিস্তানে ছাত্রীর অংশগ্রহণ ৩৪ দশমিক ৬, শ্রীলঙ্কা ৫০ দশমিক ৯ এবং পাকিস্তানে শিক্ষার্থীদের ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ নারী। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা স্তরে শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমে আসার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়, ২০০৮ সালে এ স্তরের শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার হার ছিল ৬১ দশমিক ৩৮ শতাংশ, ২০০৯ সালে ৫৫ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং ২০১০ সালে ৫৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছিল। ২০১১ সালে ঝরে পড়ার হার ছিল ৫৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০১২ সালে ৪৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ২০১৩ সালে কমে হয় ৪৩ দশমিক ১৮, ২০১৪ সালে ৪১ দশমিক ৫৯ এবং ২০১৫ সালে ৪০ দশমিক ২৯ শতাংশ। অন্যদিকে উচ্চ মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার কমলেও তা এখানও হতাশাজনক। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে ২০৮ সালে ঝরে পড়ার হার ছিল ৪৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ২০০৯ সালে ৪২ দশমিক ১১, ২০১০ সালে ৩৭ দশমিক ৩৬। ২০১১ সালে ৩৭ দশমিক ১৩, ২০১২ সালে ২১ দশমিক ৮০, ২০১৩ সালে ২১ দশমিক ৬০, ২০১৪ সালে ২১ দশমিক ৩৭ এবং ২০১৫ সালে একটু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ। রিপোর্টে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সরকারী ও সরকার অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টের বাইরে আছে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা সকল কওমী মাদ্রাসা। বলা হয়েছে সরকারী ও বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে এক লাখ ২২ হাজার ১৭৬টি। শিক্ষার্থী এক কোটি ৯০ লাখ ৬৭ হাজার ৭৬১ জন। সরকারী ও বেসরকারী মাধ্যমিক স্কুল আছে ২০ হাজার ২৯৭টি, যেখানে শিক্ষার্থী ৯৭ লাখ ৪৩ হাজার ৭২ জন। চার হাজার ১১৩ কলেজে শিক্ষার্থী ৩৬ লাখ ৭৮ হাজার ৮৬৯ জন। ৯ হাজার ৩১৯ মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ২৪ লাখ ৯ হাজার ৩৩৭ জন। সরকারী ৩৭ ও ৮৫ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আট লাখ ৭২ হাজার ৮৯১ জন। তবে এ রিপোর্টে তৈরির পর আরও একটি পাবলিক ও ছয়টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের কোন তথ্য এখানে যুক্ত করা হয়নি।
×