ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘সাতভাগ ভাড়া বাড়ল এবার রেলের সেবার মান বাড়ান’

প্রকাশিত: ০৮:০৫, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

‘সাতভাগ ভাড়া বাড়ল এবার রেলের সেবার  মান বাড়ান’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবিলম্বে রেলওয়ের সেবার মান বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি (এনসিপিএসআরআর)। দুর্নীতি বন্ধ ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রেলওয়ের লোকসান কমিয়ে আনতে রেল মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। রবিবার এক যুক্ত বিবৃতিতে জাতীয় কমিটির উপদেষ্টা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ মনজুরুল আহসান খান এবং সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে এই আহ্বান জানান। এদিকে সেবার মান না বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ট্রেন যাত্রীরাও। তাদের ভাষায় সাতভাগ ভাড়া বৃদ্ধি হলেও একভাগ মান বাড়েনি। এমন বাস্তবতায় দ্রুত ট্রেনের সেবার মান বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন সবাই। রবিবার কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে সেবার মান নিয়ে নানা ধরনের ক্ষোভের কথা জানা গেছে। ভাড়া বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে কর্তৃপক্ষকে সেবার মান অবশ্যই বাড়াতে হবে বলে দাবি করেছে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিবেশবান্ধব সমন্বিত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার আন্দোলন চালিয়ে আসা বেসরকারী সংগঠন এনসিপিএসআরআর। একই সঙ্গে দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান সংগঠন নেতারা। তিন বছরের মাথায় বাড়ল ট্রেনের যাত্রী ও কন্টেনারের পরিবহন ভাড়া। ২০ ফেব্রুয়ারি শনিবার থেকে নতুন এ ভাড়া কার্যকর হয়। প্রথম দিন থেকেই যাত্রীরাও ট্রেনের সেবার মান বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছেন। সব মিলিয়ে সবার বক্তব্য হলো, ভাড়া বাড়ালেও সেবার মান বাড়েনি একটুও। রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার গড়ে ভাড়া বাড়ছে সাড়ে ৭ শতাংশ। যাত্রীদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন স্টেশনে নতুন ভাড়ার তালিকা টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে। দীর্ঘ ২০ বছর পর ২০১২ সালে বাংলাদেশে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো হয়। তখন কিলোমিটার প্রতি গড় ভাড়া ২৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৩৬ পয়সা। রেলের ভাড়া বাড়াতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠায় মন্ত্রণালয়। সেই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর নতুন ভাড়া কার্যকরের ঘোষণা আসে। এর পরই পরই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, যাত্রী কল্যাণ সমিতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি ওঠে। সিপিবি ও বাসদ ট্রেনে যাত্রী পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে রেলভবন ঘেরাও করতে গেলে বাধা দেয় পুলিশ। দাবি আদায়ে কেন্দ্রীয়ভাবে রেলভবনের সামনে বিক্ষোভের পাশাপাশি ১৬ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি জেলায় জেলায় রেল স্টেশনেও বিক্ষোভের কর্মসূচী পালন করে সিপিবি-বাসদ। নৌ-সড়ক রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, সরকার ভাড়া বৃদ্ধি করলেও গত তিন বছরে সেবার মান মোটেও বাড়েনি। রেলওয়ের কয়েকটি বড় সমস্যার মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার ট্রেনগুলোর টিকেট সঙ্কট, আসন-স্বল্পতা, স্ট্যান্ডিং টিকেটের মাধ্যমে আসন সংখ্যার দ্বিগুণ যাত্রীর কাছে টিকেট বিক্রি করা। এছাড়াও অত্যন্ত বিরক্তিকর ও নিম্নমানের আসন, অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার এবং ঠাসাঠাসি করে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বহন। সরকার এসব সমস্যার সমাধান না করে মাত্র তিন বছরের মাথায় দ্বিতীয় দফায় রেলের যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি করেছে বলে অভিযোগ করা হয় বিবৃতিতে। নতুন হারে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে শোভন শ্রেণীর ভাড়া ২৬৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৮৫ টাকা, শোভন চেয়ার ৩২০ থেকে ৩৪৫, এসি চেয়ার ৬১০ থেকে ৬৫৬, এসি সিট ৭৩১ থেকে ৭৮৮ ও এসি বার্থ ১০৯৩ থেকে ১১৮৯ টাকা হয়েছে। ঢাকা-খুলনা রুটে শোভন শ্রেণীর ভাড়া ৩৯০ টাকা থেকে বেড়ে ৪২০ টাকা, শোভন চেয়ার ৪৬৫ থেকে ৫০৫, এসি চেয়ার ৮৯১ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৬১ টাকা, এসি সিট ১০৭০ থেকে ১ হাজার ১৫৬ ও এসি। ঢাকা-সিলেট রুটে শোভন শ্রেণীর ভাড়া হবে ২৬৫ টাকা, শোভন চেয়ার ৩২০, এসি চেয়ার ৬১০, এসি সিট ৭৩৬ ও এসি বার্থ ১০৯৯ টাকা। ঢাকা-রাজশাহী রুটে এসব শ্রেণীর ভাড়া হবে ৮৫, ৩৪০, ৬৫৬, ৭৮২ ও ১০৬৮ টাকা। অন্যান্য রুটেও প্রায় একই হারে বেড়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আইসিডি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কনটেইনার পরিবহন ভাড়া ছিল নয় থেকে ২১ হাজার টাকা। তা বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ৭০০ থেকে ২২ হাজার ৬০০ টাকা।
×